Year Ender 2022: খুনের বদলা খুন! কী হয়েছিল বগটুইয়ে? আজ কোন মোড়ে দাঁড়িয়ে নারকীয় হত্যাকাণ্ডের এই মামলা?

Year Ender 2022: ছোট আঙারিয়ার পর গণহত্যাকাণ্ডের অধ্যায়ে নবতম সংযোজন হয় বগটুই হত্যাকাণ্ড।

Year Ender 2022: খুনের বদলা খুন! কী হয়েছিল বগটুইয়ে? আজ কোন মোড়ে দাঁড়িয়ে নারকীয় হত্যাকাণ্ডের এই মামলা?
এখানেই হয়েছিল বগটুই হত্যাকাণ্ড
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 30, 2022 | 3:42 PM

রামপুরহাট: ২১ মার্চ মধ্যরাত। রামপুরহাটের একটা প্রত্যন্ত গ্রাম বগটুই রাতারাতি উঠে আসে খবরের শিরোনামে। অখ্যাত সেই গ্রামের রাস্তা, যেখানে কিনা বাইরের লোকের খুব একটা বেশি আনাগোনা ছিল না, সেখানে গোটা রাজ্য, সর্বভারতীয় স্তরের প্রশাসনিক শীর্ষ কর্তা, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃত্ব পড়ে থেকেছেন দিন রাত এক করে। একটা ‘গণহত্যাকাণ্ড’, যার ভয়াবহতায় শিউরে উঠেছে গোটা বাংলা। খুনের বদলা খুন! কুপিয়ে, পুড়িয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে। ছোট আঙারিয়ার পর গণহত্যাকাণ্ডের অধ্যায়ে নবতম সংযোজন হয় বগটুই হত্যাকাণ্ড।

২১ মার্চ সন্ধ্যায় বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখকে বোমা মেরে খুনের অভিযোগ ওঠে। ঘটনাচক্রে মাঝ রাতেই বেপরোয়া বোমাবাজি হয় ওই গ্রামে। একটি বাড়িতে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপরের ঘটনা আরও ভয়ানক। অভিযোগ, আগুন ধরানোর আগে গ্রিল কেটে ভিতরে ঢুকে বাড়ির মহিলা-শিশুদের কোপানোও হয়।

অভিযোগ, ভাদু শেখ খুনের বদলা নিতে বগটুই গ্রামে ১০টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে আট জনের পোড়া দেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনার কয়েকদিন রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরও এক মহিলার মৃত্যু হয়। ঘটনার মূল চক্রী হিসাবে উঠে আসে আনারুল শেখের নাম।

ঘটনার পর থেকে আক্রান্ত পরিবারের জীবিত সদস্যরা অন্য গ্রামে আত্মগোপন করে ছিলেন। ঘটনার পরের দিনও তাঁদের খোঁজ পাননি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। দু’দিন বাদে ভয় কাটিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন আক্রান্তের পরিবারের সদস্যরা। সেই সময় উঠে আসে আনারুলের নাম। প্রথমে আনারুলের খোঁজ পাচ্ছিল না পুলিশ। এরপর গ্রামে নির্যাতিত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুব্রত মণ্ডলকে পাশে নিয়েই আনারুলকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেদিনই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আনারুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উল্লেখ্য, আনারুল অবশ্য প্রথম থেকেই দাবি করে আসছিলেন, তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। এরপর এই ঘটনার তদন্তভার যায় সিবিআই-এর হাতে। সিবিআই এই ঘটনার তদন্তভার হাতে নেওয়ার পরেই গ্রেফতার করেছিল ৩০ জনকে। সিবিআই-এর তদন্তে অগ্নি সংযোগের ঘটনায় অভিযুক্ত হিসাবে উঠে আসে জাহাঙ্গির শেখ, লালন শেখ, ফয়জল শেখ-সহ একাধিক জনের নাম। এরমধ্যে জাহাঙ্গির নিহত উপপ্রধান ভাদু শেখের ভাই। লালন শেখ ছিলেন ভাদুর ছায়াসঙ্গী।

গত ২১ জুন সিবিআই বগুটুই গণহত্যাকাণ্ডের দুটি চার্জশিট জমা দেয় সিবিআই। সেখানে ফেরার হিসাবে দেখানো হয় অন্যতম অভিযুক্ত জাহাঙ্গিরকে। চলতি মাসের ৭ তারিখ তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই। আগেই গ্রেফতার করা হয় লালন শেখকে।

বছর শেষে এই ঘটনা আরও বেশি রহস্যময় হয়ে ওঠে। গ্রেফতারির ৯ দিনের মাথাতেই রহস্যময় মৃত্যু হয় লালন শেখের। রামপুরহাটের অস্থায়ী সিবিআই ক্যাম্পের শৌচাগার থেকে লালনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। এরপর আবারও ফুঁসে ওঠে বগটুই। এবার সিবিআই-এর বিরুদ্ধেই খুনের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন লালনের স্ত্রী রেশমা বিবি। তাঁর অভিযোগ, লালনকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে সিবিআই। পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, লালনের জিভ কাটা ছিল, পায়ের রক্তের দাগ. গলায় মোটা দাগ ছিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও উল্লেখ থাকে, শ্বাসরোধের ফলেই মৃত্য়ু হয়েছে লালনের। এই ঘটনার রেশমা বিবি তিন পাতার অভিযোগ করেছেন। অন্তত ৭ জন সিবিআই আধিকারিকের নাম রয়েছে। তাতে নাম রয়েছে গরু পাচার মামলায় তদন্তকারী দুই অফিসারের নামও।

সিবিআই-এর বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় খুনের মামলা রুজু করেছেন লালনের স্ত্রী। লালনের স্ত্রী একজন অত্যন্ত সাধারণ গ্রাম্য বধূ। তিনি কীভাবে এতজন উচ্চ পদস্থ সিবিআই আধিকারিকের নাম জানলেন? উঠছে সে প্রশ্নও। এরই মধ্যে হাইকোর্টের নজরদারিতে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে মানবাধিকার কমিশন। যদিও সেই আর্জি খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ। আপাতত লালন শেখ রহস্যমৃত্যু মামলার তদন্ত করছে সিআইডি আর বগটুই মামলার তদন্ত হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই-এর হাতেই রয়েছে। বছরের মাঝামাঝি যে নৃশংস ‘হত্যাকাণ্ড’সারা রাজ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছিল, তার আঁচ থাকল বর্ষশেষের শীতেও।