তিন জেলা ছিনিয়ে নিয়েছে আগেই, পঞ্জশীরের কাছেই পৌঁছে গেল তালিবান
আগে কখনই তালিবান এই পঞ্জশীর দখল করতে পারেনি। বরাবরই রুখে দিয়েছে নর্দার্ন অ্যালায়েন্স।
কাবুল: উত্তরের তিন জেলা হাতছাড়া হয়েছিল তালিবানের। নর্দার্ন অ্যালায়েন্স দখল নিয়ে নিয়েছিল বানো, দে সালেহ ও পুল-এ-হেসার নামে তিন জেলার। কিন্তু দু’দিনের মধ্যেই ওই সব জায়গায় থেকে উত্তরের সেই বাহিনীকে সরিয়ে দিল তালিবান। ক্রমশ পঞ্জশীরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। জানা গিয়েছে, সোমবারের মধ্যে পঞ্জশীরের তিন দিকে থাকা বাদাখসান, তাহর ও আন্দারব প্রদেশের দখল নিয়ে নিয়েছে তালিবান। তালিবানের অন্যতম মুখপাত্র জাবিদুল্লাহ মুজাহিদ সেই তথ্য জানিয়েছেন টু্ইটারে।
ইতিমধ্যেই পার্বত্য উপত্যকা পঞ্জশীর দখলে শতাধিক সৈন্য পাঠিয়েছে তালিবান। তালিবানের তরফে জানানো হয়েছে, আফগানবাসীর জন্য নতুন সরকার গঠনের কাজ চলছে। তবে প্রয়োেজনে লড়াই করবে তালিবান। যদি পঞ্জশীরে তালিবান প্রতিরোধ বজায় থাকে, তবে শান্তির পথ আর অনুসরণ করা হবে না। আফগানিস্তানকে রক্ষা করতে তারা প্রস্তুত এবং এই সংঘর্ষে রক্তবন্যা বইতে পারে,সেই বিষয়েও সতর্ক করা হচ্ছে। রবিবারই তালিবানের তরফে একটি টুইটে বলা হয়, ‘ইসলামিক এমিরেটসয়ের শতাধিক মুজাহিদ্দিন পঞ্জশীরের দিকে রওনা দিয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাব দেওয়া হলেও স্থানীয় আধিকারিকরা সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন। তাই এই পদক্ষেপ করতে হয়েছে।’
তবে তালিব শক্তির কাছে এখনও মাথা নত করতে রাজি নন আহমেদ মাসুদ। পঞ্জশীরে তালিবান বিরোধী যে শক্তি গড়ে উঠেছে, তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন আহমেদ মাসুদ। তালিবানিরা তাঁকে মাত্র চার ঘণ্টা সময় দিয়েছিল আত্মসমর্পণের। কিন্তু নিজের অবস্থানেই অটল রয়েছেন মাসুদ। রবিবার আল আরবিয়া নামক একটি সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে মাসুদ জানিয়েছেন, ‘তালিবানরা চাইলে মিলিতভাবে একটি সরকার গঠন করতে পারে, কিন্তু আলোচনায় বসতে অস্বীকার করলে যুদ্ধ বাধবেই।’ যদি আফগানিস্তানের শান্তি ও সুরক্ষা ফেরানোর সমস্ত শর্ত পূরণ করে তালিবানরা, তবে বাবাকে হত্যার অপরাধের জন্যও তাদের ক্ষমা করে দিতে রাজি মাসুদ। প্রেসিডেন্ট আসরাফ ঘানি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট আমিরুল্লাহ সালেহও পঞ্জশীরে আশ্রয় নিয়েছেন, কারণ একমাত্র পঞ্জশীরেই প্রবেশ করতে পারেনি তালিবানরা।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আফগানিস্তান ছিল তালিবানের হাতে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই নর্দার্ন অ্যালায়েন্স কখনই তাদের ঢুকতে দেয়নি পঞ্জশীর নামে পাহাড়ে ঘেরা এই অঞ্চলে। ১৯৯৬ তেই তৈরি হয় এই বাহিনী। তালিবানকে রুখতে এই বাহিনী তৈরিতে সাহায্য করেছিল ইরান, ভারত, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান। এই বাহিনীর জন্য গোটা দেশে রাজত্ব চালালেও পঞ্জশীর কোনোদিনই তালিবানদের হাতে আসেনি।
এই পঞ্জশির আসলে এক দূর্গের মতো। চারপাশে হিন্দুকুশ পর্বত। তালিবানের আগে সোভিয়েত বাহিনীও কখনও আঁচড় কাটতে পারেনি পাহাড়ে ঘেরা এই উপত্যকায়। তবে আগের তালিবানের সঙ্গে এ বারের তালিবানের কিছুটা তফাৎ রয়েছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের কাছে আছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। তাদের বাহিনীও আগের থেকে অনেক বেশি পেশাদার। তাই এ বার কিছুটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। আরও পড়ুন: কোনও আফগান দেশ ছাড়তে চাইলে বাধা দেওয়ার প্রশ্নই নেই, উদরতা প্রমাণে মরিয়া তালিবান