Child Death: খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু একই পরিবার দুই শিশুর, হাসপাতালে ভর্তি বাকি সদস্যরা
Child Death: শিশুদুটির ঠাকুমা আভা চন্দ্র বলেন, 'ঘরে প্রচুর ইঁদুর থাকায় মারার জন্য বিষ ছড়ানো হয়েছিল। কোন কোন জায়গায় ছড়ানো হয়েছিল আমি ঠিক জানি না।
বর্ধমান: খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলে মৃত্যু হল একই পরিবারে দুই শিশুর। ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমানের রথতলায়। জানা গিয়েছে পরিবারের বাকি সদস্যরাও আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন বর্ধমান মেডিকেল কলেজে। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ওই এলাকায়। জানা গিয়েছে মৃত ওই দুই শিশুর নাম শিশুর নাম শুভঙ্কর ঘোষ (১২) এবং রাহুল ঘোষ (৯)। এরা দুজনেই সম্পর্কে ভাই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে যে, বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে বর্ধমান মেডিকেল কলেজে ভর্তি রয়েছেন মৃত ওই দুই শিশুর বাবা রবি ঘোষ, দিদি শর্মিলা ঘোষ, ঠাকুমা সন্ধ্যা ঘোষ এবং পিসি শর্মিষ্ঠা ঘোষ। রবিবাবু পেশায় বর্ধমানের স্বাস্থ্য অধিকর্তা (সিএমওএইচ) অফিসে গাড়ির চালক। এ ব্যাপারে হাসপাতালে রবিবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মঙ্গলবার তাঁদের বাড়িতে রাতে মাংস রান্না হয়েছিল। ওই মাংস খাওয়ার পরই তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বুধবার তাঁরা সকলেই স্থানীয় ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করান। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বাড়াবাড়ি শুরু হওয়ায় এদিন তাঁদের বর্ধমান মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। এদিনই মৃত্যু হয় ওই দুই শিশুর।
মৃত শুভঙ্কর ও রাহুলের দিদিমা আভা চন্দ্র বলেন, মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে ইঁদুর মারার জন্য বিষ দেওয়া হয়। তাঁর অনুমান ওই বিষ কোনোভাবে খাবারে মিশে গিয়েই এতবড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। রবিবাবুর বক্তব্য, ‘পরশুদিন রাতে জামাই মাংস নিয়ে আসায় তা রান্না করে খাওয়া হয়। বুধবার সকাল থেকেই সকলের পেট গোলাতে শুরু করে। স্থানীয় ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধ এনে খাওয়ায় অনেকটাই ভাল ছিলাম সেদিন। আমি ডিউটিতে যাই। বিকেলে আমার মাও বাড়ির দুজনকে প্রাথমিক ডাক্তার দেখিয়ে আনে। কিন্তু মাঝরাত থেকেই সকলের বমি আরম্ভ হয়ে যায়। আমি নিজেও গাড়ি চালাতে পারছিলাম না, আমার এক দাদা স্থানীয় বন্ধুকে ডেকে সকলকে হাসপাতালে নিয়ে আসি ভোর সাড়ে পাঁচটার সময়। ঘন্টা দুয়েক পরেই আমার দুই সন্তান মারা যায়। মনে হচ্ছে ফুড পয়েজন হয়েছে, নয়ত বাড়ির ইঁদুর মারার বিষ কোনোভাবে খাবারে চলে এসেছে।’
অন্যদিকে শিশুদুটির ঠাকুমা আভা চন্দ্র বলেন, ‘ঘরে প্রচুর ইঁদুর থাকায় মারার জন্য বিষ ছড়ানো হয়েছিল। কোন কোন জায়গায় ছড়ানো হয়েছিল আমি ঠিক জানি না। তবে কোনওভাবে ওই বিষ খাবারে চলে আসতে পারে। আমি পুরোটা এখনও জানি না।’ সৌরভ চট্টোপাধ্যায় নামে এক প্রতিবেশী বলেন, ‘পরশু রাতে বাড়ির সকলেই খাওয়া দাওয়া করেছিল। তারপর থেকেই পুরো পরিবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। গতকাল বাড়াবাড়ি হওয়ায় আমাদের খবর দিলে ওদের নিয়ে ভোরবেলায় বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিছুক্ষণ পরেই বাচ্চাদুটি মারা যায়।’
অন্যদিকে বর্ধমান হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট এবং ভাইস প্রিন্সিপাল (MSVP) ডাক্তার তপন ঘোষ বলেন, ‘আজ ভোর চারটে সাড়ে চারটের মধ্যে একটি পরিবারের ৬ জন হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট, পেটে যন্ত্রণা এবং বমির অভিযোগ নিয়ে ভর্তি হয়, তার মধ্যে দুটি বাচ্চা ছিল। ছোট বাচ্চাটিকে পেডিয়াট্রিক বিভাগে ভর্তি করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে হাসপাতালের ডাক্তাররা বিষক্রিয়ায় সন্দেহ করেছিলেন। ভর্তি হওয়ার সময়ই বাচ্চাদুটির অবস্থা গুরুতর ছিল। বাচ্চাদুটি প্রাথমিক চিকিৎসায় সাড়া দেয়নি এবং তারা দুজনেই মারা যায়। খুব খারাপ অবস্থায় নিয়ে আসার কারণে ওদের বেশিক্ষণ চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া যায়নি। যেহেতু ডাক্তাররা বিষক্রিয়ার সন্দেহ করছেন তাই পুলিশকে খবর দেওয়া হয় এবং মৃতদেহদুটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পরিবারের বাকি চারজনের চিকিৎসা চলছে, তাদের অবস্থা এখন স্থিতিশীল।’