Bangladesh: ইউরোপ যেতে করেছিলেন জমি বিক্রি, ব্যাঙ্ক থেকে ধার; এখন রাস্তায় ১৬ যুবক
Bangladesh: শুধু ভারতীয়রাই নন, ইউরোপে গেলেই স্বপ্নপূরণ হবে, এই আশাতে বাংলাদেশ থেকেও প্রতি বছর বহু মানুষ পারি দেন প্রবাসে। তার জন্য কেউ বিক্রি করেন জমি, কেউ বা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেন, কেউ বা অন্য কোনও উপায়ে টাকা জোগার করেন। আর এই বিদেশ যাওয়ার উদগ্র বাসনাকে কাজে লাগিয়েই জালিয়াতি ব্যবসা ফেঁদে বসেছিল 'প্রবাসী সেবা লিমিটেড' নামে এক সংস্থা।
ঢাকা: সদ্য মুক্তি পেয়েছে শাহরুখ খান অভিনিত, রাজকুমার হিরানি পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ডাঙ্কি’। বৈধভাবে যেতে না পারলে, যে সকল অবৈধ বিপজ্জনক পথে ভারতীয়রা আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা বা ইউরোপের অন্য দেশে যায়, সেই পথটিকেই বলা হয় ডাঙ্কি। সিনেমার মূল চরিত্রই হল এই ডাঙ্কি। তবে, শুধু ভারতীয়রাই নন, ইউরোপে গেলেই স্বপ্নপূরণ হবে, এই আশাতে বাংলাদেশ থেকেও প্রতি বছর বহু মানুষ পারি দেন প্রবাসে। তার জন্য কেউ বিক্রি করেন জমি, কেউ বা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেন, কেউ বা অন্য কোনও উপায়ে টাকা জোগার করেন। আর এই বিদেশ যাওয়ার উদগ্র বাসনাকে কাজে লাগিয়েই জালিয়াতি ব্যবসা ফেঁদে বসেছিল ‘প্রবাসী সেবা লিমিটেড’ নামে এক সংস্থা। বিদেশে নিয়ে যাওয়ার লোভ দেখিয়ে অন্তত ১৬ জন যুবককে ঠকানোর অভিযোগ উঠেছে এই সংস্থার বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রত্যেকেই বিদেশে যেতে চেয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়েছিলেন এই সংস্থাকে। তারা বলেছিল, ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে ওই যুবকদের পর্তুগালে পাঠানো হবে। এই বিষয়ে যুবকদের সঙ্গে তাদের চুক্তিও হয়েছিল। সব মিলিয়ে ১১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা লাগবে বলে জানিয়েছিল সংস্থাটি। ভুয়ো কাগজপত্র দেখিয়ে, ভিসার আবেদন ও মেডিকেল পরীক্ষার কথা বলে যুবকদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা করে নিয়েছিল তারা। কিন্তু, বছর ঘুরে গেলেও ওই ১৬ যুবকের ইউরোপে যাওয়া হয়নি। পর্তুগালে পাঠানো তো দূরের কথা, এখনও তাঁদের ভিসার আবেদনই জমা দেয়নি সংস্থা বলে অভিযোগ। প্রতারিত যুবকরা জানিয়েছেন, তাঁদের টাকাও ফেরত দিচ্ছে না সংস্থাটি।
প্রতারিত যুবকরা জানিয়েছে, ওয়ার্ক পারমিট এবং ভিসা দিয়ে তাদের পর্তুগালে পাঠানোর কথা দিয়েছিল ওই সংস্থা। প্রাথমিক টাকা দেয়ার পর, ভিসার আবেদন জমা দিতে তাদের ঢাকা থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল নয়া দিল্লিতে। বলা হয়েছিল, দিল্লিতে তাদের এক প্রতিনিধি আছে। ওয়ার্ক পারমিটের মূল কপি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে তাঁদের ভিসার আবেদন জমা দিতে সাহায্য করবে সে। কিন্তু দিল্লিতে এসে প্রায় দুই সপ্তাহ থেকেও ওই ব্যক্তির সন্ধান পাননি বাংলাদেশি যুবকরা। তাদের কোনও প্রতিনিধি আসেনি। অভিযোগ, এক ব্যক্তি হোয়াটসঅ্যাপে রোজ বলতেন, আরও এক দিন থাকতে হবে। এইভাবে, দুই সপ্তাহ মতো হোটেলে বসে থেকেও, কোনও কাজ না হওয়ায় ১৬ অগস্ট দেশে ফিরে গিয়েছেন তাঁরা। পরে, ঢাকার গুলশানে, ‘প্রবাসী সেবা লিমিটেড’র অফিসে গিয়েছিলেন। উল্টে প্রতারিত যুবকদেরই দোষারোপ করা হয়, জানিয়ে দেওয়া হয়, জমা দেওয়া টাকা আর তারা ফেরত পাবেন না।
শুধু এই ১৬ জন যুবকই নন, আরও অনেকেই বিদেশ যেতে চেয়ে এই সংস্থায় টাকা দিয়ে বসে আছেন। কেউ কেউ আবার দ্রুত বিদেশ যেতে হবে বলে, চাকরিও ছেড়ে দিয়েছিলেন। এখন তাদের দেওয়ালে মাথা ঠোকার মতো অবস্থা। টাকা ফেরত না পেয়ে প্রতারিত যুবকদের অনেকে গুলশান থানায় ওই সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। কিন্তু, এক মাস ধরে তদন্ত করেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। থানার পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, অভিযোগ নিয়ে তারা দুই পক্ষের সঙ্গেই কথা বলেছে। প্রতারিতরা যাতে দ্রুত টাকা ফেরত পান, পুলিশ সেই চেষ্টাই করছে বলে দাবি করা হয়েছে। মজার বিষয় হল, প্রবাসী সেবা লিমিটেড কোও নিয়োগকারী এজেন্সি নয়। এটি একটি বিপিও অর্থাৎ, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং হিসেবে নিবন্ধিত। ঢাকার অভিজাত এলাকায় অফিস খুলে, তারা ইউরোপে পাঠানোর নামে এই প্রতারণা ব্যবসা ফেঁদে বসেছে।