শুধু সময়ের অপেক্ষা! বছর শেষেই হাতে মিলতে পারে ২ করোনা ভ্যাকসিন

থ্যাঙ্কসগিভিংয়ের আগেই আমেরিকায় করোনার কারণে প্রতিদিন মৃত্যুর হার ফের বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মে মাসের পর চলতি মাসের গত সপ্তাহে বুধবার একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে সংক্রমণের কারণে। প্রায় দুই হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে সংক্রমণের কারণে।

শুধু সময়ের অপেক্ষা! বছর শেষেই হাতে মিলতে পারে ২ করোনা ভ্যাকসিন
প্রতীকী চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Dec 01, 2020 | 7:20 PM

TV9 বাংলা ডিজিটাল: বছর শেষের আগেই হাতে মিলতে পারে করোনার ভ্যাকসিন (Coronavirus Vaccine), অপেক্ষা শুধু সম্মতির। বায়োটেকনোলজি সংস্থা মডার্না (Moderna) সোমবারই আপৎকালীন সম্মতির আবেদন জানিয়েছে। সম্মতির পাওয়ার আশায় রয়েছে ফাইজার (Pfizer) ও জার্মান বায়োটেকনোলজি কম্পানি বায়োএনটেক (BioNTech)।

সম্প্রতি আমেরিকায় থ্যাঙ্কস গিভিং (Thankgiving) উৎসব পালিত হওয়ায় যাতায়াত যেমন বেড়েছে, তেমনই প্রতিটি পরিবারেই জনসমাগম হয়েছে। ফলে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সংক্রমণের হার আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এমনিতেই করোনা সংক্রমণ সামলাতে নাজেহাল আমেরিকা, তার উপর সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে আরও বিপাকে পড়তে হবে। এই সময়েই যদি ভ্যাকসিন পাওয়া যায়, তবে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে মার্কিন সরকার।

এই বিষয়ে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশিয়াস ডিজিজ় (National Institute of Allergy and Infectious Diseases)-র ডিরেক্টর অ্যান্টনি ফ্যসি বলেন,”আমরা আগবাড়িয়েই কিছু বলতে চাই না, তবে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন আশাজনক দিক দেখাচ্ছে। যদি এই ভ্যাকসিন কার্যকরী হয় এবং বহু মানুষ যদি এই ভ্যাকসিন নেয়, তবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে একটা বাধা সৃষ্টি করা যাবে। পোলিও, স্মল পক্সের মতো অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও যেভাবে রাশ টানা গিয়েছিল, একইভাবে করোনার ক্ষেত্রেও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।”

থ্যাঙ্কস গিভিংয়ের আগেই আমেরিকায় করোনার কারণে প্রতিদিন মৃত্যুর হার ফের বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মে মাসের পর চলতি মাসের গত সপ্তাহে বুধবার একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে সংক্রমণের কারণে। প্রায় দুই হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে সংক্রমণের কারণে। ক্রিসমাস ও নিউইয়ারে জনসমাগম বৃদ্ধি পাওয়ায় সংক্রমণও বৃদ্ধি পাবে, সেই সময়ই করোনা ভ্যাকসিনের বিতরণ শুরু হলে কিছুটা রাশ টানা যাবে সংক্রমণে। তবে ভ্যাকসিনের প্রথম দাবিদার স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রথম সারির করোনা যোদ্ধারাই।

আরও পড়ুন: বাইডেন না রবার্ট ব্রুশ! তোতলা ছেলের ‘শ্বেত প্রাসাদ’ অভিযান, ব্যর্থতা থেকে সাফল্যের গল্প

