পিছন থেকে টুটি চেপে ধরেছিল, হিঁচড়ে নিয়ে গেল জঙ্গলে! পরিণতি শিউরে ওঠার মতো

Sundorbon: সুন্দরবনের খাঁড়ি সংলগ্ন হরিখালির ঝিলা জঙ্গলের একটি খালে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন দ্বারিক।

পিছন থেকে টুটি চেপে ধরেছিল, হিঁচড়ে নিয়ে গেল জঙ্গলে! পরিণতি শিউরে ওঠার মতো
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 05, 2021 | 9:04 AM

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ডিঙি নৌকায় গিয়েছিলেন মাছ ধরতে। পিছন থেকেই অতর্কিতে ঝাঁপ। একেবারে ঘাড়ে থাবা। টেনে হিঁচড়ে সকলের চেখের সামনে দিয়েই তাঁকে নিয়ে যায় জঙ্গলে! আবারও সুন্দরবনে (Sundorbon) আবারও বাঘের হানার শিকার এক মত্স্যজীবী। মৃতের নাম দ্বারিক মণ্ডল (৬০)।

সুন্দরবনের খাঁড়ি সংলগ্ন হরিখালির ঝিলা জঙ্গলের একটি খালে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন দ্বারিক। গোসাবা ব্লকের লাহিড়িপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বানিখালি-সাধুপুর গ্রামের দ্বারিকের দীর্ঘদিনের পেশা এটা। শনিবার সকালে দ্বারিক লক্ষ্মীরানি মৃধা, সুমিত্রা সরকার, সন্তোষ মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে সুন্দরবন জঙ্গলে যায় মাছ ধরতে।

প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, মাঝেমধ্যেই তাঁরা কাঁকড়া ধরতে যেতেন। এদিনও গিয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, নৌকা ঝিলের ধার দিয়ে যাচ্ছিল। গভীর খাঁড়িতে নৌকা ঢুকে যায়। ঝিলা জঙ্গলের কাছের একটি খালে তাঁরা আপন খেয়ালে কাঁকড়া ধরছিলেন। ঠিক সময়ই সুন্দরবনের হেঁতালের জঙ্গল থেকে একটি বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই মৎস্যজীবীর ওপরl

নাগালের মধ্যে থাকা দ্বারিক মন্ডলের ঘাড়ে কামড় দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই চলে যায় জঙ্গলে। সঙ্গী সাথীরা বাঘের মুখ থেকে দ্বারিককে ছাড়ানোর জন্য হাতে লাঠি নিয়ে পিছু ধাওয়া করলেও কোনও লাভ হয়নি।অগত্যা বাধ্য হয়েই মত্যস্যজীবীদের দলটি গ্রামে ফেরেl

পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন দ্বারিক। তাঁর বেঁচে থাকার আশা খুবই ক্ষীণ। পরিবারের শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ধীবরদের দলটির আদৌ কোনও সরকারি অনুমতি ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পl সেই সঙ্গে ওই নিখোঁজ ধীবরের খোঁজে তল্লাশি শুরু করা হয়েছে দফতরের পক্ষ থেকেl

এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, “আমরা সবাই এক সঙ্গেই ছিলাম। জঙ্গলের অনেকটাই ভিতরের দিকে চলে গিয়েছিলাম। আচমকাই একটা গর্জন শুনতে পেলাম। নিমেশের মধ্যেই দেখি পিছন থেকে দ্বারিকের ঘাড়ে থাবা বসিয়ে দিয়েছে বাঘ। টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা লাঠি নিয়ে তেড়ে উঠি। কিন্তু ততক্ষণে বাঘটা ওকে টেনে নিয়ে জঙ্গলে চলে যায়। আমরা অনেকটাই গিয়েছিলাম। কোনও হদিশ করতে পারলাম না। ” নিখোঁজ মত্যস্যজীবীর খোঁজে আপাতত বনকর্মীরা তল্লাশি শুরু করেছে।

প্রশ্ন উঠছে, এই মৎস্যজীবীরা আদৌ জঙ্গলের বিধি মেনেছিলেন কিনা? বাফার জোন থেকে কোর জোনে ঢুকেছিলেন কিনা? তদন্ত করে দেখছে বসিরহাট বন দফতর। মৎস্যজীবীর মর্মান্তিক পরিণতিতে গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

লকডাউনে এমনিতেই সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার মানুষের অবস্থা খারাপ। তারপর গোদের ওপর বিষফোঁড়াল হয়েছিল ইয়াস! উপকূলবর্তী এলাকার মানুষদের এখন অন্ন সংস্থানই দায় হয়ে উঠেছে। তাই জীবন বাজি রেখেই তাঁরা পাড়ি দেন মাছ-কাঁকড়া ধরতে! প্রশাসনও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

প্রশাসনের তরফে বলা হয়, মত্স্যজীবীদের বারবার সতর্ক করা হয়। তবে অনেকক্ষেত্রেই তাঁরা বিধি মানেন না। হতে পারে সেটা পেটের টানেই। কিন্তু এভাবে তাঁদের জীবন বিপন্ন হয়, সেটা ওঁদের বুঝতে হবে। প্রশাসনের তরফ থেকেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই মত্স্যজীবীরাও বিধি মেনেছিলেন কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আরও পড়ুন: ‘ঘোরের মধ্যে শুনলাম কারা যেন বলল টেনে বের করে আনতে হবে’, মধ্য রাতে কলকাতায় ভয়াবহ ঘটনা