দিনের পর দিন বিধবা মহিলাকে কু-প্রস্তাব ভাসুরের! চুল কেটে, শাঁখা-সিঁদুর পরিয়ে নির্যাতন গৃহবধূকে

ক্যানিং-এর এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভাসুর পরিতোষের দাবি, তিনি চুল কেটে দেননি, মারধরও করেননি।

দিনের পর দিন বিধবা মহিলাকে কু-প্রস্তাব ভাসুরের! চুল কেটে, শাঁখা-সিঁদুর পরিয়ে নির্যাতন গৃহবধূকে
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 31, 2021 | 3:00 PM

ক্যানিং: ফের একবার মধ্যযুগীয় বর্বরতার নিদর্শন। চুল কেটে গ্রাম ছাড়া করার হুমকি দেওয়া হল এক বিধবা মহিলাকে। জোর করে পরিয়ে দেওয়া হল শাঁখা-সিঁদুর। দিনের পর দিন ভাসুর সহ অন্যান্যদের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এমনটা করা হয়েছে বলে অভিযোগ নির্যাতিতা মহিলার। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ক্যানিং থানা এলাকার নিকারিঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাবু গ্রামের এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ওই মহিলা জানিয়েছেন তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। তাঁকে জোর করে শাঁখা সিঁদুর পরতে বাধ্য করা হয়। প্রতিবেশী এক যুবকের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেয় শ্বশুরবাড়িরই বেশ কয়েকজন। ওই গৃহবধূ ও প্রতিবেশী যুবককে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ গৃহবধূর ভাসুর-সহ নিকট আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে। এরপর ওই গৃহবধু ও যুবককে গ্রাম ছাড়া করতে তিনটি সাদা কাগজে মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। গৃহবধূ ইতিমধ্যে ক্যানিং থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে ক্যানিং থানার পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে, জানা গিয়েছে ডাবু গ্রামের বাসিন্দা ওই গৃহবধূর স্বামী যতন সর্দারের মৃত্যু হয় প্রায় তিন বছর আগে। দুই সন্তানকে নিয়ে কোনোমতে দিন কাটান তাঁর স্ত্রী। গৃহবধূর অভিযোগ, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই তাঁর ভাসুর পরিতোষ সর্দার ও প্রতিবেশী কয়েকজন যুবক প্রতিনিয়ত কুপ্রস্তাব দিতে থাকে তাঁকে। তাতে রাজি না হওয়ায় গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল প্রতিনিয়ত।ওই গৃহবধূর এক দেওর ক্ষুদিরাম সর্দার অসহায় ওই পরিবারের পাশে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়ায়। তাঁর সঙ্গেই জোর করে বিয়ে দিয়ে সিঁদুর পরিয়ে দেওয়া হয়েছে এই গৃহবধূকে।

জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত গত ২৮ জুলাই। ক্ষুদিরামের ফোনে ফোন করেন গৃ্হবধূর মা। ফোন নিয়ে তখন মহিলার বাড়িতে যান ক্ষুদিরাম। সেই সময় ভাসুর পরিতোষ সর্দার প্রতিবেশী ১০-১২ জন কে ডেকে নিয়ে মহিলার বাড়িতে চড়াও হয়।এমন কি নির্যাতিতার অভিযোগ, তাঁর ভাসুর চুলের মুঠি ধরে তাঁর তলপেটে একাধিক লাথি মারে। সেই সমস্ত ঘটনার ভিডিয়ো করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। প্রাণ সংশয় হতে পারে আশঙ্কা করে নির্যাতিতা সেখান থেকে কোন রকমে পালিয়ে রাতে ক্যানিং ষ্টেশনে রাত কাটান।বৃহষ্পতিবার সন্ধেয় ক্যানিং থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন তিনি।

অন্যদিকে, ভাসুর পরিরোষ সর্দারের দাব, তিনি কিছুই করেননি। চুল কেটেছেন গ্রামের মেয়েরাই। তাঁর কোন দোষ নেই। উল্টে নিজের ভাই অর্থাৎ গৃহবধূর স্বামীর মৃত্যুর জন্যও গৃহবধূকেই দায়ী করেন ভাসুর পরিতোষ।

এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। সাম্প্রতিককালে অসম বা উত্তরবঙ্গে ঘটে যাওয়া এমন সব ঘটনায় মহিলা কমিশনের তরফে স্বতঃপ্রোদিত মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।তবে তাঁর দাবি, বেশিরভাগ সময়েই মহিলারা পিছু হটে যান, পালিয়ে যান, ফলে তদন্ত চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, সমস্যা সমাধান করতে গেলে মহিলাদের সামনে এসে অভিযোগ জানাতে হবে। আরও পড়ুন: রাস্তার ধারে পড়েছিল সারি সারি বস্তা, নড়াচড়া দেখেই মুখ খোলেন স্থানীয়রা, ভেতরে দেখা গেল…