ব্যস্ত সুয়েজের স্তব্ধতা কাটিয়ে কীভাবে ভাসল এমভি এভার গিভেন?

মিশর (Egypt) সরকার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে মঙ্গলবারের মধ্যে সুয়েজের(Suez Canal) জলপথ পরিস্কার না হলে, জাহাজ থেকে সমগ্র মালপত্র নামিয়ে ওজন কমানো হবে।

ব্যস্ত সুয়েজের স্তব্ধতা কাটিয়ে কীভাবে ভাসল এমভি এভার গিভেন?
আটকে থাকা জাহাজটিকে টানছে টাগবোট। ছবি:PTI
Follow Us:
| Updated on: Apr 04, 2021 | 6:40 PM

মিশর: এক-দু কোটি নয়, প্রতিদিনই প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছিল মিশর প্রশাসনকে। কারণ সুয়েজের পথ আটকে দাঁড়িয়েছিল এমভি এভার গিভেন (MV Ever Given)। চিন থেকে নেদারল্যান্ড যাওয়ার পথে গত ২৩ মার্চ সুয়েজ খালে আটকে যায় ওই জাহাজটি। এমনভাবেই আটকে পড়ে জাহাজটি যে সম্পূর্ণ জলপথই আটকে যায়। দীর্ঘ ছয়দিনের চেষ্টার পর অবশেষে কিছুটা ভেসে ওঠে এভার গিভেন। মালপত্র নামিয়ে কমানো হয় জাহাজের ভার, টাগবোট(Tugboat)-র সাহায্যে তাকে টেনে সোজা করা হয়। তারপরই জাহাজ-জট কাটে ওই খাল পথে।

কীভাবে উদ্ধার করা হল এমভি এভার গিভেনকে?

চিন থেকে নেদারল্যান্ড যাওয়ার পথে ধূলিঝড়ে গত ২৩ মার্চ সুয়েজ খাল দিয়ে যাওয়ার সময় ধূলিঝড়ের মুখে পড়েছিল ৪০০ মিটার দীর্ঘ এই জাহাজটি। টাল সামলাতে না পেরে প্রায় উলটে যায় সেই জাহাজ, বহু চেষ্টা করে যখন তাঁকে সোজা করা হয়, তখন দেখা যায় সুয়েজ খালে আড়াআড়িভাবে অবস্থান করছে জাহাজটি। কোনওদিক থেকেই যাওয়ার পথ নেই বাকি জাহাজের। এই অবস্থাতেই আটকে থাকে জাহাজটি। প্রথমে বোঝা না গেলেও পরে বোঝা যায়, বেশ গভীরে গেথে গিয়েছে জাহাজের তলদেশ।

জলপথ মুক্ত করতে দ্রুত ডেজিং, অর্থাৎ বালি কাটার কাজ শুরু হয়। তবুও খুব একটা সুবিধা করা যাচ্ছিল না। এদিকে, প্রায় ৪০০ জাহাজের লম্বা লাইন পড়ে যায় সুয়েজ খালে। এশিয়া থেকে ইউরোপের মধ্যে জলপথে বাণিজ্য সম্পূর্ণ স্থগিত হয়ে যাওয়ায় বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ে একাধিক বাণিজ্য সংস্থা। ক্ষুব্ধ মিশর প্রশাসন জানায় আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জলপথ স্বাভাবিক না হলে আটকে থাকা জাহাজ থেকে সমস্ত মালপত্র নামিয়ে দেওয়া হবে, যাতে জাহাজের ভর কমে যায়।

Suez Canal

অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ।

তবে লক্ষ-কোটি টাকার ক্ষতির আগেই চলতি সপ্তাহে সামান্য ভাসতে শুরু করে এমভি এভার গিভেন। এরপরই আনা হয় টাগবোট। অল্প অল্প করে জাহাজের মালপত্র নামিয়ে ওজন কমানো হয়। ড্রেজারের সাহায্যে জমে থাকা পলি ও বালি কেটে বের করা হয়। দড়ি বেঁধে কিছুটা টানা হয় জাহাজটিকে। ব্যাস, তাতেই সমস্যার সমাধান হয়। সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৪২ মিনিটে ফের ভাসতে থাকে এমভি এভার গিভেন। আগের পথেই এগোতে থাকে জাহাজটি।

সুয়েজের উৎপত্তি-

একটি জাহাজ আটকে পড়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছিল দুই মহাদেশ। কারণ মানুষের তৈরি বিশ্বের ব্যস্ততম খাল এই সুয়েজ খাল। ভূমধ্যসাগর থেকে লোহিত সাগরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতেই তৈরি করা হয়েছিল এই খালটি। দুই মহাদেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে ১৮৫৯ সালে এই খাল তৈরির কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কাজ চলার পর ১৮৬৯ সালে এই খাল তৈরি হয়। আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ১৮৬৯ সালের ১৭ নভেম্বর।

কিন্তু কেন প্রয়োজন পড়েছিল এই খালের?

সুয়েজ খাল তৈরির আগে ইউরোপ থেকে এশিয়ায় জলপথে আসতে গেলে উত্তর আটলান্টিক সাগরের পথে আফ্রিকা হয়ে ভারত মহাসাগরে আসতে হত। সেখান থেকেই এশিয়ায় পৌঁছানো যেত। ৮ হাজার ৯০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে আসতে সময় লেগে যেত ৮ থেকে ১০ দিন। তবে সুয়েজ তৈরি হয়ে যাওয়ায় আট হাজার কিলোমিটার কমে দাঁড়ায় ১৯৩ কিলোমিটার। ৮-১০ দিনের বদলে এক দিনেই পার করা যেত ভূমধ্যসাগর থেকে লোহিত সাগরের যাত্রা।

সুয়েজ নিয়ে এত তোলপাড় কেন?

সুয়েজ খালে জাহাজ আটকে থাকার কারণে ইউরোপ থেকে এশিয়ায় ন্যাপথা(Naphtha) ও জ্বালানি তেল(Fuel Oil)-র রপ্তানিতে বড় সঙ্কট দেখা দেয়। জ্বালানিবাহী জাহাজের পাশাপাশি আটকে ছিল তরল প্রাকৃতিক গ্যাস বোঝাই জাহাজও। প্রথমে আশঙ্কা করা হয়েছিল যে, খালপথ আগের মতো স্বাভাবিক হতে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় লেগে যাবে। যদি সত্যিই দুই সপ্তাহের জন্য এই খাল বন্ধ থাকত, তবে ইউরোপের বাজারে এর ব্যপক প্রভাব পড়ত। প্রায় ১০ লাখ টন এলএনজি(LNG)-র ঘাটতি দেখা যেত। ফলে সমগ্র বিশ্বেই এর প্রভাব পড়ত । ইতিমধ্যেই এশিয়া ও ইউরোপের পেট্রপণ্যের মূল্যে এর প্রভাব পড়েছিল।

সুয়েজের পথ খালি হতেই আটকে থাকা ৪০০-রও বেশি জাহাজ ফের নিজেদের গন্তব্যের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। ধীরে ধীরে সচল হয়ে উঠছে পৃথিবীর ব্যস্ততম খাল সুয়েজ।

আরও পড়ুন: কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গেল আকাশ, হাসপাতালের আইসিসিইউ ওয়ার্ডে বিধ্বংসী আগুন