Solar Wild Dropping Satellites: সূর্যদেবতার অভিশাপ! লাফিয়ে লাফিয়ে পৃথিবীর দিকে নেমে আসছে কৃত্রিম উপগ্রহগুলি

Solar Wild Dropping Satellites: সূর্যের অস্বাভাবিক আচরণের জন্য বড় বিপদেরপ মুখে মানব সভ্যতা। লাফিয়ে লাফিয়ে পৃথিবীর দিকে নেমে আসছে কৃত্রিম উপগ্রহগুলি, জানিয়েছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির সোয়ার্ম নক্ষত্রপুঞ্জ অপারেটররা।

Solar Wild Dropping Satellites: সূর্যদেবতার অভিশাপ! লাফিয়ে লাফিয়ে পৃথিবীর দিকে নেমে আসছে কৃত্রিম উপগ্রহগুলি
সূর্যের আচরণ অস্বাভাবিক, বিপদে মানব সভ্যতা (ছবি সৌজন্য - নাসা)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 03, 2022 | 9:56 PM

প্যারিস: সূর্যই গোটা পৃথিবীর শক্তির উৎস। বহু ধর্মেই সূর্যকে দেবতা জ্ঞানে পুজো করা হয়। তবে, ইদানিং সূর্যে বেশ কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে। যেন নেমে আসছে ‘সূর্যদেবতার অভিশাপ’! জটিল পদার্থবিদ্যার রহস্য এখনও বিজ্ঞানীরা পুরোপুরি বুঝে উঠতে পরেননি। তবে, তাঁরা জানিয়েছেন সূর্যের এই অস্বাভাবিক আচরণের ফলে ঘটে যেতে পারে বড় বিপদ। নষ্ট হয়ে যেতে পারে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণকারী সকল কৃত্রিম উপগ্রহগুলি। ক্রমশ গতি হারিয়ে বৃষ্টির মতো পৃথিবীর বুকে ঝড়ে পড়তে পারে। বর্তমান যুগে, যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সামরিক ব্যবস্থা পর্যন্ত – পুরোপুরি এই উপগ্রহগুলির উপরই নির্ভরশীল। কাজেই, বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছে মানব সভ্যতা।

বিষয়টি প্রথম নজরে এসেছিল ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির সোয়ার্ম নক্ষত্রপুঞ্জ অপারেটরদের। গত বছরের শেষ দিকে, তাঁরা লক্ষ্য করেছিলেন, আগের থেকে প্রায় দশগুণ দ্রুত গতিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের দিকে নেমে আসছে পৃথিবীতে প্রদক্ষীণকারী কৃত্রিম উপগ্রহগুলি। একটি-দুটি নয়, সকল কৃত্রিম উপগ্রহের ক্ষেত্রেই এই অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল।

সোয়ার্ম মিশন ম্যানেজার আনজা স্ট্রোমে জনিয়েছেন, আমাদের গ্রহের কাছাকাছি যে উপগ্রহগুলি রয়েছে, সেগুলির উপর সর্বদাই বায়ুমণ্ডলের টান থাকে। যার জেরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি কৃত্রিম উপগ্রহই গতি হারায়। একসময় সেগুলি পৃথিবীস বায়ুমণ্ডলের ভিতর ঢুকে পড়ে। এরপরই, সেগুলি পুড়ে টুকরো টুকরো হয়ে পৃথিবীর বুকে ঝরে পড়ে। গত পাঁচ-ছয় বছরে, দেখা গিয়েছে, উপগ্রহগুলি প্রতি বছর প্রায় আড়াই কিলোমিটার করে পৃথিবীর দিকে নেমে আসে। কিন্তু ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে গত কয়েক মাসের মধ্য়েই প্রতিটি উপগ্রহ প্রায় ২০ কিলোমিটার নিচে নেমে এসেছে।

