Budget 2024: ‘জৌলুসহীন’ বাজেটেই স্পষ্ট আত্মবিশ্বাস, ‘আয়েগা তো মোদীহি’

Budget 2024: ২০১৯ সালে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশ করেন পীযূষ গোয়েল। স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের মাত্রা ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করেছিলেন এবং ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর সম্পূর্ণ কর ছাড় দিয়েছিলেন তিনি। নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় পরীক্ষার আগে, এইবারের বাজেটেও সেই ধরণের কিছু হতে পারে বলে প্রত্যাশা করেছিলেন মানুষ। অনেকেই সেই দিক থেকে হতাশ হয়েছেন।

Budget 2024: 'জৌলুসহীন' বাজেটেই স্পষ্ট আত্মবিশ্বাস, 'আয়েগা তো মোদীহি'
বাজেট দিচ্ছে মোদীর আত্মবিশ্বাসের আভাসImage Credit source: PTI
Follow Us:
| Updated on: Feb 02, 2024 | 8:07 AM

নয়া দিল্লি: বৃহস্পতিবার সংসদে ২০২৪ অর্থবর্ষের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট সাধারণত একটু ম্যাড়মেড়ে হয়ে থাকে। তবে, এই বারের মতো সাদামাটা বাজেট বোধহয় এর আগে দেখা যায়নি। এমনিতেই জিএসটি চালু হওয়ার পর থেকে কোন পণ্যের দাম বাড়ল, কোনটার কমল তা জানার আগ্রহ কমেছে। তবে, তারপরও বাজেটের দিকে নজর রাখেন বেতনভোগীরা। আয়করের বোঝা আরও বাড়ল না তো! নাকি বোঝা কমালো সরকার? এবার এই বিষয়ে কোনও পরিবর্তন হয়নি। কোনও বিশেষ ক্ষেত্রে নজর কাড়া বাজেট বরাদ্দ, কোনও নতুন প্রকল্পের ঘোষণা – নজর টানার মতো কিছুই নেই এই বারের বাজেটে। ২০১৯ সালের বাজেটেও, তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বেশ কিছু জনমোহিনী ঘোষণা করেছিলেন, কিন্তু, এবার কিছুই নেই। বাণিজ্য মহল এতে কিছুটা হতাশ হলেও, এর থেকে মোদী সরকারের আত্মবিশ্বাসের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে এতটাই নিশ্চিত বিজেপি, যে ভোটারদের আকর্ষণের জন্য এই বাজেটে কোনও অস্বাভাবিক ঘোষণা করতে হয়নি। বরং এই বাজেটকে বলা যায়, মোদী সরকারের গত ১০ বছরের কাজের উদযাপন।

সেই ২০১৭ সালে আয়কর দেওয়ার সর্বনিম্ন স্ল্যাব, ২.৫ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করেছিলেন অরুণ জেটলি। অর্থাৎ, বছরে যাদের ৫ লক্ষ টাকার নীচে আয়, তাদের কর দিতে হবে না। তারপর সাত বছর কেটে গিয়েছে। আয়করের স্ল্যাবের আর পরিবর্তন হয়নি। ২০১৯ সালে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশ করেন পীযূষ গোয়েল। স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের মাত্রা ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করেছিলেন এবং ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর সম্পূর্ণ কর ছাড় দিয়েছিলেন তিনি। নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় পরীক্ষার আগে, এইবারের বাজেটেও সেই ধরণের কিছু হতে পারে বলে প্রত্যাশা করেছিলেন মানুষ। অনেকেই সেই দিক থেকে হতাশ হয়েছেন। কিন্তু, দেশের মানুষের উপর মোদী সরকারের কতটা আস্থা রয়েছে, তা এই ঘটনাতেই স্পষ্ট। ৩.২৫ কোটি আয়করদাতা হয়ত হতাশ, কিন্তু তাঁরা ভরসা রাখেন এই সরকারের উপর। সরকারেরও সাধারণ মানুষের প্রতি সমান আস্থা রয়েছে। বিজেপি জানে, আয়করের স্ল্যাব অপরিবর্তিত রাখার হতাশা, ভোটের ফলে কোনও প্রভাব ফেলবে না।

সরকার চাইলে নির্বাচনের আগে জনপ্রিয় বাজেট পেশ করতে পারত। বিশেষ করে রামমন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর, মধ্যবিত্তদের মন জয় করার একটা বড় সুযোগ ছিল এই বাজেট। ২০১৪ সালের অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে, তৎকালীন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম ওয়ান ব়্যাঙ্ক ওয়ান পেনশন, শিক্ষা ঋণের সুদে ছাড়, গাড়ি-বাইক-মোবাইলের উপর কর কমানোর ঘোষণা করেছিলেন। এমনকি, ২০১৯ সালের অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে মোদী সরকারও অনেক কর ছাড়ের ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এবার মোদী সরকার এই পথ বেছে নেয়নি। ৪০০-র বেশি লোকসভা আসন জেতার লক্ষ্যে ফাঁপা ঘোষণা করেনি। অর্থনীতির অবস্থা বুঝে, বাজেট পেশ করেছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করেরও পরিবর্তন করা হয়নি। নির্মলা সীতারামন ধন্যবাদ জানিয়েছেন করদাতাদের। নতুন কর ব্যবস্থায়, বছরে ৭ লক্ষ টাকা আয় পর্যন্ত কোনও কর দিতে হয় না।

২০১৯ সালের বাজেটে, প্রধানমন্ত্রী কর্মযোগী মানধন যোজনার মতো নতুন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছিল। এবার সেই ধরণের কোনও নতুন প্রকল্পের কথাও ঘোষণা করা হয়নি। বরং, অর্থনীতির দ্রুত বৃদ্ধির লক্ষ্যে, পরিকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যয় বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এই বাজেটেও মূলধন ব্যয় ১১.১১ শতাংশ বাড়িয়ে ১১,১১,১১১ লক্ষ কোটি টাকা করা হয়েছে। রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে ৫.৮ শতাংশ। তা কমিয়ে ৫.১ শতাংশ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

আসলে, এই বাজেটের সারমর্ম এক লাইনেই বুঝিয়ে দিয়েছেন নির্মলা সীতারামন – “সকলের প্রচেষ্টায়, স্বনির্ভর ভারত পঞ্চপ্রাণ নিয়ে অমৃতকালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।” জয় জওয়ান, জয় কিষান, জয় বিজ্ঞানের পর জয় অনুসন্ধান, অর্থাৎ, গবেষণার উপর জোর দিয়েছে সরকার। রাহুল গান্ধী ওবিসি সম্প্রদায়কে কাজে লাগিয়ে ভোট বৈতরণী পার করতেচেয়েছিলেন গত কয়েক মাসে বারবার তিনি জাতিভিত্তিক আদমশুমারির কথা বলেছেন। কিন্তু তাঁর খেলাটাই ঘুরিয়ে দিয়েছে মোদী সরকার। বাজেট বক্তৃতায় নির্মলা সীতারামন বলেছেন, দেশে শুধুমাত্র চারটি জাতি রয়েছে – দরিদ্র, যুবক, মহিলা এবং কৃষক। তাই, এই বাজেট মোদী সরকারের আত্মবিশ্বাসের পরিচয়।