WB Panchayat Polls 2023: কথা বলতে বলতেই পিছিয়ে যান তৃণমূল নেতা, তারপরই হঠাৎ বাঁশপেটা, হাঁসুয়া উঁচিয়ে তেড়ে এল … পড়ুন, ভাঙড়ে TV9-এর সাংবাদিকের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা
WB Panchayat Polls 2023: খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হলেন TV9 বাংলার সাংবাদিক সায়ন্ত ভট্টাচার্য। বাঁশ দিয়ে তাঁর পায়ে বেধড়ক মারা হয়েছে। পায়ে গুরুতর চোট লেগেছে তাঁর। ঠিকভাবে হাঁটতেও পারছেন না তিনি। চিত্র সাংবাদিক সমর দাসকে হাঁসুয়া দিয়ে কোপানোরও চেষ্টা চলে। মনোনয়ন সংঘর্ষে আইএসএফ বনাম তৃণমূলের মাঝে কীভাবে আক্রান্ত হতে হল সাংবাদিককে?
ভাঙড়: ভয়ের নাম ভাঙড়! মনোনয়ন ঘিরে অশান্তি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের চেনা ছবি হলেও ভাঙড় সব সময়েই ‘হাই প্রোফাইল’। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার এই প্রাচীন জনপদ মঙ্গলবারের পর বুধেও দেখল বেমালুম বোমাবাজি। ঝরল রক্ত। এবং আক্রান্ত হতে হল সাংবাদিককেও। খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হলেন TV9 বাংলার সাংবাদিক সায়ন্ত ভট্টাচার্য। বাঁশ দিয়ে তাঁর পায়ে বেধড়ক মারা হয়েছে। পায়ে গুরুতর চোট লেগেছে তাঁর। ঠিকভাবে হাঁটতেই পারছেন না তিনি। চিত্র সাংবাদিক সমর দাসকে হাঁসুয়া দিয়ে কোপানোরও চেষ্টা চলে। মনোনয়ন সংঘর্ষে আইএসএফ বনাম তৃণমূলের মাঝে কীভাবে আক্রান্ত হতে হল সাংবাদিককে? ঠিক কী ঘটেছিল? জানাচ্ছেন আক্রান্ত সাংবাদিক সায়ন্ত ভট্টাচার্য।
“কারোর হাতে বাঁশ, কারোর লাঠি, লোহার রড, আবার কারও হাতে হাঁসুয়াও। সকালে থেকেই দেখছিলাম বাসন্তী হাইওয়েতে পুলিশের সামনে কার্যত এরিয়া ডমিনেশন করছিল ওরাই। সকাল থেকেই এই ছবি সরাসরি সম্প্রচার করেছে TV9 বাংলা। বুধবার ভাঙড় ১ নম্বর ব্লকে আইএসএফের মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন ছিল। সে জন্যই এত প্রতিরোধ, কার্যত স্বীকারও করে নিচ্ছিল ওরাও। সকাল থেকে এই পরিস্থিতির একাধিক ছবি সংগ্রহ করে TV9 বাংলার ক্যামেরা। আর তারপরই আচমকা লাঠি-অস্ত্র ধারী দুষ্কৃতীদের টার্গেট হয়ে যাই আমরা। এক নম্বর বিডিও অফিস থেকে যখন শাহাজাহান মোল্লা (এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা) নলমুড়ির দিকে যাচ্ছিলেন, তখন আমরা তাঁর প্রতিক্রিয়া নিতে চেষ্টা করি। আমাদের কথাও বলছিলেন তিনি। কিন্তু কথা বলতে বলতেই অনেকটা পিছিয়ে যান শাহাজাহান মোল্লা। আমরা কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলাম। নলমুড়ি পর্যন্ত প্রায় পৌঁছেই গিয়েছিলাম। ঠিক তখনই আমাদের অনেককে ক্যামেরা বন্ধ করে দিতে বলা হয়। আমরা ক্যামেরা বন্ধও করে দিই। প্রত্যেক সাংবাদিক ক্যামেরা বন্ধ করে দিই। তারপরই বাঁশ দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয় আমাদের।”
সায়ন্ত জানাচ্ছেন, ওখানে প্রত্যেকে দাবি করছিলেন, তাঁরা তৃণমূল কর্মী সমর্থক। প্রায় ৬০০ জন লোক ছিল সেখানে। তাঁদের বক্তব্য, রাস্তার ওপাশে নওসাদ সিদ্দিকির লোকজন রয়েছে, তাঁদেরকে আটকানোর জন্যই ওরা দাঁড়িয়ে আছেন। সায়ন্তর কথায়, “ওদের একটাই টার্গেট, আমাদের ছবি করতে দেবে না। পুরো নলমুড়িতে বাসন্তী এক্সপ্রেসওয়ের ওপর ওরা আটকে রেখেছে। আমাদের চিত্র সাংবাদিক সমর দাসকে হাঁসুয়া দিয়ে মারতে গিয়েছিল। ও কোনওক্রমে ক্যামেরা বাঁচিয়ে দৌড়ে পালায়।” বাসন্তী হাইওয়ে যে ওই লাঠিধারীদের দখলেই ছিল, তা ধরা পড়েছে ক্যামেরাতেও। এ প্রসঙ্গে অবশ্য তৃণমূল নেতা শাহজাহান মোল্লাই বলেন, “আমাদের কর্মীরাই আক্রান্ত হচ্ছেন, আত্মরক্ষার অধিকার সবার আছে। কারা সাংবাদিককে মেরেছে জানি না, করলে ভুল করেছে। পুলিশ কী করছে, পুলিশকে জিজ্ঞাসা করুন। পুলিশে ১০০ শতাংশ ভরসা আছে।”
এদিনে আক্রান্ত হন অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও। সায়ন্তর ক্যামেরাও কেড়ে নেওয়া হয়। অনেক অনুরোধ করার পর সায়ন্তকে মোবাইলটি ফেরত দেওয়া হয়। সায়ন্ত জানিয়েছেন, গোটা ঘটনার সময়ে ছিলেন একজন মাত্র পুলিশ, আর তাঁর হাতে ছিল লাঠি। সায়ন্ত বললেন, “ওরা ভীষণ ফেরোসাস। শাহজাহান মোল্লাও পারেননি কাউকে আটকাতে। কারোর কথা ওরা শুনছে না।” অর্থাৎ শাহজাহান মোল্লাও যে তাঁদের দলের অনুগামী বলে দাবি করা অস্ত্রধারীদের সামলাতে ব্যর্থ, তা খানিকটা স্পষ্ট হয়েছে তাঁর কথাতেই।
ঘটনার পর TV9 বাংলার অফিস থেকে কয়েকজনকে ওই এলাকায় পাঠানো হয়। আক্রান্ত সাংবাদিককে উদ্ধার করে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল তখনও দেখা যায়নি কোনও পুলিশ কর্মীকেই। কিছুক্ষণ পর সেখানে এক জন খাকি উর্দিধারী ও জলপাইরঙের পোশাক পরা ব্যক্তিকে দেখা যায়।