তবে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরেই একটি সৌরচক্র শেষ হয়ে নতুন সৌর চক্র শুরু হয়েছে। সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্রের নির্দিষ্ট কিছু পরিবর্তন চক্রাকারে চলতে থাকে। একটি চক্র সম্পূর্ণ হতে সময় লাগে পৃথিবীর হিসেবে ১১ বছর। নতুন চক্র শুরু হওয়ার সময় পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়ে উপগ্রহগুলি। গত ডিসেম্বরে বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন, সেই কারণেই হয়ত এমন অস্বাভাবিকভাবে উচ্চতা কমেছে উপগ্রহগুলির। তবে, ডিসেম্বর থেকে যেভাবে উপগ্রহগুলি পৃথিবীর বুকে ঝরে পড়ার সম্ভাবনা বেড়েছে, তাতে এখন আর আগের তত্ত্বকে সঠিক বলে মনে করা যাচ্ছে না।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কৃত্রিম উপগ্রহগুলি, কতটা নিচে নেমে আসবে, তা নির্ভর করে সৌর কার্যকলাপের উপর। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, গোটা সৌর চক্র জুড়ে যে পরিমাণ সৌর বায়ু নির্গত হয়, তার উপর। ২০১৯-এর ডিসেম্বরে শেষ হওয়া শেষ সৌরচক্রটি ‘অস্বাভাবিক’ ছিল বলে দাবি করেছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। নতুন সৌর চক্রটিও শুরু থেকেই অদ্ভুত আচরণ করছে। অন্যান্যবারে থেকে করোনাল মাস ইজেকশন, অর্থাৎ সূর্যের বহির্ভাগ থেকে আরও বেশি করে প্লাজমা এবং চৌম্বকক্ষেত্র ছিটকে বের হচ্ছে। সৌর শিখাগুলি অন্যান্যবারের থেকে আরও অনেক বেশি সৌর বায়ু প্রবাহিত করছে।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে এর স্পষ্ট প্রভাব পড়ছে। স্ট্রোম জানিয়েছেন, কেন সূর্য এরকম আচরণ করছে তা বিজ্ঞানীরা এখনও জানতে পারেননি। তবে বিজ্ঞানীরা জানেন, বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগের সঙ্গে সৌর বায়ুর মিশলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। ফলে, উপগ্রহগুলি বায়ুমণ্ডলের আরও কাছাকাছি এসে পড়ে। যা, তাদের গতি কমিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত তাদের পতন ঘটে।

মহাকাশে সোয়ার্ম মিশনের তিনটি উপগ্রহ রয়েছে। দুটি রয়েছে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৩০ কিলোমিটার উচ্চতায়, তৃতীয়টি ৫১৫ কিলোমিটার উচ্চতায়। স্ট্রোম জানিয়েছেন, উপরে থাকা উপগ্রহটির তুলনায়, নীচের উপগ্রহগুলি সূর্যের অস্বাভাবিক আচরণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে, ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থাকে উপগ্রহগুলি প্রায় বায়ুমণ্ডলে পড়ে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত অনবোর্ড প্রপালশন সিস্টেম ব্যবহার করে উপগ্রহগুলির উচ্চতা বাড়িয়ে অবস্থা সামাল দেওয়া হয়েছিল।চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে, ইলন মাস্কের স্পেসএক্স সংস্থার ৪০টি নতুন স্টারলিঙ্ক উপগ্রহ, উৎক্ষেপণের ঠিক পরই সৌর ঝড়ের কবলে পড়েছিল। সবকটি, উপগ্রহই নষ্ট হয়েছিল।

তবে, বিজ্ঞানীরা বলছেন, সূর্যের এই অস্বাভাবিকতায় সবই খারাপ হবে না। কিছু ভালও ঘটবে। বহু কৃত্রিম উপগ্রহ, তাদের মেয়াদ ফুরনোর পর, মহাকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে মহাকাশ আবর্জনার আকারে। মহাকাশে এই আবর্জনা জমা, গত কয়েক দশকে এক নতুন মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূর্যের অস্বাভাবিক আচরণে যদি কৃত্রিম উপগ্রহগুলির উচ্চতা কমে, তাহলে মৃত উপগ্রহগুলিও ধীরে ধীরে বায়ুমণ্ডলে পড়ে গিয়ে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। মহাকাশ জঞ্জালমুক্ত হবে। সেই ক্ষেত্রে শাপে বরও হতে পারে।