AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টে ফিরল শতাব্দী প্রাচীন মহারাজা নন্দকুমার হত্যাকাণ্ড, কেন?

হাউস ম্যানেজার রাসকিন মহারাজা নন্দকুমার হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে এনে বুঝিয়ে দিলেন ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট যুক্তিযুক্ত।

ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টে ফিরল শতাব্দী প্রাচীন মহারাজা নন্দকুমার হত্যাকাণ্ড, কেন?
অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ
| Updated on: Feb 11, 2021 | 9:46 PM
Share

কলকাতা: হাউসের পর এ বার মার্কিন সেনেটে ট্রাম্পের (Donald Trump) ইমপিচমেন্ট। তবে এই ইমপিচমেন্ট আদৌ সাংবিধানিক কি না, তা নিয়েই জোর বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। ট্রাম্প পক্ষ দাবি করেছিল, প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের ইমপিচমেন্ট যুক্তিযুক্ত নয়। কিন্তু হাউস ম্যানেজার রাসকিন মহারাজা নন্দকুমার হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে এনে বুঝিয়ে দিলেন ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট যুক্তিযুক্ত।

মহারাজা নন্দকুমারের হত্যাকাণ্ড:

পলাশীর যুদ্ধে হেরে গিয়েছিলেন সিরাজ-উদ-দৌল্লা। সেই থেকেই ব্রিটিশ শক্তি ঢুকে পড়ে বাংলার অন্দরে। আর সেই যুদ্ধে সিরাজ-উদ-দৌল্লার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন মিরজাফর। ষড়যন্ত্রকারীদের দলে ছিলেন মহারাজা নন্দকুমারও। নবাবের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার পুরষ্কারও পেয়েছিলেন নন্দকুমার। কিন্তু পরে সেই ব্রিটিশ আদালতেই ফাঁসির সাজা ঘোষণা হয়েছিল মহারাজের।

নন্দকুমারের ফাঁসির দিন জনপ্লাবন নেমেছিল খিদিরপুরে। বর্তমান হেস্টিংস ছিল তৎকালীন জনমানসহীন মরুভূমির মতো। সেখানেই সর্বসমক্ষে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল নন্দকুমারকে। ব্রিটিশ আদালতে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় এটাই ছিল প্রথম ফাঁসি। আর সেই নারকীয় হত্যার সাক্ষী হতে রাস্তায় ঢল নেমেছিল আম আদমির। ব্রাহ্মণ হত্যা দেখে পাপ ধুয়ে ফেলার জন্য গঙ্গাস্নান করেও বাড়ি ফিরেছিলেন অনেকে। সে দিন নন্দকুমারের ফাঁসির জন্য রাস্তার ধারে কূপ খোঁড়া হয়েছিল। সেই কূপেই মৃত্যু হয়েছিল ব্রিটিশ অনুগত মহারাজা নন্দকুমারের।

এখানেই ফাঁসি হয়েছিল নন্দকুমারের। ছবি- টুইটার

নন্দকুমার-ওয়ারেন হেস্টিংস তরজা:

গভর্নর জেনারেল হওয়ার আগে হেস্টিংস ছিলেন বর্ধমান, নদিয়া ও হুগলি জেলার খাজনা আদায়কারী ব্রিটিশ কর্মচারী। তখন হেস্টিংসের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরূপের অভিযোগ এনেছিলেন নন্দকুমার। যার ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হেস্টিংসকে সেই পদ থেকে সরিয়ে কালেক্টর পদে বসিয়েছিল নন্দকুমারকে। তখন হেস্টিংসের থেকে অনেক উঁচু পদে আসীন লর্ড ক্লাইভ। আর ক্লাইভের স্নেহের পাত্র ছিলেন নন্দকুমার। তাই চেয়েও নন্দকুমারের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারেননি হেস্টিংস।

তবে পরবর্তীকালে যখন হেস্টিংস গভর্নর জেনারেল হয়ে কলকাতায় এলেন, তখন একটি মোক্ষম সুযোগ পেলেন নন্দকুমারকে শায়েস্তা করার। তখন রেগুলেটিং অ্যাক্ট অনুযায়ী কলকাতায় হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠা হয়ে গিয়েছে। তখন হেস্টিংসের পরামর্শে নন্দকুমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আদালতের দ্বারস্থ হন বোলাকিদাস নামে এক জহুরির আত্মীয়। তবে নিজেকে সৎ প্রমাণ করার সব প্রমাণই ছিল নন্দকুমারের কাছে। তারপরও হেস্টিংসের বন্ধু এলিজা যেন তেন প্রকারেণ জালিয়াতির মামলায় ফাঁসির সাজা শোনান নন্দকুমারকে। যা ইতিহাসে বিতর্কিত রায় হিসেবে মেনে নেন বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ। কারণ তৎকালীন ব্রিটিশ আইনে জালিয়াতির সাজা ফাঁসি হলেও, ভারতের চিরাচরিত আইন কিংবা হিন্দু, মুসলিম কোনও আইনেই জালিয়াতির সাজা মৃত্যুদণ্ড ছিল না।

মার্কিন সেনেট

কীভাবে ট্রাম্পের ট্রায়ালে উঠে এল মহারাজা নন্দকুমারের হত্যাকাণ্ড?

ট্রাম্পের আইনজীবীদের সওয়াল ছিল, ট্রাম্প আর প্রেসিডেন্ট নেই। সে ক্ষেত্রে তিনি একজন সাধারণ নাগরিক। একজন সাধারণ নাগরিকের কেন ইমপিচমেন্ট হবে? এই সওয়ালই করেছিলেন ট্রাম্পের আইনজীবী। তখনই রাসকিন তুলে আনেন বাংলার প্রথম গভর্নর জেনারেল লর্ড হেস্টিংসের কথা। রাসকিন বলেন, “মার্কিন সংবিধান অনেকাংশেই পুষ্ট হয়েছে ব্রিটিশ সংবিধান থেকে।” তিনি জানান, ব্রিটিশ ভারতে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস গভর্নর জেনারেল পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ইউরোপে ফিরে আসার পরও নন্দকুমার হত্যাকাণ্ডে তাঁর ইমপিচমেন্ট ট্রায়াল হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে কেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের হবে না! এই প্রশ্নটাই ছুড়ে দেন রাসকিন।

সেনেটে এই ধরনের একাধিক যুক্তি দিয়ে তর্ক বিতর্ক চলার পর ভোটাভুটির মাধ্যমে স্থির হয় ট্রাম্পের সেনেটে ট্রায়াল হবে। সেই মতো ট্রায়াল শুরু হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের ট্রায়ালে বাংলার প্রসঙ্গ, এই ক্ষেত্রে নির্ণায়ক হয়ে উঠেছে। আর বিশেষজ্ঞ মহলে গুঞ্জন উঠেছে, হেস্টিংসের ট্রায়ালের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিলেন নন্দকুমার, আর ট্রাম্পের ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে হলেও জড়িত সেই নন্দকুমারই।

আরও পড়ুন: ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট হবে কি না! ঠিক করে দিলেন বাংলার ‘মহারাজা নন্দকুমার’