চাক্কা জ্যামের সমর্থনে বাংলার জেলায় জেলায় পথ অবরোধ

আন্দোলনকারী কৃষক সংগঠনগুলির তরফে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র জাতীয় এবং রাজ্য সড়কগুলিতে শান্তিপূর্ণভাবে এই আন্দোলন চলবে।

চাক্কা জ্যামের সমর্থনে বাংলার জেলায় জেলায় পথ অবরোধ
জেলায় জেলায় চাক্কা জ্যাম, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Feb 06, 2021 | 6:13 PM

পশ্চিমবঙ্গ : কৃষক আন্দোলনের (Farmers’ Protest) ৭৩ তম দিনে দেশজুড়ে চাক্কা জ্যামের ডাক দিয়েছেন প্রতিবাদী কৃষকরা। সেই আন্দোলনের সমর্থনে গোটা বাংলায় পথ অবরোধ কর্মসূচিতে নামল বাম সংগঠনগুলি। শনিবার সকালে, উত্তর থেকে দক্ষিণ- প্রায় সমগ্র বাংলা জুড়েই বিক্ষোভ ও পথ অবরোধের শামিল হয় বাম-কংগ্রেস।

জলপাইগুড়ি

শনিবার বেলা ১২ টা নাগাদ পাহাড়পুর মোড়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলির সদস্যরা। যৌথ মঞ্চে দাবি তোলা হয়, তিনটি কেন্দ্রীয় কৃষি আইনই বাতিল করতে হবে। না হলে, বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবেন তাঁরা। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন বামপন্থী কৃষক নেতা ও প্রাক্তন সাংসদ জিতেন দাস-সহ আজম আলি, আব্বাস ও অন্যান্য নেতারা। এদিন, পাহাড়পুরে জাতীয় সড়ক অবরোধের ফলে তৈরি হয় ব্যাপক যানজট। আটকে পড়ে দূরপাল্লার গাড়ি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে আসে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার পুলিশ। প্রায় ঘণ্টাখানেক অবরোধ চলার পর অবশেষে বেলা ১টা নাগাদ শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ উঠে যায়।

ধূপগুড়ি 

জলপাইগুড়ির পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গে ধূপগুড়িতেও চাক্কা জ্যামের সমর্থনে পথে নামেন এসইউসিআই-এর কর্মীরা। সারা ভারত কৃষক ক্ষেত মজদুর সংগঠনের পক্ষ থেকে শনিবার বেলা দেড়টা নাগাদ ধূপগুড়ির চৌপতিতে পথ অবরোধে শামিল হন একাধিক কর্মী সমর্থকরা। টায়ার জ্বালিয়ে, পোস্টার পুড়িয়ে প্রতিবাদ করেন কর্মীরা। ভারত কৃষক মজদুর সংগঠনের জেলা সভাপতি সুরেশ চন্দ্র রায় জানিয়েছেন, কেন্দ্রের কালা কানুনের বিরুদ্ধে শুধু নয়, কেন্দ্রীয় বাজেটের দাপটে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে তাঁরা এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। চৌপতি মোড়় অবরোধের ফলে আসাম-ভুটান-বাংলাদেশ থেকে আসা গাড়িগুলি আটকে পড়ে। প্রায় ঘণ্টাদুয়েক আটকে থাকে এশিয়ান হাইওয়ে ৪৮ ও ৩১। ব্যাপক যানজট নিয়ন্ত্রণে পথে নামে ধূপগুড়ি থানার পুলিশ। উপস্থিত ছিলেন আইসি সুজয় দুঙ্গা ও ওসি অভিজিৎ সিনহা। বেলা আড়াইটে নাগাদ এই অবরোধ উঠে যায়।

আরও পড়ুন : আজ দেশজুড়ে চাক্কা জ্যামের ডাক অন্নদাতাদের, নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রাজধানী

উত্তর ২৪ পরগণা

ধূপগুড়ি ছাড়াও, হাবড়াতে অল ইন্ডিয়া কিষাণ ক্ষেত মজুর সংগঠনের ডাকে হাবড়া স্টেশন থেকে যশোর রোড পর্যন্ত চলে পথ অবরোধ। জনস্বার্থবিরোধী তিনটি কৃষি আইন ও বিদ্যুৎ আইন বাতিলের দাবিতে এবং কৃষকদের সমর্থনেই পথে নামেন কর্মীরা। শনিবার, হাবড়া শহরে মিছিলের পর বেলা ১২ টা থেকে শুরু হয় পথ অবরোধ কর্মসূচি। অবরোধের জেরে বনগাঁ-বারাসাতে বন্ধ থাকে যান চলাচল। এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।

অন্যদিকে, আমডাঙার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে নামে বাম-কংগ্রেস। সিপিএম নেতা শোহারফ মণ্ডল জানান, দিল্লির তিন কেন্দ্রীয় কৃষি আইনের বিরুদ্ধে এই অবরোধ। আমডাঙা জাতীয় সড়কের পাশাপাশি মছলন্দপুরের তেতুলিয়া সড়কে অবরোধে নামে সিপিআইএম। অবরোধের জেরে বনগাঁ-বসিরহাট-তেতুলিয়ায় দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকে যানচলাচল। মছলন্দপুরে তিন মাথার মোড়ে ট্রাক্টর নিয়ে বিক্ষোভ দেখান সিপিআইএম কর্মীরা।

