‘একটাই শর্ত, গোটা শরীর ঢেকে রাখতে হবে’, তালিবানের চোখে চোখ রেখে সাকিনার সাক্ষাৎকার

ইসলাম ঘরানায় মহিলাদের পোশাক নিয়ে আরও অনেক ফতেয়া শুনিয়েছিলেন ওই অফিসার। সাকিনারও প্রশ্ন থেমে থাকেনি। আফগানিস্তানের (Afghanistan) ভবিষ্যৎ নিয়েও একাধিক প্রশ্ন করেন সাকিনা

‘একটাই শর্ত, গোটা শরীর ঢেকে রাখতে হবে’, তালিবানের চোখে চোখ রেখে সাকিনার সাক্ষাৎকার
তালিবানের সঙ্গে সাংবাদিক সাকিনা আমিরির সাক্ষাৎকার নেওয়ার মুহূর্ত। ছবি, টুইটার
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 20, 2021 | 11:30 AM

কাবুল: খাওয়া-পরা জীবনের একমাত্র চাহিদা হতে পারে না। আনন্দই জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। টুইটারে এভাবেই মহিলাদের ডানা মেলার স্বপ্ন প্রতিদিন দেখান আফগান সাংবাদিক সাকিনা আমিরি। তালিবানি শাসনের বিরুদ্ধে বরাবরই মুখর, কিন্তু ক্ষমতায় তালিবান আসবে, ঘুণাক্ষরে ভাবতে পারেননি সাকিনা। গত ১৫ অগস্ট তালিবানের কাবুল দখলের পর অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে যায় সাকিনার কেরিয়ারে। চোখে চোখ রেখে তালিবানের সঙ্গে সাক্ষাৎকার নিয়ে রাতরাতি লাইমলাইটে চলে আসেন  ‘এটিলাট রোজ’ সংবাদপত্রের সাংবাদিক সাকিনা আমিরি।

সাকিনা জানতেন, প্রশ্ন এদিক-ওদিক হলে তালিবান জঙ্গিদের কাঁধে উঁচিয়ে থাকা বন্দুকের নল থেকে গুলি বেরনো ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। গত মঙ্গলবার রাস্তায় দাঁড়িয়েই তালিবানের এক শীর্ষ অফিসারের সাক্ষাৎকার নেন তিনি। ওই অফিসারের বাঁ দিকে রকেট লঞ্চার, ডান দিকে একে-৪৭ নিয়ে দাঁড়িয়ে দুই জঙ্গি। যেন মৃত্যুর গুহায় দাঁড়িয়ে সাকিনা। চাইলে টুক করে জীবনটা ছিনিয়ে নিতে পারে তালিবান। এই পরিস্থিতিতে চোখে চোখ রেখে সাকিনা প্রশ্ন করেছিলেন, মহিলাদের কাজ করা নিয়ে আপনাদের কী অবস্থান?

প্রশ্নের শুনে ওই অফিসারের জবাব, “আপনি যে ভাবে পোশাক পরেছেন, এটা আমরা অনুমতি দিচ্ছি না। গোটা শরীর আপনার ঢাকা উচিত ছিল। মুখ যেন না দেখা যায় আপনার।” সাকিনার পোশাক নিয়ে মন্তব্যে লুকিয়ে ছিল মহিলাদের নিয়ে তালিবান এই মুহূর্তে কী ভাবচ্ছে। এরপর ওই অফিসার বলেন, “মহিলাদের কাজ করা নিয়ে আমাদের কোনও অসুবিধা নেই। একটাই শর্ত, গোটা শরীর ঢেকে রাখতে হবে।” 

ইসলাম ঘরানায় মহিলাদের পোশাক নিয়ে আরও অনেক ফতেয়া শুনিয়েছিলেন ওই অফিসার। সাকিনারও প্রশ্ন থেমে থাকেনি। আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়েও একাধিক প্রশ্ন করেন সাকিনা। সব প্রশ্নের উত্তর যেন মুখোশ জবাব দিচ্ছে। কারণ সেই সময় কোনও এক প্রান্তে আফগানিস্তানের সংবাদ মাধ্যম আরটিএ-এর সাংবাদিক তালিবানের হাতে মার খেয়ে বলছেন, “তালিবানের মুখ এবং কাজে বিস্তর ফারাক। খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বেধরক মার খাই তালিবানের হাতে। ক্যামেরাও ছিনিয়ে নেয়।” উল্লেখ্য, ক্ষমতায় আসতেই তালিবান সাংবাদিক বৈঠক করে জানায়, সংবাদ মাধ্যমের কাজে বাধা দেবে না তাদের সরকার। সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা দিতে তারা বদ্ধপরিকর।

এই মুহূর্তে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে আফগানিস্তানের সংবাদ মাধ্যমগুলি। মহিলা সাংবাদিক হলে প্রতিবন্ধকতা আরও বেশি। তবুও সাকিনার মতো মহিলা সাংবাদিক টোলো নিউজের জ়াহরা রাহিমি, হাসিবা আত্তকপল, আরিয়ানা টিভির নাসরিন শিরজ়াদরা তালিবানকে প্রশ্ন করেই চলেছেন। তবে, কোন প্রশ্নে হঠাৎ করে গুলির উত্তর আসে, তার অপেক্ষায় রয়েছেন সাকিনারা। আরও পড়ুন- কখন আমাকে মারবে, তাদের অপেক্ষায় বসে আছি: আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা মেয়র