ইমরানের হঠকারি সিদ্ধান্তে ক্ষোভ দেশের অন্দরেই, ‘বলির পাঁঠা’ হতে রাজি নন কূটনীতিবিদরা

বিদেশ মন্ত্রকের বিদ্রোহের সুরে চিন্তিত শাহ মেহমুদ কুরেশী। এই নিয়ে বৃহস্পতিবার শাহ মেহমুদ কুরেশী একটি বৈঠকও করেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই ঘণ্টার এই বৈঠকে শাহ সকলকে প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বক্তব্য়ের অর্থ বোঝানোর চেষ্টা করেন।

ইমরানের হঠকারি সিদ্ধান্তে ক্ষোভ দেশের অন্দরেই, 'বলির পাঁঠা' হতে রাজি নন কূটনীতিবিদরা
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 07, 2021 | 5:30 PM

জ্যোতির্ময় রায় : আপাতত বিদ্রোহের মেজাজেই রয়েছেন পাকিস্তানের কূটনীতিকরা। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রক এবং কূটনীতিকরা প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের একটি বিতর্কিত মন্তব্যে চরম বিরক্ত। ক্ষুব্ধ ইমরান খান সোমবার সৌদি আরবে অবস্থিত পুরো পাকিস্তানি মিশনের সদস্যদের দেশে ফেরার নির্দেশ দেন। শুধু তাই নয়, ইমরান খান দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য একটি অনুষ্ঠানে অন্যান্য দেশে পাকিস্তানি কূটনীতিবিদদের সতর্কও করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সতর্কতা এখন বিদেশ মন্ত্রকের সকল কর্মকর্তাদের চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইমরানের ক্ষুব্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ ৭ মে, শুক্রবার ইমরানের সৌদি আরব সফর ঘিরে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সেনাপ্রধান বাজওয়া এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গেই যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাজওয়া সোমবার অর্থাৎ 3 মে আগেভাগেই রিয়াদে পৌঁছে যায় এবং চার দিন পর ইমরানের অনুষ্ঠানসূচির পরিকল্পনা হয়। পাকিস্তানি গণমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, সৌদি যুবরাজ ইমরান খানের আগে বাজওয়াকে ডাকেন এবং তাই তিনি আগে চলে যান।

তবে বাজওয়া রিয়াদে যাওয়ার পর পরই ইমরান একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন যে, সৌদিতে অবস্থানরত পাকিস্তানিরা তাদের দূতাবাসের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেছে। তাই সমস্ত পাকিস্তানি কর্মীদের অবিলম্বে দেশে ফিরে আসতে বলা হচ্ছে। আমাদের নাগরিকরা অন্য দেশে অর্থ প্রেরণ করে। আমি অনেক দূতাবাস সম্পর্কে দুর্নীতি ও কুৎসার অভিযোগ পেয়েছি। আমি কোনও মূল্যে এ জাতীয় অভিযোগ বা লোকজনদের বরদাস্ত করব না।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের এই বক্তব্য ও ব্যবহারে পররাষ্ট্র মন্ত্রকের সমস্ত কর্মী এবং অন্যান্য দেশে অবস্থিত পাকিস্তানি কূটনীতিকরা ক্ষুব্ধ হন। এই নিয়ে কূটনীতিকদের একটি দল পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশী এবং পররাষ্ট্রসচিবের সাথে সাক্ষাৎও করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে। সূত্র অনুযায়ী, একজন কূটনীতিক পররাষ্ট্র সচিবকে বলেন ” আমরা বলির পাঠা হতে প্রস্তুত নই”।

এদিকে, বিদেশ মন্ত্রকের বিদ্রোহের সুরে চিন্তিত শাহ মেহমুদ কুরেশী। এই নিয়ে বৃহস্পতিবার শাহ মেহমুদ কুরেশী একটি বৈঠকও করেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই ঘণ্টার এই বৈঠকে শাহ সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কর্মকর্তারা জানান যে, প্রধানমন্ত্রী যদি সাধারণ মানুষের সামনে এই জাতীয় কথা বলেন, তবে তা কর্মকর্তাদেরই ক্ষতি করবে এবং দেশের ভবিষ্যতের জন্য এটি বিপজ্জনকও হয়ে উঠতে পারে।

পাকিস্তানের অনেক প্রাক্তন কূটনীতিক ইমরানের এই আচরণের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন। প্রাক্তন পররাষ্ট্রসচিব তেহমিনা জনজুয়া বলেন, “একজন প্রধানমন্ত্রীর উচিত তিনি কোথায় দাঁড়িয়ে কী বিষয়ে কী কথা বলছেন, সে বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত”। আরেকজন কূটনীতিক বলেন, “ইমরানের এই বক্তব্যে এখন অবাক হওয়ার কথা নয়, তিনি নিজেও জানেন না তিনি কোথায় এবং কি কথা বলছেন”।

উল্লেখ্য, পাকিস্তান প্রায় দেউলিয়া হওয়ার পথে । সম্প্রতি ২ বিলিয়ন ঋণ পরিশোধের কথা ছিল পাকিস্তানের, সেই সময়সীমা সংযুক্ত আরব আমিরশাহি পিছিয়ে দেওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পায় পাকিস্তান।

আরও পড়ুন: ব্যাগেই লুকিয়ে এনেছিল বন্দুক, ক্লাস শুরু হতেই সহপাঠীদের উপর গুলি চালাল ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী, আহত ৩