অস্ত্রোপচার টেবিলে শুয়ে মা ও সদ্যজাত, তালা ঝুলিয়ে পালালেন ডাক্তার-নার্সরা

Bangladesh News: স্বাস্থ্য বিভগের অভিযানের আশঙ্কায়, বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে সদ্যজাত সন্তান ও মাকে অস্ত্রোপচার টেবিলে রেখে ক্লিনিকে তালা দিয়ে পালিয়ে গেলেন ডাক্তার-নার্সরা।

অস্ত্রোপচার টেবিলে শুয়ে মা ও সদ্যজাত, তালা ঝুলিয়ে পালালেন ডাক্তার-নার্সরা
প্রতীকী ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 29, 2022 | 11:40 PM

ঢাকা: চলছিল এক প্রসুতির অস্ত্রোপচার। কিন্তু, আচমকাই সদ্যজাত সন্তান-সহ সেই মাকে অস্ত্রোপচার টেবিলেই রেখে ক্লিনিকে তালা দিয়ে পালিয়ে গেলেন ডাক্তার থেকে শুরু করে সকল চিকিৎসাকর্মীরা। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার, বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার শিমরাইল এলাকার এক অবৈধ হেল্থ ক্লিনিকে। বাংলাদেশ জুড়ে বর্তমানে বিভিন্ন অবৈধ হেল্থ ক্লিনিক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে চলছে অভিযান। তারই অংশ হিসাবে, এদিন ‘পদ্মা জেনারেল হাসপাতাল’ নামে ওই অবৈধ হেলথ ক্লিনিকেও স্বাস্থ্য বিভগের অভিযান হতে পারে। এই আশঙ্কা করেই, ওই সদ্যজাত ও তাঁর মাকে অসহায় অবস্থায় ফেলে চম্পট দেন হেলথ ক্লিনিকের কর্মীরা, এমনটাই জানা গিয়েছে।

প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এদিন ওই অবৈধ হেলথ ক্লিনিকটির কাছাকাছি এক এলাকাতেই বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর (হাসপাতাল) মাহমুদুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযান চালাচ্ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্মীরা। হঠাতই তাঁদের কাছে, পদ্মা জেনারেল হাসপাতাল নামে ওই ক্লিনিকের বিস্ময়কর ঘটনার খবর আসে। অস্ত্রোপচারের টেবিলে প্রসূতি মাকে রেখে তালা দিয়ে সবাই পালিয়েছেন জেনে সঙ্গে সঙ্গে খবর ওই ক্লিনকের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। কিন্তু, ক্লিনিকটি খুঁজে পেতে বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে যায়। অবশেষে, ওই ক্লিনিকে পৌঁছে ওই সদ্যজাত ও তাঁর মা-কে উদ্ধার করেন কর্মীরা। পরে তাঁদের ঢাকার মাতুয়াইল শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে দুজনেই ভালো আছেন বলে জানা গিয়েছে।

এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ওই খবর পাওয়ার পর থেকে আর অবৈধ ক্লিনিক বন্ধ করা নয়, মা ও সন্তানের যাতে কোনও ক্ষতি না হয় সেই দিকেই মনোযোগ দিয়েছিলেন তাঁরা। তিনি নিজেও পেশায় চিকিৎসক। মাহমুদুর রহমান জানিয়েছেন, ক্লিনিকটিতে পৌঁছে তিনি নিজেই প্রথমে ওই মায়ের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেন। তিনি দেখেছিলেন, অস্ত্রোপচারের পর সেলাই করা হয়েছে। কিন্তু, তাঁকে পোস্ট–অপারেটিভ রুমে নিয়ে গিয়ে অপারেশন পরবর্তী চিকিৎসা কিছুই দেওয়া হয়নি। তার আগেই ডাক্তার ও অন্যান্য কর্মীরা সেখান থেকে পালান। শুধু তাই নয়, অবৈধ ক্লিনিক বন্ধের অভিযানে নিযুক্ত সরকারি কর্মীদের ধোকা দিতে, ক্লিনিকের গেটে একটি নোটিসও ঝুলিয়ে দিয়ে গিয়েছিল তারা। সেই নোটিসে লেখা ছিল, ‘হাসপাতাল বন্ধ, সংস্কারের কাজ চলছে’। মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘চিকিৎসক হয়ে তাঁরা কীভাবে একজন অস্ত্রোপচারের রোগীকে এভাবে ফেলে চলে যেতে পারলেন? আমি তো ঘটনাটা বিশ্বাসই করতে পারছি না। অস্ত্রোপচার-পরবর্তী যেকোনও জটিলতায় মায়ের মৃত্যুও হতে পারত।’

জানা গিয়েছে, ওই ক্লিনিকটি সরকারি খাতায় নিবন্ধিতই নয়। এমনকি, তারা কখনও অনুমোদন চেয়ে আবেদন পর্যন্ত করেনি। তারপরও, পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা চলত। এদিনের ঘটনার পর, স্বাভাবিকভাবেই ওই অবৈধ ক্লিনিকটি বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিভাগ। জানা গিয়েছে, ওই মা ও সদ্যজাত ছাড়াও, ক্লিনিকটিতে আগে অস্ত্রোপচার হওয়া আরও তিনজন মা ও তাঁদের নবজাতকরা ভর্তি ছিলেন। তাঁদের সকলকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ওই মহিলার অস্ত্রোপচারের জন্য তাঁর পরিবারের কাছ থেকে আগাম ১০ হাজার বাংলাদেশি টাকা নেওয়া হয়েছিল। সব মিলিয়ে ১৮ হাজার টাকার চুক্তিতে, সন্তান প্রসবের জন্য ওই মহিলাকে ভর্তি করা হয়েছিল। তাঁর এক আত্মীয় জানিয়েছেন, ঘটনার আকস্মিকতায় তাঁরা প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। অস্ত্রোপচার চলছিল। হঠাতই তাঁরা দেখেছিলেন, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সরা সকলে পালাচ্ছেন। তাঁরা সত্যিকারের চিকিৎসক বা নার্স কি না, এই নিয়েই এখন তাঁদের মনে সন্দেহ জাগতে শুরু করেছে।