Year Ender 2022: বাইশে এমন টাকার পাহাড় এর আগে দেখেছে কি বাংলা?
Year Ender 2022: টাকার পাহাড় দেখেছে গোটা বাংলা। আর সৌজন্যে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়।
কলকাতা: চাকরি ক্ষেত্রের দুর্নীতিতে তদন্ত, তাতে মেলে আর্থিক যোগ। আর সেই ঘটনার তদন্তে নেমে ইডি আধিকারিকরা যা আবিষ্কার করলেন, তা কস্মিনকালে শেষ কবে দেখেছিল বাংলা, তা মনে করতে পারেননি দুঁদে রাজনীতিবিদরাও। টাকার পাহাড় দেখেছে গোটা বাংলা। আর সৌজন্যে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। দিনটা ২২ জুলাই। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) দুর্নীতিকাণ্ডে আর্থিক যোগের অভিযোগে অভিযান চালান পার্থর নাকতলার বাড়িতে। ওই দিনই সন্ধ্যাবেলা অর্পিতার টালিগঞ্জের আবাসনে পৌঁছে যায় ইডির একটি দল। ওয়ারড্রোবের মধ্যে থেকে বস্তাবন্দি নোট উদ্ধার করেন। ৫০০ আর ২০০০-এর বান্ডিল। থরে থরে সাজানো। ব্যাঙ্ক আধিকারিকরা টানা গোনা শুরু করেন। আসে টাকা গোনার মেশিন। রাতভর চলে গণনা। পরের দিন ইডি জানায়, অর্পিতার টালিগঞ্জের ডায়মন্ড সিটি ফ্ল্যাট থেকে ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। সঙ্গে ৭৯ লক্ষ টাকার গয়না এবং ১৮টি মোবাইল। অর্পিতার বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের পর প্রথমবার টাকার পাহাড় দেখলেন বাংলার মানুষ। আক্ষরিক অর্থের টাকার পাহাড়।
এটা শুরু। এরপর প্রকাশ্যে আসতে থাকে পার্থ-অর্পিতার একের পর এক সম্পত্তির খবর। বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি, গাড়ির যে তালিকা এখনও পর্যন্ত উঠে এসেছে, তার বাজারমূল্য কোনও ভাবেই ১০০ কোটি টাকার কম নয়, তদন্তকারীরা অন্তত তেমনটাই বলছে।
টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে অভিযান চালানোর পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ২৭ জুলাই বেলঘরিয়ার বহুতল আবাসন ‘ক্লাব টাউন হাইটস’-এও অর্পিতার নামে থাকা দু’টি ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় ইডি।
ইডি সূত্রে খবর, বেলঘরিয়ার ৮-এ ফ্ল্যাটটির শোবার ঘর এবং শৌচালয় থেকে মোট ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ নগদ টাকা এবং ৪ কোটি ৩১ লক্ষ টাকার সোনা উদ্ধার করা হয়। ইডি জানায়, অর্পিতার টালিগঞ্জ এবং বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে নগদ ৫০ কোটি ৩৬ লক্ষ এবং ৫ কোটি ৭ লক্ষ টাকার সোনার গয়না উদ্ধার হয়েছে।
বাংলা প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহরের ওলিগলি, সকলের মুখে তখন একটাই ‘হট টপিক’। এত্ত টাকা! এসবের মাঝেই আবার বিপুল টাকা উদ্ধার। হাওড়ার পাঁচলায় ঝাড়খণ্ডগামী গাড়ি থেকে উদ্ধার বান্ডিল বান্ডিল টাকা ও সোনাদানা। তদন্তকারীদের দাবি, গাড়িতে প্রায় ৪৯ লক্ষ টাকা ছিল। আটক করা হয় ঝাড়খণ্ডের তিন কংগ্রেস বিধায়ককে। পরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। একটি কালো গাড়িতে সেই টাকা কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তা নিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক চর্চা। পরে ওই তিন কংগ্রেস বিধায়ককে সাসপেন্ড করে কংগ্রেস।
