‘খেলা হবে’, ‘টুম্পা সোনা’ থেকে ‘পিসি যাও,’ বঙ্গ ভোটে তৃণমূল-বাম-বিজেপির গান-যুদ্ধ

ভোট বঙ্গে গান যুদ্ধে তৃণমূল- বিজেপি-সিপিএম, এগিয়ে কে? কী বলছেন বিশিষ্টজনেরা

'খেলা হবে', 'টুম্পা সোনা' থেকে 'পিসি যাও,' বঙ্গ ভোটে তৃণমূল-বাম-বিজেপির গান-যুদ্ধ
অলংকরণ: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Feb 21, 2021 | 6:39 PM

পশ্চিমবঙ্গ: ভোট প্রচারে গান বাঁধা নতুন কিছু নয়। তবে বঙ্গ ভোটের অঙ্গে নিত্যনতুন অনুষঙ্গ যোগ হচ্ছে। আর তাতে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে গান (Song) ও প্যারোডি (Parody)। ভোটমুখী বাংলায় তৃণমূলের (TMC) ‘খেলা হবে’ চ্যালেঞ্জ থেকে জনতাকে ব্রিগেড মুখী করতে সিপিএমের (CPIM) ‘টুম্পা সোনা’ প্যারোডি হয়ে বিজেপির (BJP) তৃণমূল বিরোধী ‘পিসি যাও’, ভোটমুখী বাংলা এখন পুরোমাত্রায় মিউজিক্যাল। এই গানের ডাকে সাড়া দিয়ে ভোটবাক্সে কেমন প্রতিফলন হবে সেটা সময়ই বলবে। তবে তিন রাজনৈতিক দলের সুর যুদ্ধে এগিয়ে কে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে আর একটি জিনিস গুরুত্বপূর্ণ। বাংলার ভোটে এবার বারবার আলোচনায় উঠে এসেছে বাঙালি সংস্কৃতি, বাঙালি ভাবাবেগ ও বাঙালি অস্মিতার কথা। সেই লক্ষ্যকে কারা কেমন ছুঁয়েছে?

‘খেলা হবে’। তৃণমূলের তরুণ মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্যের এই গান এতটাই ভাইরাল যে বাম যুব সংগঠনের মিছিলেও এই শব্দবন্ধ উচ্চারিত হতে শোনা গিয়েছে। এমনকী তৃণমূলের এই স্লোগান এবং গানকে অপসংস্কৃতি বলেও ছন্দ মিলিয়ে অধুনা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘খেলা হবে, পদ্মফুলের মেলা হবে, তৃণমূলকে ফেলা হবে’। এখন আসা যাক তৃণমূলের খেলা হবে গানের লিরিকের কথায়। গানের প্রথমে বিজেপিকে বহিরাগত, বর্গি বলে দাগিয়ে রাজ্যে মমতার উন্নয়নের কথা সংক্ষেপে তুলে ধরেছে এই গান। দেবাংশু নিজে দাবি করেছেন এই গান বানানোর শব্দ খুঁজে পেয়েছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক লেখা থেকে। বাকি অনুপ্রেরণায় নেত্রী মমতা ব্যানার্জির এক সভার বক্তব্য। যদিও বিরোধীরা এই গানে হুমকির সুর খুঁজে পেয়েছেন। তাঁদের কথায়, একুশের ভোট যে হিংসায় পরিপূর্ণ হবে ‘খেলা হবে’ শব্দবন্ধের মধ্যে লুকিয়ে আছে সেই হুমকির সুর।

রবিবার দুপুর। গড়িয়াহাটগামী মিনিবাসে ঘামতে ঘামতে উঠে সিট দখল করলেন এক প্রৌঢ়। আর সিটে বসেই মুঠো ফোনে ফুল ভলিউমে শুরু করলেন টুম্পা সোনা প্যারোডি। প্রৌঢ়ের সঙ্গে পিছনের আসনে বসা দু’চারজন অল্প বয়সীকে দেখা গেল গানের তালে মাথা দোলাতে। একে অন্যের দিকে চোখ পড়তেই মুখে হাসি খেল গেল তাঁদের।

