ভেঙে পড়ল শেষ দুর্গ? ‘পঞ্জশীর আমাদের দখলে’, সদর্পে ঘোষণা তালিবানের!

একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, পঞ্জশীর সীমান্তে যুদ্ধ তীব্র থেকে আরও তীব্রতর আকার ধারণ করছে।

ভেঙে পড়ল শেষ দুর্গ? 'পঞ্জশীর আমাদের দখলে', সদর্পে ঘোষণা তালিবানের!
অলংকরণ-অভিজিৎ বিশ্বাস
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 04, 2021 | 12:04 AM

কাবুল: তবে কি শেষ ঘাঁটিটাও ভেঙে পড়ল নর্দান অ্যালায়েন্সের? শুক্রবার রাতেই তালিবান ঘোষণা করে দিল, পঞ্জশীরের তারা দখল নিয়ে নিয়েছে। দীর্ঘ কয়েকদিনের যুদ্ধের অবসান ঘটে গিয়েছে বলেই তালিবান এক বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছে। ফলে গত ১৭ দিন ধরে চলা লড়াইয়ের অবসান হল বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও বিষয়টি এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না, কারণ তালিবান এই দাবি করেছে। কিন্তু নর্দান অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে এখনও আত্মসমর্পণের বিষয়টি স্বীকার করা হয়নি। একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, পঞ্জশীর সীমান্তে যুদ্ধ তীব্র থেকে আরও তীব্রতর আকার ধারণ করছে।

তালিবানের আগ্রাসন এবং মরিয়া ভাব দেখানোর কারণটা খুবই স্পষ্ট। প্রথমে কথা ছিল, আজ অর্থাৎ শুক্রবারই আফগানিস্তানে তারা সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করে দেবে। কিন্তু পুরো আফগানিস্তান এখনও তাদের কব্জায় আসেনি। তাই পঞ্জশীর দখল না করে সরকার গঠনের কথা ভাবতেও পারছে না তালিবান।

তবে তালিবান যতই দাবি করুক না কেন, পঞ্জশীরের মুখ্য তালিবান-বিরোধী শক্তির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লড়াই এখনও চলছে। তালিবান-বিরোধী আফগানিস্তানের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি আমিরুল্লাহ সালেহ জানিয়েছেন, তিনি এখনও পঞ্জশীরেই রয়েছেন। এবং সেখানে তালিবানের দখল নেওয়ার দাবি সম্পূর্ণভাবে ভুয়ো। যদিও পরিস্থিতি যে গুরুতর হয়ে উঠেছে, এবং তালিবানও যে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সেটা তাঁর বিবৃতিতেই স্পষ্ট। সম্প্রতি বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সালেহ নাকি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। সেই সব দাবি নস্যাৎ করে তিনি বলেন, “আমি কোথাও যাইনি।”

এক ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে সালেহ জানিয়েছেন, “আমি দেশ ছেড়ে কোথাও যাইনি। যা রটানো হচ্ছে সেটা পুরোপুরি ভিত্তিহীন। আমি এই সময় পঞ্জশীর উপত্যকায় দাঁড়িয়ে কথা বলছি, আমি আমার ঘাঁটিতে রয়েছি। আমাদের কমান্ডর এবং রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেই আছি।” অন্যদিকে তালিবানের সঙ্গে চলা লড়াই নিয়ে তাঁর বক্তব্য ছিল, “আমরা অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। অবশ্যই পরিস্থিতি খুব কঠিন। আমরা তালিবান, পাকিস্তান এবং আল কায়েদা-সহ অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর আক্রমণের শিকার হচ্ছি। তবে আমরা মাটি ধরে রেখেছি, আমরা জমি হারাইনি।”

ফলে পঞ্জশীর আদৌ আত্মসমর্পণ করেছে কি না, সেটা বিভ্রান্তির বিষয় হয়ে রয়েছে। তবে এক শীর্ষ তালিবানি কমান্ডর সংবাদ মাধ্যমকে জানায়, “মহান আল্লা তালার রহমতে আমরা গোটা আফগানিস্তানে দখল নিতে সক্ষম হয়েছি। যারা সমস্যা তৈরি করছিল তাদের পরাস্ত করে আমরা এলাকাটিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেলেছি।” তবে ওয়াকিবহাল মহলের মতে, তালিবান যদি আগামিকাল সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করে, তবে এটা নিশ্চিত হয়ে যাবে যে তালিবান হয়তো সত্যিই পঞ্জশীরে দখল নিয়েছে।নতুবা এখনই তা বলা যাবে না।

গত ১৫ অগস্ট কাবুলে দখল নেওয়ার পর মনে হয়েছিল, তালিবান বুঝি গোটা আফগানিস্তানই দখল করে নিল। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল উত্তর আফগানিস্তানের পার্বত্য এলাকায় থাকা পঞ্জশীর প্রদেশ। স্থানীয় নেতা আহমেদ মাসুদের নেতৃত্বে কিছু সংখ্যক আফগান সেনা ও স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে ৯ হাজার সেনার এক বিশাল বাহিনী তৈরি করা হয়। শুরু হয় তালিবান ও প্রতিরোধ বাহিনীর মুখোমুখি যুদ্ধ। যা এখন কার্যত চরমে পৌঁছেছে। অবশ্য তালিবান বলছে, তারা যুদ্ধ জিতে নিয়েছে।

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, পঞ্জশীরে কখনও মাথা গলাতে পারেনি তালিবান। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আফগানিস্তান ছিল তালিবানের হাতে। কিন্তু নর্দান অ্যালায়েন্স কখনই তাদের ঢুকতে দেয়নি পঞ্জশীরে। তালিবানকে আটকাতে ১৯৯৬ সালেই তৈরি হয়েছিল এই বাহিনী। এই বাহিনী তৈরিতে সাহায্য করে ইরান, ভারত, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান। এই বাহিনীর জন্য গোটা দেশে রাজত্ব চালালেও পঞ্জশীর তালিবানদের হাতে আসেনি। এই অঞ্চলের সঙ্গে অন্য কোনও দেশের সীমান্ত নেই। এই অংশের চারপাশ ঘিরে রয়েছে তালিবান ঘাঁটি। এই পঞ্জশীর আসলে এক দুর্গের মতো। তালিবানের আগে সোভিয়েত বাহিনীও কখনও আঁচড় কাটতে পারেনি পাহাড়ে ঘেরা এই উপত্যকায়। এ বার সেই দুর্গ অক্ষত থাকে, নাকি ভেঙে পড়ে, সেটাই দেখার। আরও পড়ুন: ‘চিন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ পার্টনার’, আর্থিক দুর্দশা ঘোচাতে মস্কো-বেজিংয়ে আস্থা তালিবানের