খাবার শেষ, মাথার উপরে ছাদও নেই! স্থানীয়দের সাহায্যেই কোনওমতে বেঁচে রয়েছে তালিবানি যোদ্ধারা

Taliban surviving on donation of Locals: আফগানিস্তানের বড় বড় শহরের বাইরে যে তালিবানি যোদ্ধারা রয়েছেন, তাদের কাছে খুব সামান্যই খাবার পড়ে রয়েছে। মাথার উপরে ছাদও জুটছে না। কোনও ভাঙাচোরা বাড়ি পেলে সেখানে, নয়তো নিজেদের গাড়িতে শুয়েই রাত কাটাচ্ছে তালিবানিরা।

খাবার শেষ, মাথার উপরে ছাদও নেই! স্থানীয়দের সাহায্যেই কোনওমতে বেঁচে রয়েছে তালিবানি যোদ্ধারা
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 16, 2021 | 12:14 PM

কাবুল: ক্ষমতা দখলের পর থেকেই আর্থিক কষ্টের মুখে পড়েছে তালিবান (Taliban)। বিদেশী অর্থ সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরই ব্য়াঙ্ক থেকে টাকা তোলার উর্ধ্বসীমা বেধে দেওয়া হলেও মিটছে না সমস্যা। তালিব বাহিনী কতটা আর্থিক সমস্যায় রয়েছে, সেই সম্পর্কেই এ বার জানা গেল আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য।

নিউইয়র্ক পোস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আফগানিস্তান (Afghanistan) দখলের জন্য অস্ত্র কিনতেই নিজেদের ভাঁড়ার খালি করে ফেলেছে তালিবানরা। শীর্ষ মহল থেকেও বিগত কয়েক মাস ধরে তারা কোনও অর্থ সাহায্য পাচ্ছে না। সেই কারণেই এখন সরকার পরিচালনের জন্য যে বিদেশী অনুদান পাচ্ছে, তা খরচ করেই জীবনযাপন করছে তালিবান যোদ্ধারা।

যে কোনও দেশ পরিচালনের জন্যই প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ অর্থের। তবে যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের মোট খরচের একটি বড় অংশই আসত বিদেশি সাহায্য থেকে। তবে গত ১৫ সেপ্টেম্বর তালিবান আফগানিস্তান দখল নেওয়ার পরই সেই অর্থ সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে প্রায় সমস্ত দেশই।

তালিবান বাহিনী আফগানিস্তান দখলের পরই আমেরিকা ও সঙ্গী সাতটি দেশ  মিলিতভাবে আফগানিস্তানের অ্যাকাউন্টগুলি বন্ধ করে সিদ্ধান্ত নেয়। আফগানিস্তান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পদ পড়ে রয়েছে বিভিন্ন দেশে। ইতিমধ্যেই ওয়াশিংটনের তরফে আফগানিস্তানের অর্থভাণ্ডারে তালিবান যাতে হাত লাগাতে না পারে, তার জন্য অ্যাকউন্টের গতিবিধি বন্ধ করে দিয়েছে। নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ দ্বারাই এতদিন আফগানিস্তানের অর্থভাণ্ডার নিয়ন্ত্রিত হত। আন্তর্জাতিক মনিটরি ফান্ডের তরফেও ৪ কোটি ৪০ লক্ষ ডলারের তহবিলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তালিবানি অপব্যবহার রুখতে।

এই পরিস্থিতিতে চরম আর্থিক সঙ্কট দেখা গিয়েছে আফগানিস্তানে। হু হু করে দাম বাড়ছে জিনিসপত্রের। চলতি সপ্তাহেই রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশই দারিদ্র সীমার নীচে চলে যাবে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, আফগানিস্তানের সঙ্গে যে সব দেশে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল অর্থাৎ যে সমস্ত দেশের সঙ্গে আমদানি- রফতানি চলত, তাদের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর।

নিউ ইয়র্ক পোস্টের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আফগানিস্তানের বড় বড় শহরের বাইরে যে তালিবানি যোদ্ধারা রয়েছেন, তাদের কাছে খুব সামান্যই খাবার পড়ে রয়েছে। মাথার উপরে ছাদও জুটছে না। কোনও ভাঙাচোরা বাড়ি পেলে সেখানে, নয়তো নিজেদের গাড়িতে শুয়েই রাত কাটাচ্ছে তালিবানিরা। তাদের দুর্দশা দেখে স্থানীয় বাসিন্দারাও খাবার দিয়ে সাহায্য করছে।

আফগানিস্তানের ব্য়াঙ্কগুলিতেও নগদ টাকার অভাব থাকায় তালিবানরা প্রতি সপ্তাহে ২০০ ডলারের বেশি টাকা তোলা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। দূর দূরান্ত থেকে বাসিন্দারা দীর্ঘক্ষণ ব্যাঙ্কের বাইরে লাইন দিয়েও টাকা পাচ্ছেন না অধিকাংশ সময়েই। ভাঁড়ার শূন্য হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে অধিকাংশ ব্যাঙ্কই। মঙ্গলবারই রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে জানানো হয়েছে, ৪০ লক্ষেরও বেশি আফগানবাসী চরম খাদ্য সঙ্কটের মুখে পড়েছে।

সম্প্রতি আফগানিস্তানের সাধারণ নাগরিকদের সাহায্যের জন্য ৬ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর কথা বলেছে আমেরিকা। আমেরিকার সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিনকিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এই ত্রাণ সামগ্রী বেসরকারি সংস্থা এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের হাত দিয়ে আফগান নাগরিকদের কাছে সরাসরি পৌঁছে দেওয়া হবে। তালিবানের হাতে যাতে এই সাহায্য না পৌঁছয়, তাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। আপাতত চিনের অর্থসাহায্যের উপরই বেঁচে রয়েছে তালিবানরা।

আরও পড়ুন: আফগানিস্তান দখলে কার ভূমিকা বেশি? শাসন শুরুর আগেই ক্ষমতা নিয়ে কাড়াকাড়ি তালিবানের অন্দরে