আগামী বৃহস্পতিবার থেকেই ভ্যাকসিনের সম্মতি দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে যাবে। ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) ফাইজার ও বায়োএনটেক ভ্যাকসিনের কী কী করণীয়, তা জানাবে। পরের সপ্তাহেই মডার্নার ক্ষেত্রেও একই নির্দেশ দেবে সংস্থা। মডার্নার তরফ থেকে একটি প্রেস রিলিজে জানানো হয়েছে, তাদের ভ্যাকসিন ৯৪ শতাংশ কার্যকরী। ৩০ হাজার জনের উপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালিয়েছে মডার্না। তাদের এই ভ্যাকসিন সব বয়সের মানুষের উপরই সফলভাবে কাজ করেছে। অন্যদিকে ফাইজার ও বায়োএনটেকের তরফ থেকে আগের মাসেই জানানো হয়েছিল তাদের তৈরি ভ্য়াকসিন ৯৫ শতাংশেরও বেশি কার্যকরী।

তবে ভ্যাকসিন পেয়ে গেলেই যে বিপদ কেটে যাবে, এমনটা মানতে নারাজ স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিশ্বকে আগের রূপে ফিরতে সময় লাগবে অনেকটাই। দুই ডোজের ভ্যাকসিন পেয়ে যাওয়ার পরও মাস্ক পরার মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারই পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ, যাদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা কম, তাদের ভ্যাসিন পেতে বসন্তের শেষভাগ বা গ্রীষ্ম অবধি অপেক্ষা করতে হবে। যদি ভ্যাকসিন ব্যবহারে সম্মতি পাওয়া যায় এবং তা কার্যকরও হয়, তবে ইতিহাস তৈরি হবে। কারণ মাত্র একবছরের গবেষণায় এর আগে কোনও ভ্যাকসিন প্রস্তুত করা হয়নি।

মার্কিন সরকার ‘অপারেশন রাপ স্পিড’ (Operation Warp Speed)-র আওতায় মডার্না ও ফাইজারের থেকে ১০০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন ডোজ ইতিমধ্যেই অর্ডার দিয়েছে। মডার্না ১.৫ বিলিয়ন ডলারের বদলে ১০০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন দেবে, অন্যদিকে ফাইজার ১.৯৫ বিলিয়ন ডলারে ১০০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন ডোজ মার্কিন সরকারের হাতে তুলে দেবে। এছাড়াো অন্যান্য ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থার কাছ থেকে করোনার প্রতিষেধক কেনার পথ খোলা রেখেছে আমেরিকা। দুটি সংস্থাই এফডিএ-র কাছ থেকে সবুজ সিগন্যাল পেলেই ভ্যাকসিন প্রস্তুত ও বিতরণের কাজ শুরু করে দেবে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে তৈরি ভ্যাকসিনের সম্পূর্ণ তথ্য এখনও না পাওয়ায় মার্কিন সরকার এই ভ্যাকসিনে ছাড়পত্র দেবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

আরও পড়ুন: এবার করোনা পরীক্ষা করবে রোবট!

জনসন অ্যান্ড জনসন (Johnson and Johnson)-র এক ডোজের ভ্যাকসিনের উপরও বর্তমানে পরীক্ষা চলছে। নতুন প্রতিযোগী হিসাবে বাজারে হাজির হয়েছে নোভাভ্যাক্স, তারাও জানিয়েছে আগামী সপ্তাহ থেকেই তাদের তৈরি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হয়ে যাবে।

ভ্যাকসিন প্রয়োগে বিশেষ কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দিলেও মডার্নার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ট্রায়ালে দেখা গিয়েছে যে স্থানে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে, সেখানে ব্যাথ্যা, ফুলে থাকা, পেশিতে ব্যাথ্যা, মাথা ব্যাথার মতো সামান্য উপসর্গ দেখা গিয়েছে।

তবে সমগ্র বিশ্বে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রেও দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে মডার্নাই। এই ভ্যাকসিন মাইনাস ২০ ডিগ্রি (minus 20 degree) তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়, যা ফাইজার বা বায়োএনটেকের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। ফাইজার ও বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য যে তাপমাত্রার প্রয়োজন, তা বহু দেশের স্বাস্থ্যপরিষেবাতেই সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন: ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে পড়ার জন্যই মার খাবে প্রতিষেধক! আশঙ্কা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার