‘প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল মুক্ত দেশের কথা বলেন না’, কেরলের চালেই স্টেপ আউট ‘অলরাউন্ডার’ রাহুলের
কেরলের নেট প্র্যাক্টিসে যে এখনও মাথায় ঘুরছে, তার প্রমাণ মিলল 'মোদীর ভারত গড়া' প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে।
গোয়ালপোখর: বাংলায় ভোট (West Bengal Assembly Election 2021) মধ্য গগনে। নির্বাচন কমিশন ‘বেনজির’ সিদ্ধান্ত নিয়ে ভোটের ৭২ ঘণ্টা আগে প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। সেই মতো পঞ্চম দফার ভোট প্রচারের শেষ দিন বুধবার। কেরল, অসম, তামিলনাড়ু ঘুরে সেই দিনই ভোট প্রচারে প্রথম বঙ্গে এলেন রাহুল গান্ধী। কেরলে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে ঝোড়ো ইনিংস খেলতে হয়েছে। আর বঙ্গে ‘বন্ধু’ বাম। তাই বন্ধুত্বের বার্তায় যেন ছিটে-ফোঁটাও আঁচড় না লাগে সেদিকটা সামলেই তৃণমূল-বিজেপিকে তোপ দাগলেন ওয়ানাদের সাংসদ। তবে কেরলের নেট প্র্যাক্টিসে যে এখনও মাথায় ঘুরছে, তার প্রমাণ মিলল ‘মোদীর ভারত গড়া’ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে।
কেরলে রাহুল গান্ধী বামপন্থীদের নিশানা করতে গিয়ে বলেছিলেন, “প্রধানমন্ত্রী কমিউনিস্ট মুক্ত ভারতের কথা বলেন না।” আর বঙ্গে এসে বললেন, “প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল মুক্ত দেশের কথা বলেন না।” যা দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মত, ছাঁচ একই স্রেফ রঙটায় পরিবর্তন। রাহুল গান্ধীর আগেই গোয়ালপোখরে বক্তব্যে পেশ করলেন দীপা দাসমুন্সি। তিনি সেই পুরনো স্লোগান মনে করালেন, ‘খাওয়ার সময় ভাত, ভোটের সময় হাত।’ রাহুল বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে কার্যত প্রথমেই হাতে কাস্তেটা ধরে নিলেন। অর্থাৎ চাকুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী আলি ইমরান রমজ ভিক্টরের হয়ে সমর্থন প্রার্থনা করলেন।
এরপর একের পর এক ইস্যুতে নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তাঁর সাফ কথা, “বিজেপি অসম, কেরলে যা করেছে বাংলায়ও তাই করতে চায়, হিংসা আর ঘৃণা ছড়াতে চায়।” একেবারে সরাসরি নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহর নাম করে রাহুলের অভিযোগ, বিজেপি এখানে আগুন জ্বালাতে এসেছে। তিনি বলেন, “নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহর কিছু হবে না। তাঁরা জ্বলবে না, বাংলা জ্বলবে।” ওয়ানাদের সাংসদ জানান, তিনি এখানে নির্বাচনী বক্তব্য পেশ করতে আসেননি। তিনি এসেছেন বাংলার ইতিহাস-ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে যাতে মা-বোনেদের কাঁদতে না হয়।
উত্তর প্রদেশে কীভাবে জিতেছে বিজেপি? সে প্রশ্নেরও উত্তর দিলেন রাহুল। তাঁর দাবি, সে রাজ্যে আগুন জ্বালিয়ে জিতেছে বিজেপি। তিনি বলেন, “এখন উত্তর প্রদেশ গেলে মজা দেখবেন। হাসপাতাল মৃতদেহে ভর্তি। যে দিকেই তাকাও দেখবে মানুষ করোনায় মরছে।” প্রধানমন্ত্রীকে জিএসটি ও নোটবন্দি বাণেও বিঁধলেন রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, “৮ টার সময় প্রধানমন্ত্রী এসে বলছেন ৫০০-১০০০ টাকা পছন্দ হয়নি, তাই ব্যান করে দিয়েছি। লক্ষ লক্ষ মানুষ বিপদে পড়েছিলেন, যাঁর কাছে যত টাকা ছিল সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। ভারতের প্রত্যেকে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কি দাঁড়িয়েছিলেন লাইনে? উনি তো ১ লক্ষ টাকার জামা পরেন। আপনাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে তাঁর মিত্র শিল্পপতিদের টাকা দিয়েছেন।” ছোট দোকানদাররা এখনও জিএসটি বুঝতে পারেননি। সেই করের টাকাও ৫-১০ জন ‘মিত্র’কে দিয়েছেন মোদী। এমনটাই অভিযোগ রাহুল গান্ধীর।
করোনা নিয়ে কেন্দ্রকে বিঁধেছেন ওয়ানাদের সাংসদ। রাহুল বলেন, “করোনা এলে মোদী বলেন থালা বাজাও, ঘণ্টা বাজাও, ফোনের লাইট জ্বালাও করোনা পালিয়ে যাবে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলাম করোনা এলে ক্ষতি হবে। দেখুন কী ক্ষতি হল, কাউকে না জিজ্ঞাসা করে লকডাউন করেছিলেন। যখন কেউ খেতে পাচ্ছে না তখন ৫-১০ জন মিত্রকে কর ছাড় দিয়ে দিলেন।” কৃষক আইন নিয়ে মোদী সরকারকে তুলোধনা করতে ছাড়েননি তিনি। রাহুল বলেন, “গরিব কৃষকদের শিল্পপতিদের সঙ্গে লড়াইয়ে নামাচ্ছেন। কৃষক টাকা চেয়ে আদালতে যেতে পারবেন না। এরকম আইন পাশ করিয়েছেন।”
‘খেলা হবে’ প্রসঙ্গেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, “বলছেন খেলা হবে। আগে রাস্তা বানান তাহলে না খেলা হবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বানান তার ময়দানে খেলা হবে।” সবশেষে রাহুলের বার্তা,”আমরা মরে যাব তবু সেই মতাদর্শের কাছে পিছু হটব না যা আমাদের গুরুকে মেরেছে। তাঁরা এটা বোঝেন এই জন্য কংগ্রেস মুক্ত ভারতের কথা বলেছেন কিন্তু তৃণমূল মুক্ত ভারতের কথা বলেননি। তাঁরা এটা জানেন যে রাহুল গান্ধী পিছু হটবে না। এটাও জানেন রাহুল গান্ধী তাঁদের ভয় পায় না। বরং তাঁরা রাহুল গান্ধীকে ভয় পায়।”
আরও পড়ুন: সিবিএসইর দশম শ্রেণির পরীক্ষা বাতিল, দ্বাদশ শ্রেণি নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নিলেন প্রধানমন্ত্রী?