Ritwik Ghatak’s ancestral home: রইল না স্মৃতিটুকু, ঋত্বিকের বাড়িও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল

Ritwik Ghatak's ancestral home: শেষ জীবন পর্যন্ত দেশভাগের যন্ত্রণা বহন করেছিলেন তিনি। বারে বারে তাঁর সিনেমায় গল্পে উঠে এসেছে দেশভাগ নিয়ে আক্ষেপ, পদ্মাপারের বৃত্তান্ত। অনেকদিন হল ঋত্বিক আর নেই। তবে, বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার মিয়াপাড়া এলাকায় এতদিন পর্যন্ত টিকে ছিল তাঁর পৈতৃক বাড়িটি। এবার চূড়ান্ত নৈরাজ্যর মধ্যে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈত্রিক ভিটেটাও।

Ritwik Ghatak's ancestral home: রইল না স্মৃতিটুকু, ঋত্বিকের বাড়িও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল
দেশভাগের যন্ত্রণা তাঁকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেত, রক্ষা পেল না পৈত্রিক বাড়িটাওImage Credit source: TV9 Bangla
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 15, 2024 | 5:06 PM

ঢাকা: শেষ জীবন পর্যন্ত দেশভাগের যন্ত্রণা বহন করেছিলেন তিনি। বারে বারে তাঁর সিনেমায় গল্পে উঠে এসেছে দেশভাগ নিয়ে আক্ষেপ, পদ্মাপারের বৃত্তান্ত। অনেকদিন হল ঋত্বিক আর নেই। তবে, বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার মিয়াপাড়া এলাকায় এতদিন পর্যন্ত টিকে ছিল তাঁর পৈতৃক বাড়িটি। এবার চূড়ান্ত নৈরাজ্যর মধ্যে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈত্রিক ভিটেটাও। ধ্বংসস্তুপ ছাড়া আর সেই বাড়ির কিছু পড়ে নেই। এই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে রাজশাহী তথা বাংলাদেশের সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে। তবে, এর পিছনে কোনও নৈরাজ্যবাদী শিক্ষার্থী বা ইসলামপন্থী কারও হাত নেই বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। বরং আঙুল উঠছে ওই বাড়ি সংলগ্ন এক হোমিওপ্যাথি কলেজের অধ্যক্ষের দিকে। এই ঘটনা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। রাজশাহীর জেলাশাসক জানিয়েছেন, যারা এই বাড়ি ভাঙার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের একটা বড় সময় এই বাড়িতেই কাটিয়েছিলেন ঋত্বিক ঘটক। পড়াশোনা করতেন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে। তাঁকে কেন্দ্র করে তখন থেকেই রাজশাহীতে সাহিত্য ও নাট্য আন্দোলন গতি পেয়েছিল। শুধু ঋত্বিক একাই নন, এই বাড়িতে থাকতেন তাঁর ভাইঝি তথা বরেণ্য কথা সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীও। ১৯৮৯ সালে, বাড়িটির ৩৪ শতাংশ জমি সরকার রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজকে ইজারা দেওয়া হয়েছিল। বাড়িটির উত্তর অংশের সেই জমিতে তৈরি হয়েছিল হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ। আর দক্ষিণ অংশে ঋত্বিক ঘটকের স্মৃতিবিজড়িত ঘরগুলি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল বাড়িটি। কিন্তু, গত ৫ অগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আনিসুর রহমানের নির্দেশেই ওই পুরনো বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ। নিজে ভেঙে সেই দোষ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর চাপাতে চেয়েছিলেন তিনি এমনটাই অভিযোগ।

ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গোটা বাড়ি

তিনদিন ধরে শ্রমিক লাগিয়ে পুরনো বাড়িটি ভাঙার কাজ চলছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। সংখ্যালঘু ও অন্যান্যদের উপর হামলা ঠেকাতে বাংলাদেশের জায়গায় জায়গায় রাত পাহারার ব্যবস্থা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রাজশাহীতেও রাতে পাহারা দেওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘সেভ রাজশাহী’ নামে একটি গ্রুপ খোলা হয়। সেই গ্রুপেই মঙ্গলবার রাতে ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ভাঙা হচ্ছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এরপর, বুধবার (১৪ অগস্ট) সকালে, ঘটনাস্থলে যান রাজশাহীর সংস্কৃতিকর্মীরা। তাঁরা গিয়ে দেখেন বাড়িটির আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। পুরোটাই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ, এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে বাড়িটি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কলেজ কর্তৃপক্ষকে সেই সব কাগজপত্র দেখান সংস্কৃতিকর্মীরা। কলেজ কর্তৃপক্ষ এই সময় তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। এই নিয়ে অধ্যক্ষের কক্ষে হট্টগোল শুরু হয়। পরে সংস্কৃতিকর্মীরা জেলাশাসকের কাছে যান।

রাজশাহীর চলচ্চিত্রনির্মাতা তাওকীর ইসলাম শাইক বলেছেন, “আমরা মঙ্গলবার রাতে ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ভেঙে ফেলার খবর পাই। এসে দেখি সব ভেঙে ফেলা হয়েছে। আমরা আগেও দেখেছি, কলেজ কর্তৃপক্ষ এটা ভাঙার পাঁয়তারা করেছে। তারা এই সুযোগে ভেঙে ফেলল। আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়েছি। আমরা দেখব, এটা কারা ভেঙেছে। যদি কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাঙে তাহলে অধ্যক্ষকে পদত্যাগ করতে হবে।” রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ওয়ালিউর রহমান বাবু বলেছেন, “ঋত্বিক ঘটক এই বাড়িতে অনেকটা সময় কাটিয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতা চলে গেলেও আমরা তাকে ধারণ করি। এই বাড়িটি তার স্মৃতিচিহ্ন। এটা একটা হেরিটেজ। এই বাড়ি ভেঙে ফেলা আমরা কোনোভাবেই মানতে পারি না।” জেলাশাসক শামিম আহমেদ বলেছেন, “ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক বাড়িটি ভেঙে ফেলার কথা শুনেছি। সংস্কৃতিকর্মীরা আমার কাছে এসেছিলেন। আমি অতিরিক্ত জেলাশাসককে (শিক্ষা ও আইসিটি) বলেছি, তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে। যারাই এই বাড়ি ভাঙুক, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এটাই ছিল ঋত্বিক ঘটকের পৈত্রিক বাড়ি

এদিকে, রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আনিসুর রহমানের দাবি, ৬ অগস্ট প্রথমে কিছু ছাত্র এসে বাড়িটি ভাঙতে শুরু করেছিল। যারা ভাঙছিল, তিনি তাদের পরিচয় জানতে চেয়েছিলেন। তারা জানিয়েছিল, তারা শ্রমিক। কিছু অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি তাদের টাকা দিয়েছে বাড়িটি ভেঙে ফেলার জন্য। অধ্যক্ষ মেনে নিয়েছেন, জায়গাটি নিয়ে কলেজের অন্য পরিকল্পনা আছে। তবে, বাড়িটি তাঁরা ভাঙেননি বলে দাবি করেছেন তিনি।

বস্তুত, ঋত্বিক ঘটকের বাড়িটি ভেঙে ফেলে, জায়গাটি অন্য কাজে ব্যবহারের চেষ্টা কলেজ কর্তৃপক্ষ এর আগেও করেছে। বারবারই বাধা দিয়েছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। ২০২০ সালে সাইকেল গ্যারেজ তৈরির জন্য ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক বাড়ি ভাঙার চেষ্টা করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ, এমন খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। গোটা বাংলাদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি, রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ এবং বরেন্দ্র ফিল্ম সোসাইটি যৌথভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছিল। বারোজন চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিবাদপত্র দিয়েছিলেন। বহু চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। এরপর বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রক বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এবার নিঃশব্দে ভেঙে ফেলা হল বাড়িটি। ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি, ড. এফএমএ জাহিদ থেকে শুরু করে অনেক কর্মীই এখন নিরুদ্দেশ।

আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)