এরপর তালিকায় আসে ‘আমিরি খেল’। সৌজন্যে গার্ডেনরিচের আমির খান। প্রথমে অনলাইন প্রতারণা চক্রের তদন্তে নেমে ইডি হানা দেয় গার্ডেনরিচের বাসিন্দা নিসার আহমেদ খানের বাড়িতে। তারই ছেলের নাম আমির খান। প্রথমে আমিরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় প্রায় ১৭ কোটি টাকা। উঠে আসে অনলাইন গেমিং অ্যাপ ‘ই-নাগেটস’এর নাম। এই অ্যাপে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে লক্ষ লক্ষ টাকার প্রতারণা করা হয়েছে। সমান্তরালভাবে তদন্তে উঠে আসে ক্রিপ্টোকারেন্সির বিষয়টিও। আমির খানের একটি অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করে। ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ১৪.৫৩ কোটি টাকা উদ্ধার হয়।
এরপর তালিকায় আসে পান্ডে ব্রাদার্সের নাম। হাওড়ার শিবপুর একটি আবাসনে ২ কোটি ২০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। উদ্ধার হয়েছে সোনা, রূপো ও হিরের বহু মূল্যবান গয়নাও। আনুমানিক মূল্য কয়েক লক্ষ টাকা। এই গাড়ির মালিকের নাম অরবিন্দ পাণ্ডে। তাঁর ভাই শৈলেশ পাণ্ডের নাম উঠে আসে। এরপর তদন্তে নেমে দুটি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেন তদন্তকারীরা। দুটি অ্যাকাউন্ট থেকে ২০ কোটি টাকা ফ্রিজ করা হয়। ১৪ অক্টোবর হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ জানায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। দুটি অ্যাকাউন্টে লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়টি সন্দেহজনক লাগায় তাঁরা থানায় অভিযোগ করেছিলেন। আপাতত পান্ডে গ্রেফতার তদন্তকারীদের জালে।
এই অধ্যায়ের আপাতত শেষ সংযোজন উল্টোডাঙার উমেশ আগরওয়াল, রুমেন আগরওয়াল। ওই বাড়ির আলমারি থেকে উদ্ধার হয় দেড় কোটি টাকা। উমেন, রুমেশের বাড়ি থেকে প্রচুর নথি উদ্ধার হয়। ২০ অক্টোবর উল্টোডাঙার ব্যবসায়ী উমেশ আগরওয়ালের বাড়ি থেকে ৭ কোটির বিট কয়েনও উদ্ধার হয়। তদন্তকারীদের বক্তব্য, গার্ডেনরিচ ও উল্টোডাঙা টাকা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে, তা টাকার হিসাবে ৭০ কোটি হবে। এই মামলা দুটি বিচারাধীন।
এরপর মালদার গাজোলে এক মাছ ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় কোটি টাকা। ১ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে। টাকা গুনতে আনা হয় মেশিন। আবারও চমকে ওঠে গোটা বাংলা। ব্যবসায়ীর নাম জয়প্রকাশ। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ওই ব্যবসায়ীর মূলত মাছের ব্যবসা রয়েছে। বিভিন্ন জলাভূমি, পুকুর লিজ় নিয়ে মাছের ব্যবসা করে থাকেন তিনি। গরু পাচার-সহ সীমান্তে বিভিন্ন ধরনের চোরা কারবারের টাকা আসত জয়প্রকাশের কাছে। কালিয়াচকে পরিযায়ী শ্রমিক মইনুদ্দিন শেখের ৩৭ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়। মইনুদ্দিনের স্ত্রী দাবি করেন, এই টাকা রয়েল শেখের স্ত্রী ফতেমা বিবি জোর করে তাঁর বাড়িতে রেখে গিয়েছেন। রয়েল শেখ আপাতত জেল হেফাজতে। গত ফেব্রুয়ারিতে সিআইডি তাঁকে গ্রেফতার করে। ব্রাউন সুগার পাচারের অভিযোগে তিনি বর্তমানে হাজতে। এই টাকা সেই মাদক পাচারের টাকা বলেই মনে করছে পুলিশ।