WB Panchayat Polls 2023: ভাঙড়ে বোমাবাজি, ‘এরিয়া ডমিনেশন’ তৃণমূলের, হাঁসুয়া দিয়ে কোপের চেষ্টা, বাঁশপেটা TV9-এর সাংবাদিককে
WB Panchayat Polls 2023: সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়ে, বাঁশ, লাঠি, লোহার রড নিয়ে রীতিমতো 'এরিয়া ডোমিনেশন' চালায়। পুলিশকে কার্যত নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা যায়। একটা সময়ের সংবাদমাধ্যমকে ক্যামেরায় ছবি করতে বাধা দেওয়া হয়। সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের ঘিরে রেখে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ভাঙড়: মঙ্গলবারের পর বুধবার। নতুন করে উত্তপ্ত ভাঙড়। এদিন মূলত টার্গেট করা হল সংবাদমাধ্যমকেই। খবর করতে গিয়ে আক্রান্ত হলেন TV9 বাংলার সাংবাদিক, চিত্র সাংবাদিককে। বাঁশ-লাঠি দিয়ে মারধর, হাঁসুয়া দিয়ে কোপানোরও চেষ্টা চলে। বুধবার ভাঙড় দেখাল গণতন্ত্রের বিপন্নতার আরও এক ছবি।
ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১০টা। বুধবার ভাঙড় এক নম্বর ব্লক সওকত মোল্লার এলাকায় আইএসএফের মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনে সকাল থেকেই উত্তেজনা। চলে লাঠালাঠি, ঝরে রক্ত, হয় বোমাবাজি। দিনের শুরুতেই এক চিত্র সাংবাদিকের মাথা ফেটে যায়। দেখা যায়, বাসন্তী বিডিও অফিসের সামনে হাতে বাঁশ, লাঠি নিয়ে জমা হয়েছেন একদল যুবক। তাঁরা নিজেদের তৃণমূল কর্মী বলেই পরিচয় দেন। তাঁদের অভিযোগ, নওসাদ সিদ্দিকির নেতৃত্বে আইএসএফ কর্মীরা বাসন্তী হাইওয়ের ওপর বোমাবাজি করেছে, তাই তাঁরা এই এলাকায় জমা হয়েছেন। কিন্তু মনোনয়ন কেন্দ্রের ১০০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ১৪৪ ধারা যে জারি থাকে, তার কী? তার কোনও উত্তর নেই।
সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়তে থাকে, বাঁশ, লাঠি, লোহার রড নিয়ে রীতিমতো ‘এরিয়া ডমিনেশন’ চালাচ্ছে মুখে কাপড় বাঁধা একদল যুবক। পুলিশকে কার্যত নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা যায়। ছবি সংগ্রহ করছিলেন TV9 বাংলার চিত্র সাংবাদিক সমর দাস। একটা সময়ের সংবাদমাধ্যমকে ক্যামেরায় ছবি করতে বাধা দেওয়া হয়। সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের ঘিরে রেখে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। ক্যামেরা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হতে থাকে। চলতে থাকে অকথ্য গালিগালাজ। আক্রান্ত হন আমাদের সাংবাদিক সায়ন্ত। তাঁর পায়ে বাঁশ দিয়ে মারা হয়। গুরুতর চোট লাগে। তিনি খুড়িয়ে কোনও ক্রমে হাঁটতে থাকেন।
এসবের মধ্যেই চিত্র সাংবাদিক ছবি সংগ্রহ করেছিলেন। আচমকাই তাঁকে ঘিরে ধরে মুখে কাপড় বাঁধা এক দল যুবক। প্রত্যেকের কাছেই লাঠি, বাঁশ, হাঁসুয়া। TV9 বাংলার চিত্র সাংবাদিক সমরকে হাঁসুয়া দিয়ে কোপ মারার চেষ্টা করেন এই কালো টি শার্ট পরিহিত ব্যক্তি। কিন্তু এলাকায় তখনও ছিলেন না কোনও পুলিশ কর্মী। ক্যামেরায় যতটুকু ছবি ধরা পড়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, দলে দলে লাঠি, অস্ত্র হাতে দুষ্কৃতীরা। তাদের কারোর মাথায় হেলমেট, হাতে হাঁসুয়া, লাঠি।
এমনকি খবর সম্প্রচার করতে করতেই আমাদেরই সাংবাদিক অন্য সংবাদমাধ্যমের এক সহকর্মীকে সাবধান করেন, ওদিকে যাওয়া যাবে না, ওখানে তলোয়ার নিয়ে ঘুরছে। অনলাইন থাকাকালীনই সাংবাদিকের সেই সতর্কতা সম্প্রচারিত হয়েছে TV9 বাংলায়, তা শুনেছে গোটা বাংলা।
আমাদের আক্রান্ত সাংবাদিক সায়ন্ত জানিয়েছেন, যখন তাঁদের লাঠি দিয়ে মারতে মারতে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন সেখানে ছিলেন কেবল মাত্র একজন পুলিশ কর্মী। ক্যামেরার প্যান অ্যাঙ্গেলে যতটা ছবি ধরা পড়েছে, কোথাও একজনও পুলিশকর্মীকে দেখা যায়নি। পুলিশ কোথায়? কোথায় নিরাপত্তা? যেখানে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হচ্ছে সংবাদমাধ্যমকে, সেখানে বিরোধীদের নিরাপত্তা কোথায়?
এলাকায় দেখা গিয়েছে স্থানীয় দাপুটে তৃণমূল নেতা শাহাজাহান মোল্লাকে। তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কার্যত দ্রুত পায়ে হেঁটে, পরে দৌড়ে কার্যত পালিয়ে যান। তিনি বলেন, “আমাদের কর্মীরাই আক্রান্ত হচ্ছেন, আত্মরক্ষার অধিকার সবার আছে। কারা সাংবাদিককে মেরেছে জানি না, করলে ভুল করেছে। পুলিশ কী করছে, পুলিশকে জিজ্ঞাসা করুন। পুলিশে ১০০ শতাংশ ভরসা আছে।” পুলিশের ওপরেই যখন ভরসা, তারপরেও কীভাবে হামলা? কীভাবে অস্ত্র-লাঠি নিয়ে জমায়েত? কেন সাংবাদিকদের ওপর হামলা? উত্তর দিতে না পেরে কার্যত পালিয়ে যান দাপুটে তৃণমূল নেতা।