Fake rape claims: নিজেকেই হাতুড়ি দিয়ে আঘাত, ধর্ষণের ভুয়ো দাবি যুবতীর; আত্মহত্যার চেষ্টা ৩ পুরুষের
Fake rape claims of British woman: ২০২০ সালে তাঁর ভুয়ো দাবিতে
লন্ডন: মাদক খাইয়ে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। পতিতা হিসাবে কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। ২০২০ সালের ২২ মে ফেসবুকে এমনই দাবি করেছিলেন এলেনর উইলিয়ামস। সেই সঙ্গে, ইংল্যান্ডের কামব্রিয়া প্রদেশের ব্যারো শহরের এই ২২ বছরের যুবতী তাঁর ক্ষতবিক্ষত মুখের একটি ছবি প্রকাশ করেছিলেন। দাবি করেছিলেন, দক্ষিণ এশীয় কিছু পুরুষ তাঁকে মারধর করেছে, যৌন নিগ্রহ করেছে এবং যৌনদাসী হিসেবে পাচার করে দিয়েছিল। তাঁর ওই পোস্ট ভাইরাল হয়েছিল। তারপর থেকে ভয়, ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল ব্যারো শহরে। এমনকি এলেনরকে ন্যায়বিচার দেওয়ার দাবিতে ব্যারো শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুরও হয়। তিন বছর পর জানা গেল এলেনরের সমস্ত দাবিই ছিল মিথ্যা। মঙ্গলবার (১৪ মার্চ), ব্রিটেনের এক আদালত, তাঁর বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষী উত্তেজনা সৃষ্টির দায়ে তাঁকে সাড়ে আট বছরের জন্য কারাদণ্ড দিয়েছে।
এলেনর দাবি করেছিলেন, তাঁকে ১২ বছর বয়স থেকেই যৌনদাসী হিসেবে তৈরি করেছিলেন মহাম্মদ রমজান নামে এক ব্যবসায়ী। পরে তিনি এলেনরকে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে অর্থের বিনিময়ে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করা হয়েছিল। এমনকি, নিলামে তাঁকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন মহাম্মদ রমজান। এলেনরের আরও দাবি ছিল, রমজান তাঁকে ব্ল্যাকপুল শহরে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়ে তুলে দিয়েছিলেন একাধিক পুরুষের হাতে। তারা তাঁকে নির্মমভাবে ধর্ষণ করেছিল।
তাঁর এই গুরুতর অভিযোগে আগুন জ্বলে উঠেছিল ব্যারো শহরে। যে সকল পুরুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন এলেনর, তাঁদের ব্যারো শহরে বসবাস করাই দায় হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন আত্মহত্যার চেষ্টা পর্যন্ত করেছিল। প্রধান অভিযুক্ত রমজান জানিয়েছেন, সারা বিশ্ব থেকে তাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অসংখ্য হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তাঁর একসময়ের সফল ব্যবসা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। অবসাদে তাঁর পরিবারের সামনেই আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। এমনকী ব্যারো শহরে সাম্প্রদায়িক অশান্তিও শুরু হয়ে গিয়েছিল।
তদন্তে নেমে অবশ্য পুলিশ ক্রমশ বুঝতে পারে, চিত্রটা পুরো আলাদা। পুলিশ দেখেছিল, এলেনর উইলিয়ামস যখন নেদারল্যান্ডসে ছিলেন, সেই সময় ব্যারো শহরেই ছিলেন মহম্মদ রমজান। কারণ, সেখানেই তাঁর ব্যাঙ্ক এটিএম কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ব্ল্যাকপুলেও একাই ছিলেন এলেনর। সারাদিন হোটেলের ঘরে বসে ইউটিউবে ভিডিয়ো দেখেছিলেন। পুলিশ বুঝতে পারে যে ভয়ঙ্কর অভিযোগগুলি করেছিলেন এলেনর, তার সবই ভুয়ো। তদন্তে আরও জানা যায়, নিজের দাবিকে সত্যি প্রমাণ করার জন্য তিনি নিজেই নিজেকে একটি হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেছিলেন। এলেনরকে সেই হাতুড়ি কিনতেও দেখা গিয়েছে দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে।
গত মঙ্গলবার রায় ঘোষণার সময় বিচারক বলেছেন, এলেনর উইলিয়ামস কেন এমনটা করেছেন, তার কোনও ব্যাখ্যা তাঁর কাছে নেই। তবে তাঁর অভিযোগগুলি যে সম্পূর্ণ কল্পকাহিনী সেই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এলেনর তাঁর কল্পকাহিনির জন্য এশিয় পুরুষদের বেছে নিয়েছিলেন, কারণ তিনি জানতেন সেই ক্ষেত্রে তাঁর কাহিনি জাতীয় স্তরে গুরুত্ব পাবে। ইতিমধ্যেই এই ধরণের আরও বেশ কিছু ঘটনা ঘটায়, তিনি মনে করেছিলেন এশি পুরুষদের দায়ী করলে আরও বেশি মানুষ তাঁর কাহিনি বিশ্বাস করবে। এলেনরের সাজা ঘোষণার পর, রমজান বলেছেন, “আমি জানি না আমার পরিবার এবং আমি কীভাবে এই ঘটনা থেকে মুক্তি পাব। একবার কাদা লেগে গিয়েছে, আমার আশঙ্কা, সেই দাগ উঠতে আরও সময় লাগবে।”
এলেনর উইলিয়ামস আদালতে একটি চিঠি লিখে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমি বলছি না যে আমি দোষী, কিন্তু আমি জানি আমি ভুল করেছি। তার জন্য আমি দুঃখিত। আমি কোনও সম্প্রদায়ের মধ্যে অশান্তি উস্কে দিতে চাইনি। ব্যারোতে যে ঝামেলা হয়েছে তাতে আমি ভেঙে পড়েছি। যদি আমি জানতাম আমার একটা পোস্ট থেকে এই পরিণতি হবে, তাহলে আমি কখনই এটা করতাম না।”