কেন্দ্রীয় কৃষি আইনের বিরুদ্ধে, বারাসতের ডাকবাংলো মোড়ে চাক্কা জ্যাম কর্মসূচিতে যৌথভাবে অংশ নেয় বাম-কংগ্রেস কর্মীরা। বেলা একটা থেকে দুটো পর্যন্ত অবরোধের জেরে বনগাঁ থেকে কলকাতা-কৃষ্ণনগর সহ সমস্ত রাস্তা বন্ধ থাকে।

উত্তর ২৪ পরগনার ফরোয়ার্ড ব্লকের জেলা সভাপতি সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় জানান, কেন্দ্রের তিনটি আইন, বিদ্যুৎ বিল আইনের বিরুদ্ধে ও দিল্লির কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে আজ পথে নেমেছেন তাঁরা। অবিলম্বে আইন প্রত্যাহার না করলে লাগাতার আন্দোলন চালাতে পিছপা হবেন না তাঁরা।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা

কৃষকদের সমর্থনে জয়নগরে কুলপি রোডে বিক্ষোভ দেখান সিপিএম সমর্থকেরা। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিক্ষোভকারীরা। কুলপি রোড থেকে দক্ষিণ বারাসাত মোড় জুড়ে অবরোধের জেরে ঘণ্টাখানেক বন্ধ থাকে যান চলাচল।

দক্ষিণ দিনাজপুর 

দক্ষিণ দিনাজপুরের পতিরাম, ফুলবাড়ি ও বুনিয়াদপুরে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে চাক্কা জ্যাম করল কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন সমূহ। এদিন ক্রমাগত পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বুনিয়াদপুর, পতিরাম ও ফুলবাড়িতে জাতীয় সড়কের ওপর অবস্থান বিক্ষোভ এর মাধ্যমে চাক্কা জ্যাম কর্মসূচি পালন করে বাম নেতৃত্ব। উপস্থিত ছিলেন জেলা সি আই টি ইউ সম্পাদক গৌতম গোস্বামী সহ অনেকেই।

হুগলি 

চাক্কা জ্যামের সমর্থনে ডানকুনির ২নম্বর জাতীয় সড়কে বিক্ষোভ দেখান শিখ সম্প্রদায়ের মানুষরা। অবরোধের ফলে কলকাতা ও বর্ধমানগামী সব যানচলাচল বন্ধ থাকে। কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে এই অবরোধে রাশ টানতে মোতায়েন করা হয় পুলিশ।

বীরভূম

চাক্কা জ্যামের সমর্থনের কর্মসূচি থেকে বাদ গেল না বীরভূমও। বোলপুর বাইপাস রোডে কৃষকদের সমর্থনে বাম-কংগ্রেসের যৌথ নেতৃত্বে পালিত হল চাক্কা জ্যাম কর্মসূচি।

বোলপুর বাইপাস চৌমাথা মোড়ে ইলামবাজার -বোলপুর রোড সহ কাচ্ছারীপট্টি রোডে চলল পথসভা। রাজ্য সিপিএম-এর সদস্য গৌতম ঘোষ, বকুল ঘড়ুই জেলা সাধারণ সদস্য তুষার ব্যানার্জি আরএসপি জেলা কমিটির সদস্য, জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব তপন সাহা প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। পথসভায় বক্তব্য রাখেন বাম নেতারা। রিহানা টুইট বিতর্ক থেকে শুরু করে কৃষকদের রুখতে লোহার কাঁটা ব্যবহারের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানান বাম-কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ।

আরও পড়ুন : পিসি ভাইপোকে এবার হাত জোড় করবেন বাংলার জনতা : নাড্ডা

প্রসঙ্গত, শনিবার বেলা ১২টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত পথ অবরোধ চলেছে দেশজুড়ে। তবে বাদ থাকছে দিল্লি, উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড। এদিনের চাক্কা জ্যাম ঘিরে কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে রাজধানী। আন্দোলনকারী কৃষক সংগঠনগুলির তরফে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র জাতীয় এবং রাজ্য সড়কগুলিতে শান্তিপূর্ণভাবে এই আন্দোলন (Farmers’ Protest) চলবে।

কলকাতা

কেন্দ্রীয় কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে সেন্ট্রাল এভিনিউ এর উপরে বিক্ষোভ দেখায় প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। সেন্ট্রাল কলকাতা কংগ্রেস কমিটির পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়। গাড়ি আটকানোর সময় পুলিশের সঙ্গে সাময়িক বচসার জেরে বেশ কিছু সময় রাস্তা অবরোধ করে রাখেন কংগ্রেস কর্মীরা। পোড়ানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কুশপুতুল। ৩০ মিনিট বন্ধ থাকে সেন্ট্রাল এভিনিউ এবং গণেশ চন্দ এভিনিউ সংযোগস্থল।