Abhishek Banerjee: গ্রামবাসীর অভিযোগ শুনেই কড়া পদক্ষেপ অভিষেকের, আপ্লুত মারিশদাবাসী
কাঁথির মারিশদা-৫ অঞ্চলের অসহায় বাসিন্দারা আবাস যোজনা থেকে আমফানে ক্ষয়ক্ষতির কোনও সরকারি সাহায্য কেন পাননি, জল সমস্যা সহ একাধিক সমস্যা নিয়ে কেন এতদিন সমাধান হয়নি, তা নিয়ে কাঁথির সভা থেকে প্রশ্ন ছোড়েন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল নেত্রীকে অনুসরণ করেই গ্রামে ঘুরে জনসংযোগ শুরু করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কাঁথিতে জনসভায় যাওয়ার আগে মারিশদা-৫নম্বর অঞ্চল এলাকায় গাড়ি থেকে নেমে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বললেন তিনি। আর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে কাছে পেয়ে অভাব-অভিযোগ উগরে দিলেন গ্রামবাসী। ‘নতুন তৃণমূল দল’ আনার বার্তাবহ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কী আদৌ তাঁদের অভাব-অভিযোগ শুনে পদক্ষেপ করবেন? এটা নিয়ে সংশয় ছিল গ্রামবাসীদের মনে। তবে তাঁদের সংশয় কাটিয়ে কাঁথির সভা থেকেই কড়া পদক্ষেপ করলেন ঘাস-ফুল সেনাপতি।
কাঁথির মারিশদা-৫ অঞ্চলের অসহায় বাসিন্দারা আবাস যোজনা থেকে আমফানে ক্ষয়ক্ষতির কোনও সরকারি সাহায্য কেন পাননি, জল সমস্যা সহ একাধিক সমস্যা নিয়ে কেন এতদিন সমাধান হয়নি, তা নিয়ে কাঁথির সভা থেকে প্রশ্ন ছোড়েন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই গ্রামের প্রধান, উপ-প্রধান সহ অঞ্চল তৃণমূল সভাপতিকে বরখাস্ত করার ঘোষণা করেন তিনি।
এদিন কাঁথির সভায় যাওয়ার পথেই মারিশদা-৫ অঞ্চলে সারপ্রাইজ ভিজিট করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোজা গ্রামের ভিতরে গিয়ে মহিলাদের থেকে তাঁদের অভাব-অভিযোগ, সমস্যা জানতে চান। এপ্রসঙ্গে এলাকার বাসিন্দা দিপালী বানিয়া, শিউলি বানিয়া বলেন, “অভিষেকদা এসে আমাদের কী কী সমস্যা জানতে চেয়েছিলেন। আমরা জলের সমস্যার কথা বলেছি। বলেছি, একটা নলকূপের উপর ৫০-৬০ টি পরিবারকে নির্ভর করতে হয়। জলের জন্য প্রতিদিন মারামারি লেগে থাকে। বাধ্য হয়ে পাশের নয়নজুলির জল ব্যবহার করতে হয়।” আবার ঘর ভেঙে গেলেও আবাস যোজনার বাড়ি মেলেনি বলেও জানান তাঁরা। দিপালী বানিয়ার কথায়, “আমফানে ভেঙে যাওয়া ঘর নিজেরাই মেরামত করেছি নিজেদের টাকায়। ২০১৪ সালে একটি ত্রিপল পেয়েছিলাম। পঞ্চায়েতে আবাস যোজনার বাড়ির কথা বলতে গেলে পঞ্চায়েত সদস্যরা বলেন, জমির পাট্টা নেই। জমি সরকার কেড়ে নেবে। উনি সব শুনে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এর আগে অনেকে আশ্বাস দিয়েছেন কেউ কথা রেখেনি। এবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কী করেন দেখি।” আবার পঞ্চায়েতে ত্রিপল চাইতে গেলে পঞ্চায়েত সদস্যদের খারাপ ব্যবহার করার কথা জানিয়েছেন মীণা বানিয়া।
গ্রামের মহিলাদের অভাব-অভিযোগ শোনার পরই কাঁথির সভা থেকে গ্রামের প্রধান, উপ-প্রধান ও অঞ্চল সভাপতিকে বরখাস্ত করার কথা ঘোষণা করেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড। সকলকে কড়া বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, “মারিশদা ৫ নম্বর অঞ্চলের প্রধান ঝুনু রানি মন্ডল, উপ-প্রধান- রমাকৃষ্ণ মন্ডল, অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি গৌতম মিশ্র। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এঁদের ইস্তফা আমি আমার টেবিলে চাই একটা পঞ্চায়েতে কাজ না হলে প্রধান যেমন দায়ী থাকে, তেমনই প্রধান কাজ না করলে অঞ্চল সভাপতিও দায়ী। তিনজনেরই ইস্তফা চাইছি। না হলে আইনত পদক্ষেপ করব।” এই তিনজনকে বরখাস্ত করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে পঞ্চায়েত সহ প্রশাসনের সমস্ত স্তরে এবং দলের মধ্যেও বিশেষ বার্তা দিলেন, তা বলা বাহুল্য। কাঁথির সভা থেকে তৃণমূল সভাপতির স্পষ্ট বার্তা, “আমি এবার নিজে নেমে পড়েছি।”
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই দৃঢ় পদক্ষেপে অভিভূত মারিশদা-৫ অঞ্চলের বাসিন্দারা। শিউলি বানিয়ার কথায়, “পঞ্চায়েতের লোকজনকে ইস্তফা দিতে বলায় আমরা খুশি হয়েছি। একইভাবে মীণা বানিয়া বলেন, “পান-বিড়ির ছোট দোকানের উপর সংসার চলে। ঘর ভেঙে গিয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধান, উপ-প্রধানকে বলেও কোনও লাভ হয়নি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দুজনকে ইস্তফা দিতে বলায় খুশি হয়েছি। আশা করি, এবার কাজ হবে।”