১০০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক বাংলাদেশি সাংসদ হত্যার মাস্টারমাইন্ড শাহীন
murder of Bangladeshi MP in Kolkata: কলকাতার কাছে, ব্যারাকপুরের এক ফ্ল্যাটে খুন হয়েছেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাংসদ, আনোয়ারুল আজীম। এই হত্যা রহস্যের সমাধান হয়ে গিয়েছে বলে দাবি বাংলাদেশ পুলিশের। আনোয়ারুল আজীমের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের পরিচয়ও প্রকাশ করেছে তারা। মোট ৬ জন অংশ নিয়েছিল এই হত্যার ষড়যন্ত্রে।
ঢাকা: কলকাতার নিউটাউনের এক ফ্ল্যাটে খুন হয়েছেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাংসদ, আনোয়ারুল আজীম। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে দুই বাংলায়। তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন বিস্ফোরক তথ্য বেরিয়ে আসছে। এই হত্যা রহস্যের সমাধান হয়ে গিয়েছে বলে দাবি বাংলাদেশ পুলিশের। আনোয়ারুল আজীমের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের পরিচয়ও প্রকাশ করেছে তারা। মোট ৬ জন অংশ নিয়েছিল এই হত্যার ষড়যন্ত্রে। মূল পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড ছিল আক্তারুজ্জামান শাহীন নামে এক ব্যক্তি। কে সে? অগাধ সম্পত্তির মালিক শাহীন এক রহস্যময় চরিত্র।
জানা গিয়েছে, শাহীন, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র শহিদুল ইসলাম সেলিমের ছোট ভাই। হলেন নিহত আনোয়ারুল আজীমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল সে। কিন্তু, ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে আনোয়ারুল আজীমের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বেধেছিল। তার জেরেই এই খুন। তার আগে, সৈয়দ আমানুল্লাহ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে এই হত্যার পরিকল্পনা করেছিল শাহীন। সম্পর্কে আমানুল্লাহ তার বেয়াই হয়। তাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েই তিনি ভারতে এসেছিলেন বাংলাদেশি সাংসদ। বাংলাদেশি পুলিশ আরও জানিয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে শাহীন ও আমানুল্লাহর।
নিউটাউনের সঞ্জীবনী গার্ডেনের যে ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করা হয়েছে, সেটারও মালিক শাহীনই। তবে ফ্ল্যাটটা সে বেনামে কিনেছিল। ফ্ল্যাটের মালিক হিসেবে সন্দীপ রায় নামে এক ব্যক্তির নাম ব্যবহার করেছিল সে। ব্যারাকপুরের ফ্ল্যাটটি থেকেই চোরাচালান ও অপরাধ জগতের কর্মকাণ্ড চালাত শাহীন। হত্যার পর শাহীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে, বাংলাদেশে ফিরেছিল তার বেয়াই সৈয়দ আমানুল্লাহ। তাকে ইতিমধ্য়ে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশি পুলিশ। কিন্তু, কে এই শাহীন?
শাহীনরা তিন ভাই ও দুই বোন। তার মেজো ভাই মনিরুজ্জামান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন। দেড় দশক আগে, মেজো ভাইয়ের হাত ধরেই আমেরিকা গিয়েছিল শাহীন। আর তারপরই অপরাধ জগতে পা রেখেছিল সে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও, নিয়মিত সে দেশে আসত। জড়িয়ে পড়েছিল চোরাচালানে। এই অবৈধ ব্যবসার জোরেই বাংলাদেশ ও ভারতে বিপুল সম্পত্তি করেছে সে। তাদের কোটচাঁদপুরের গ্রামের বাড়ি এখন বিশাল বাগানবাড়িতে পরিণত হয়েছে। বাড়ির চারপাশে উঁচু প্রাচীর। ২৪ ঘণ্টা বাড়ির সামনে পাহারা থাকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, সেই বাড়িতে প্রায়ই অতিথি হিসেবে পা পড়ত পদস্থ পুলিশ কর্তা-সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির।
বস্তুত, কোটচাঁদপুরে শাহীনই ছিল শেষ কথা। সে নিজেই এলাকায় সালিশি সভা বসাত। তার রায়ই ছিল চূড়ান্ত। কেউ তার বিরোধিতা করলে, তাকে পুলিশ দিয়ে হেনস্থা করা হত বলেও অভিযোগ রয়েছে। দারুণ প্রভাবশালী। তাই, তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেও কোনও লাভ হত না। কোটচাঁদপুর এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত দেড় দশকে শাহীন সম্পদের পাহাড় গড়েছে। এই বিপুল সম্পদের উৎস কী, তা জানা যায় না। তার কোনও বৈধ ব্যবসারও খোঁজ পাওয়া যায় না। অথচ, এলাকায় সে দু’হাতে তিনি পয়সা খরচ করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, তার মোট সম্পত্তি একশ কোটি টাকার বেশি হবে।
সাংসদ খুনে শাহীনের নাম উঠে আসায় অবাক নন কোটচাঁদপুরের মানুষ। বছর তিনেক আগে, ব্যাটারিচালিত যানবাহনের স্ট্যান্ড দখল করা নিয়ে, তাঁর অনুসারীদের নিজেদের মধ্য়েই মারামারি হয়েছিল। সেই কাণ্ডে শাহীনের নামেও পুলিশে অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু, তাতেও কোনও লাভ হয়নি। আখতারুজ্জামান শাহীনের বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই বলে, তাকে ছেড়ে দিয়েছিল কোটচাঁদপুর থানা।