আরও পড়ুন: সিপিএমের ‘টুম্পা সোনা’, বিজেপির ‘বেলা চাও’! ভোটের বঙ্গ টোটাল মিউজিক্যাল

এদিকে টুম্পা সোনার মতো চটুল অথচ জনপ্রিয় গান দিয়ে বামেদের ব্রিগেড প্রচারে ইতিমধ্যেই আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকের দাবি, বাম মননের সঙ্গে টুম্পা সোনার গান ঠিক খাপ খায় না। তাছাড়া সিপিএমের মতো কড়া অনুশাসন মেনে চলা দলে এই গান নিয়ে প্রবীণ নেতৃত্ব কী বলছে, তা নিয়ে অনেকেই কৌতূহলী ছিলেন। যদিও সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র খোদ নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে এই গানের ভিডিয়ো শেয়ার করে বুঝিয়ে দিয়েছেন প্যারোডিতে তাঁদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

বামেদের ব্রিগেড প্রচারে এই গানের কথা নিয়েও জোর আলোচনা চলছে নানা মহলে। সোশ্যাল মিডিয়া ভাগ হয়ে গিয়েছে আড়াআড়ি ভাবে। কেউ বলছেন গত কয়েক বছরে মানুষের রুচি যে একবারে নিম্নগামী। এই প্যারোডি ‘হিট’ হওয়া সেটাই মনে করায়। অন্যপক্ষের অবশ্য মত, সরকার বিরোধিতা থেকে দুর্নীতি ইস্যু, সহজ ভাষায় এই গান অন্তত সত্য বলার সাহস রাখে। তাই প্যারোডি গানে টুম্পা সোনা হোক বা অন্যকিছু, তা আমজনতাকে কতটা নাড়া দিচ্ছে সেটাই আসল কথা। এদিক দিয়ে দেখতে গেলে অবশ্য টুম্পা সোনা তার লক্ষ্য পূরণ করে ফেলেছে।

আরও পড়ুন‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’

তৃণমূলের ‘খেলা হবে’ছড়িয়ে পড়েছে লোকের মুখে মুখে। পিছিয়ে নেই সিপিএমও। তারাও ‘টুম্পা সোনা’র চেনা সুরে ব্রিগেডের প্রচারে। আর প্রচারের জন্য গোটা দেশে বিখ্যাত বিজেপিও বা পিছিয়ে থাকে কী করে। তারা বেছে নিয়েছে ‘বেলা চাও’-এর মতো বিখ্যাত গণসংগীত। ইতালিয় এই লোকসংগীত মূলত বিশ্বের বামপন্থীরা গণসংগীতের ধাঁচে গাইলেও ছুঁতমার্গ নেই বিজেপির। সেই গানের সুরেই তৈরি হয়েছে বিজেপির ‘পিসি যাও’। গানের কথায় উঠে এসেছে রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ। সঙ্গে ধ্বনিত হয়েছে ‘পিসি যাও’ স্লোগান। তবে একাংশের মতে, খেলা হবে বা টুম্পা সোনার থেকে শব্দচয়ন থেকে ভিডিয়োয় গ্রাফিক্সের কারুকাজ। সবদিক থেকে এই প্যারোডি বাকি দুই দলের গানের থেকে এগিয়ে। অন্তত রুচি ও সংস্কৃতির দিক থেকে তো বটেই। বিজেপির এক নেতার কথায়, গেরুয়া শিবিরকে যখন বহিরাগত বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে রাজ্যের শাসক দল। বাঙালির সংস্কৃতি ও ভাষার দিকে নজর রেখে আমরা প্যারোডিতেও বাঙালিয়ানার ছোঁয়া রেখেছি।

বঙ্গ ভোটে এই গানের তরজা লড়়াই নিয়ে বিখ্যাত গায়ক প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের টিপ্পনি, বাজার যা খায়, তাই খাওয়ানোর চল চলছে। তিনি যোগ করেন, ভোটের সময় এমন অনেক গান বের হয় যেগুলো হাঁটুর নীচে চলে যায়। তবে এগুলোকে উপেক্ষা করাই উচিত। এখন দেখার, তৃণমূল, সিপিএম নাকি বিজেপি, কার গানের কথা ভোটারের মনে বেশি দাগ কাটে।