‘সকলের নাকের ডগাতেই এত বছর ছিলাম’, আফগান-মার্কিন বাহিনীকে বোকা বানানোর গল্প শোনালেন তালিব মুখপাত্র

Zabiullah Mujahid on Living in Kabul for years: রবিবার জাবিদুল্লাহ বলেন, "মার্কিন বাহিনী আমার সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রায় সময়ই টাকা দিতেন। সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে ওরা কত যে ব্যর্থ অভিযান চালিয়েছে। আমি কিন্তু কখনওই আফগানিস্তান ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা বা চিন্তা ভাবনা করিনি।"

'সকলের নাকের ডগাতেই এত বছর ছিলাম', আফগান-মার্কিন বাহিনীকে বোকা বানানোর গল্প শোনালেন তালিব মুখপাত্র
তালিব মুখপাত্র জাবিদুল্লাহ মুজাহিদ। ছবি:PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 13, 2021 | 12:13 PM

কাবুল: আফগান ও মার্কিন গোয়েন্দারা ভেবেছিলেন অন্য কোনও দেশে বসে বা আড়াল থেকেই তালিবানি কার্যকলাপ পরিচালন করতেন তিনি, কিন্তু আফগানিস্তান (Afghanistan) দখলের পরই প্রকাশ্যে এসেছেন তালিবানি মুখপাত্র জাবিদুল্লাহ মুজাহিদ (Zabiullah Mujahid)। রবিবার একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন, অন্য কোথাও নয়, সকলের নাকের ডগায় কাবুলে বসেই তিনি কার্যকলাপ পরিচালন করতেন।

গত মাসের ১৫ তারিখ আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করে তালিবান। তারপর থেকেই তালিবানের তরফে যাবতীয় বার্তা দিচ্ছেন তাদের মুখপাত্র জাবিদুল্লাহ মুজাহিদ। অথচ এই জাবিদুল্লাহকেই হন্যে হয়ে খুঁজেছিল আফগান ও মার্কিন বাহিনী। এ বার তিনি নিজেই জানালেন কীভাবে সকলের চোখে ধুলো দিয়ে কাবুলেই দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছিলেন।

রবিবার দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন নামক একটি সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে জাবিদুল্লাহ জানান, তিনি উত্তর পশ্চিম পাকিস্তানের নৌসেরায় অবস্থিত হাক্কানিয়া সেমিনারি থেকে পড়াশোনা করেছেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তালিবানি বিশ্ব বিদ্যালয় বা জিহাদের বিশ্ববিদ্যালয় নামেই পরিচিত।

আফগান ও মার্কিন বাহিনীকে বোকা বানিয়ে কাবুলেই বসবাস করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওরা ভাবত আমার আদতে কোনও অস্তিত্বই নেই। এ দিকে আমি বহুবার তল্লাশি অভিযানের হাত থেকে বেঁচে পালিয়েছি। আমায় কোনওবারই খুঁজে না পাওয়ায় তারা ভেবেছিল যে জাবিদুল্লাহ হয়তো মন গড়া কোনও ব্যক্তি। আসলে এই নামে কেউ নেই। ওদের এই ভাবনাই আমাকে আফগানিস্তানে স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করতে সাহায্য করেছিল।”

জাবিদুল্লাহ বলেন, “আমি দীর্ঘ সময় অবধি কাবুলেই থেকেছি, সকলের নাকের ডগায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেরিয়েছি। আমি সরাসরি আফগান যোদ্ধাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছি, যেখান থেকে যাবতীয় তথ্য জানা যেত এবং সেই অনুযায়ী তালিব বাহিনী হামলার পরিকল্পনা করত।”

দীর্ঘ সময় ধরে জাবিদুল্লাহ কে বা কেমন দেখতে তাকে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হওয়ায় এক সময়ে মনে করা হয়েছিল, জাবিদুল্লাহ হয়তো একজন নয়, একাধিক ব্যক্তি।  তবে রবিবার তিনি নিজেই বলেন, “মার্কিন বাহিনী আমার সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রায় সময়ই টাকা দিতেন। সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে ওরা কতই যে ব্যর্থ অভিযান চালিয়েছে। আমি কিন্তু কখনওই আফগানিস্তান ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা বা চিন্তা ভাবনা করিনি।”

১৯৭৮ সালে পাকতিয়া প্রদেশের গারদেজ জেলায় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন জাবিদুল্লাহ। তিনি জানান, পাকিস্তানের হাক্কানিয়া সেমিনারি থেকে ইসলামিক আইন ব্যবস্থা নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। নয়া তালিবান সরকারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানি, জল ও শক্তি মন্ত্রী মোল্লাহ আব্দুল লতিফ মনসুর, সম্প্রচার মন্ত্রী নাজিবুল্লাহ হাক্কানি এবং শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আব্দুল বাকি হাক্কানি- সকলেই এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পড়াশোনা করেছেন বলে জানা গিয়েছে।

জাবিদুল্লাহ জানান, তালিবানের আগের মুখপাত্রের গ্রেফতারির পরই তাঁকে মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি এখনও অবধি তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা উমারকে দেখেননি বলেও জানান। তবে শেখ মোল্লাহ মনসুর ও শেখ হেবাতুল্লাহের সঙ্গে কাজ করেছেন।

আরও পড়ুন: মাথা থেকে পা অবধি মোড়া কালো কাপড়ে, পরিচয় জানাই দায়! তালিবরাজে নারী স্বাধীনতার নিদারুণ উদাহরণ