Pervez Musharraf: কার্গিল যুদ্ধের ‘মাস্টারমাইন্ড’ মুশারফের সঙ্গে কেমন ছিল ভারতের সম্পর্ক?

Relation With India: পাকিস্তানের এই স্বৈরাচারী শাসকের সঙ্গে শুরুর দিকে ভারতের সম্পর্ক মোটেই ভাল ছিল না। তবে পরবর্তীকালে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসেছিলেন তিনি।

Pervez Musharraf: কার্গিল যুদ্ধের ‘মাস্টারমাইন্ড’ মুশারফের সঙ্গে কেমন ছিল ভারতের সম্পর্ক?
ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ। (ফাইল ছবি)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 05, 2023 | 1:59 PM

নয়া দিল্লি: বছর খানেক অসুস্থ থাকার পর দুবাইয়ের এক হাসপাতালে রবিবার মৃত্যু হল পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফের। পাকিস্তানের প্রাক্তন সেনাপ্রধান মুশারফ সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছিলেন। ১৯৯৯ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে কার্গিল যুদ্ধ হয়েছিল। তখন পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের পদে ছিলেন মুশারফ। তাঁকে এই যুদ্ধের অন্যতম চক্রী বলে মনে করা হয়। তাঁর মদতেই পাক সেনা ও পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতে ঢুকে আক্রমণ চালায়। যদিও পরাক্রমী ভারতীয় সেনার যোগ্য জবাবে পিছু হঠে পাকিস্তান। দখলমুক্ত হয় কাশ্মীর। এর পর নির্বাচিত সরকাররে ফেলে দিয়ে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করেন মুশারফ। পাকিস্তানের এই স্বৈরাচারী শাসকের সঙ্গে শুরুর দিকে ভারতের সম্পর্ক মোটেই ভাল ছিল না। তবে পরবর্তীকালে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসেছিলেন তিনি। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের উন্নতির চেষ্টাও চালিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে যে খুব একটা সাফল্য এসেছিল তা বলা যায় না। কারণ তাঁর শাসনকালে কাশ্মীর জুড়ে অশান্তি তেমন কমেনি। বরং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদতের অভিযোগ ছিল তাঁরই বিরুদ্ধে।

১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন মুশারফ। ১৯৯৮ সালে মুশারফকে পাক সেনাবাহিনীর প্রধান হিসাবে নিয়োগ করেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। যা নিয়েও হয়েছিল বিতর্ক। অভিযোগ ছিল, সিনিয়র অফিসারদের টপকেই তাঁকে পাক সেনাপ্রধানের পদে বসানো হয়েছিল। কিন্তু পাক সেনাপ্রধানের মসনদে বসেই ভারতের বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করেন মুশারফ। ১৯৯৯ সালের শুরুতেই পাকিস্তানের লাহোরে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বৈঠক হয়েছিল। বিবাদমান দুই দেশের কূটনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়নে লাহোর চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছিল। এই প্রয়াস বেশি দিন স্থায়ী হয়নি পাক সেনাবাহিনীর উস্কানিমূলক আচরণে। মে মাসেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শুরু হয় কার্গিল যুদ্ধ। পাক সেনাবাহিনী এবং পাক মদত পুষ্ট জঙ্গিরা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতে ঢুকেছিল। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই পাক সেনাবাহিনীর চক্রান্ত ব্যর্থ করে ভারতীয় সেনা। মুশারফের পরিকল্পনাতেই পাক সেনার এই হামলা বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

কার্গিল হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে ব্যাপক অবনতি হয়। সে বছরই অক্টোবরে নওয়াজ শরিফের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে মুশারফ। ২০০১ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন মুশারফ। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। এই সময়কালে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির চেষ্টাও করেছিলেন মুশারফ।

কার্গিল যুদ্ধের আঘাত সামলে ফের প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির কূটনৈতিক প্রয়াস শুরু হয় অটল বিহারী বাজপেয়ীর আমলে। আগ্রায় বৈঠক হয় পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফের সঙ্গে। যদি কাশ্মীর নিয়ে সহমতে পৌঁছতে পারেনি দুই পক্ষই। সে বছরই লস্কর-ই-তৈবা এবং জৈশ-ই-মহম্মদের জঙ্গিরা ভারতের সংসদে হামলা চালায় এবং ১৪ জনের মৃত্যু হয়। এর পর নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারত-পাক সেনার গুলির লড়াই লেগেই থাকত। আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপে ২০০২ সালের অক্টোবরে তা বন্ধ হয়।

পাকিস্তানের মাটিতে ভারতবিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠীদের মদতের অভিযোগ বরাবরই করে এসেছে ভারত। ভারতের চাপে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলেন মুশারফ। যদিও কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ বলেও দাবিও করেছিলেন। মুশারফের সময়েই পাকিস্তানে ভারত বিরোধী জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্ত হয়েছিল বলে মত বিশেষজ্ঞদের। ২০০৪ সালে সার্ক সামিটে সরাসরি কথা হয়েছিল বাজপেয়ী ও মুশারফের। এর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মনমোহন সিং। মনমোহনের আমলেও মুশারফের পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখার প্রসায় চালানো হয়েছিল। কূটনৈতিক স্তরে তা বজায় থাকলেও ভারত বিরোধী পাক জঙ্গিদের কার্যকলাপ বন্ধ হয়নি। ২০০৭ সালেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলাচলকারী সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ৬৮ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি প্রচুর মানুষ আহত হন।

প্রেসিডেন্ট থাকার সময় বিশেষ ক্ষমতা বলে সাংবিধানিক জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন মুশারফ। ২০০৮ সালে ইমপিচমেন্ট এড়াতে ইস্তফা দেন তিনি। ২০১৪ সালে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের চার্জগঠিত হয়। ২০১৯ সালে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে ফাঁসির আদেশ দেয় পাক আদালত। যদিও ২০১৬ সাল থেকেই তিনি পাকিস্তানের বাইরে। অবশেষে দুবাইয়ে মৃত্যু হল তাঁর।