Madhyamik Exam 2022: পথ আটকাতে পারেনি থ্যালাসেমিয়া, অভাবের সংসারে হাসিমুখে মাধ্যমিকে বড় সাফল্য শ্রাবণীর
Madhyamik Exam 2022: জীবনতলা থানা এলাকার বাসিন্দা কমল দেবনাথ ও তাপসী দেবনাথের একমাত্র মেয়ে শ্রাবণী। মা গৃহবধূ আর বাবা চাষবাসের কাজ করেন। সংসারে রয়েছে অভাব। কিন্তু, হার না মানা লড়াই শেষে বড় সাফল্য পেল শ্রাবণী।
মিনাখা: শরীরে বাসা মেতেছে থ্যালাসেমিয়ার মতো মারণ রোগ। তাতে কী! দুরারোগ্য ব্যাধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় মাধ্যমিকে বড় সাফল্য পেল শ্রাবণী। উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Pargana) সীমান্ত মিনাখা লাগোয়া দেউলী ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের মল্লিকাটিতে বাড়ি শ্রাবণীর। যে মেয়েটিকে মাসে চারবার রক্ত দিতে হয় তার পাশ করা তো দূরের কথা পরীক্ষায় বাসাটাই ছিল মস্ত একটা চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই মাধ্যমিকে সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছে শ্রাবণী। তার এই লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন এলাকার শিক্ষানুরাগী থেকে প্রশাসনের কর্তারা। পরিবারের আক্ষেপ পাশে যদি কেউ দাঁড়াতেন, সামান্য আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে মেয়েটা হয়তো আরও ভাল ফল করতে পারত।
জীবনতলা থানা এলাকার বাসিন্দা কমল দেবনাথ ও তাপসী দেবনাথের একমাত্র মেয়ে শ্রাবণী। মা গৃহবধূ আর বাবা চাষবাসের কাজ করেন। নিজের জমি নেই, পরের জমিতে দিনমজুরি করে যতটুকু আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার। নুন আনতে পান্তা পুরোনোর জোগাড় যে সংসারে, সেখানেই ষোল বছর আগে যখন তাপসীর কোল আলো করে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হল তখন খুশিতে ফেটে পড়ে দেবনাথ পরিবার। যদিও সেই খুশি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। সারাক্ষণই সর্দি কাশি, গা গরম, চোখ কেমন সাদা সাদা হয়ে থাকত ছোট্ট শ্রাবণীর। চিকিৎসকরা জানায় দুরারোগ্য থ্যালাসেমিয়াতে আক্রান্ত একরত্তি।
সেই শুরু। ছ’মাস বয়স থেকে আজও প্রতিনিয়ত রক্ত পাল্টাতে হয় শ্রাবনীর। জীবনতলা থেকেই কখনও মেডিকেল কলেজ আবার কখনও ট্রপিক্যাল হাসপাতলে ছুটে চলেছেন কমল দেবনাথ। অসুস্থ মেয়েকে নিয়মিত রক্ত জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। তার মাঝে সাইকেলে করে পাশের ঘিখালি হাইস্কুলে দিয়ে আসতেন মেয়েকে। অত্যন্ত দুর্বল শরীর নিয়ে খুব বেশি ছোটাছুটি করতে পারে না শ্রাবণী। তবে স্যারেরা যেটুকু বলেন সেটুকু তার মাথায় থাকে। বছর তিনেক আগে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় তাদের যোগাযোগ হয় আর্যভ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে। অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তীর এই সংস্থা ছোট্ট শ্রাবণীর লেখাপড়ার ভার নেয়। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে মানবিক পেনশন হিসেবে মাসিক হাজার টাকাও পায় শ্রাবণী। তা দিয়েই পড়াশোনা ও অন্যান্য খরচ চালানো হয়।
শ্রাবনীর বাবা কমল দেবনাথ জানান, কিছুদিন আগে রাজ্য সরকারের আবাস যোজনার মাধ্যমে তারা একটি পাকা ঘর পেয়েছেন। ঘরে টিভি থাকলেও রিচার্জ করার মতো পয়সা নেই তাঁদের কাছে। একমাত্র মেয়ে ভালোবাসে টিভি দেখতে। অভাবের সংসারে মেয়ের সেই ইচ্ছা পূরণ করতে পারেন না বাবা। কমল বলেন, “সংসার চালাতে কখনও দিনমজুরি করি আবার কখনও সবজি বিক্রি করি। তাতে কোনওরকমে দিনা চললেও চিকিৎসার খরচ সব সময় জোগাড় করতে পারি না। যদি কোনও সহৃদয় ব্যক্তি কিংবা জনপ্রতিনিধি পাশে দাঁড়ান তাহলে খুব উপকৃত হবে আমার পরিবার”। হার না মানা লড়াইয়ের মাঝেই মাধ্যমিক পাশ করেও মনে বিষাদের ছোঁয়া শ্রাবণীর। এ প্রসঙ্গে সে বলে, “বাড়ির কাছাকাছি কোনও উচ্চমাধ্যমিক স্কুল নেই। সাত কিলোমিটার দূরে বোদরা হাইস্কুলে আমাকে ভর্তি হতে হবে। অত দূরে কিভাবে যাব বুঝতে পারছি না”।
ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক সওকত মোল্লা বলেন, “শ্রাবণী আমার এলাকার গর্ব। ওর উচ্চশিক্ষার জন্য যতটা সহযোগিতা করার দরকার তা দলের পক্ষ থেকে করা হবে। এই অভাবী মেধাবী ছাত্রীর পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন ক্যানিং ২ ব্লকের বিডিও প্রণব কুমার মন্ডলও”। আপাতত এতেই নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে দেবনাথ পরিবার।