Dhaka blast: ‘ও আল্লা, তুমি এইডা কী করলা?’ ভ্রাতৃহারা দিদির কান্না

Dhaka blast: কেউ খুঁজছেন সন্তানকে, কেউ ভাই কিংবা অন্য কোনও স্বজনকে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানে, সাততলা ভবনে জোরাল বিস্ফোরণের পর, এখন হতাহতদের খোঁজে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে কয়েকশো মানুষের ভিড়।

Dhaka blast: ‘ও আল্লা, তুমি এইডা কী করলা?’ ভ্রাতৃহারা দিদির কান্না
রাত পর্যন্ত চলছে উদ্ধারকাজ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 08, 2023 | 12:35 AM

ঢাকা: কান্না আর হাহাকারে ভারী হয়ে উঠেছে বাতাস। কেউ খুঁজছেন সন্তানকে, কেউ ভাই কিংবা অন্য কোনও স্বজনকে। কেউ কেউ স্বজনের খোঁজ পেয়েছেন, কিন্তু চোখের দেখা হয়নি। মঙ্গলবার, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানে, সাততলা ভবনে জোরাল বিস্ফোরণের পর, এখন হতাহতদের খোঁজে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে কয়েকশো মানুষের ভিড়। এদিকে, বিস্ফোরণ হওয়া ভবনটিতে এখনও উদ্ধারের কাজ চালাচ্ছে পুলিশ, সেনাকর্মী ও দমকল কর্মীরা। তবে, বিস্ফোরণের অভিঘাতে ভবনটির এমনই অবস্থা হয়েছে, যে তার মধ্যে উদ্ধারকাজ চালানোটা বড় চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় দমকল বিভাগ এবং সিভিল ডিফেন্স দফতরের ডিরেক্টর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মহম্মদ মইনুদ্দিন জানিয়েছেন, ভিতরে এখনও কেউ আটকে আছে কিনা, নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। কারণ, তাঁরা আপাতত ভবনটিতে ঢুকতেই পারছেন না। মহম্মদ মইনুদ্দিন বলেছেন, “যখন বিস্ফোরণ ঘটে, তখন বাজার চালু ছিল। কর্মচারীরা ছিলেন, ক্রেতারাও ছিলেন। তাই এখনও ভিতরে কেউ কেউ আটকে থাকতে পারেন। আমরা উদ্ধার অভিযান চালাব। কিন্তু তার আগে ভবনটি একটু স্থিতিশীল করতে হবে। কারণ, ভবনটির কলামগুলো ভেঙে গিয়েছে।”

এদিকে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে মেঝেতে এখন অনবরত কেঁদে চলেছেন সেলিনা বেগম, মহম্মদ সিফাত, জাফর আলি, মহম্মদ হানিফরা। কেউ অপেক্ষা করছেন প্রিয়জনের দেহের, কেউ প্রার্থনা করছেন তাঁর প্রিয়জন যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। ঘটনার সময় সেলিনা বেগমের ছেলে, কলেজপড়ুয়া জাহান সর্দার ছিল ভবনটির সামনের রাস্তায় একটি বাসে। জাহানের শরীরের একপাশ ঝলসে গিয়েছে। শুধু জাহান একা নন, ওই বাসের প্রায় সব যাত্রীই একইভাবে ঝলসে গিয়েছেন। মহম্মদ সিফাত অপেক্ষা করছেন ছোট ভাই সাখাওয়াত হোসেন রাহাতের দেহের জন্য। ঘটনার সময় তিনি ওই ভবনে অবস্থিত এক দোকানে স্যানিটারি পণ্য সরবরাহ করতে গিয়েছিলেন। ভবনের দেওয়াল ধসে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। বিস্ফোরণের পর, ছেলে রাজনকে ঢাকা মেডিক্যালেই ভর্তি করা হয়েছে বলে ফোন পেয়েছিলেন। কিন্তু হাসপাতালে এসে ছেলেকে খুজে পাচ্ছেন না। তাঁর থেকে কিছুটা ভাল অবস্থায় আছেন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত মহম্মদ সিয়ামের কাকা মহম্মদ হানিফ। সিয়াম আইসিইউ-তে আছেন বলে খবর পেয়েছেন তিনি।

বেসিন কিনতে এসে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে মমিনুল ইসলাম এবং তাঁর স্ত্রী নদী আক্তারের। মমিনুলের ভাই আবদুল্লাহ আল মামুন পরিবারের কাউকে এখনও কিছু জানাতে পারছেন না। বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের নিচতলায় স্যানিটারি সামগ্রীর দোকানের মালিক মমিনুদ্দিন ও কর্মচারী সম্রাটের খোঁজ মিলছে না। সম্রাটের কাকা আফতাবুদ্দিন বিকেলে থেকে নিহত ও আহতের তালিকা ঘেঁটে চলেছেন। কোথাও খোঁজ নেই তাঁদের। আর মায়ের জন্য ইফতারি সামগ্রী কিনতে এসে প্রাণ গিয়েছে সুমনের। ভাইয়ের দেহের সামনে সমানে কেঁদে চলেছেন তাঁর দিদি সোমা। সমানে বলে চলেছেন, “ও আল্লাহ, তুমি এইডা কী করলা?”

তবে, এই কান্না আর হাহাকারের মাঝে বিস্ময়করভাবে রক্ষা পেয়েছেন কেউ কেউ। যেমন জামান শিকদার। ওই বাড়িতেই একটি দোকানে কাজ করতেন তিনি। গরম লাগায় অভিশপ্ত ভবনটি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। রাস্তার উপর রাখা একটি ভ্যানে বসেন হাওয়া খেতে। দুই মিনিট যেতে না যেতেই ঘটে বিস্ফোরণ। জামান শিকদার জানিয়েছেন, ভাগ্যের জোরেই রক্ষা পেয়েছেন তিনি। তবে, তারপরও পুরোপুরি রক্ষা পাননি তিনি। জামান শিকদারের পা থেকে মাথা – সর্বত্র কাচ ও বিভিন্ন ধারালো পদার্থ ঢুকে গিয়েছে। মাথায়-পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে হাসপাতালে পড়ে আছেন তিনি। তবে, দোকানের মালিক এবং অন্যান্য কর্মচারীদের কোনও খোঁজ নেই তাঁর কাছে।