দিনের শেষে একজন গ্যাংস্টার কী ভাবে, তা আমাকে ফ্যাসিনেট করে: রাম গোপাল ভার্মা

রাম গোপাল ভার্মা। এক প্রতিষ্ঠানের নাম। এ হেন রামগোপালের পরবর্তী ছবি ‘ডি-কোম্পানি’, মুক্তি পাবে আগামী ২৬ মার্চ। তার আগে TV9 বাংলার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কখনও নিজের কলেজ জীবনে ফিরে গেলেন, কখনও বা শেয়ার করলেন তাঁর রিসার্চের তথ্য।

দিনের শেষে একজন গ্যাংস্টার কী ভাবে, তা আমাকে ফ্যাসিনেট করে: রাম গোপাল ভার্মা
Follow Us:
| Updated on: Mar 17, 2021 | 12:37 PM

রাম গোপাল ভার্মা (Ram Gopal Varma)। এক প্রতিষ্ঠানের নাম। শুধুমাত্র পরিচালক বা প্রযোজকের গণ্ডিতে তাঁকে বেঁধে রাখা বোধহয় ঠিক নয়। একের পর এক ভাল ছবি উপহার দিয়েছেন বলিউডকে। বিশেষত গ্য়াংস্টার মুভিজ়। তৈরি করেছেন সিনেমার অসংখ্য ছাত্র। এ হেন রামগোপালের পরবর্তী ছবি ‘ডি-কোম্পানি’, মুক্তি পাবে আগামী ২৬ মার্চ। তার আগে TV9 বাংলার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কখনও নিজের কলেজ জীবনে ফিরে গেলেন, কখনও বা শেয়ার করলেন তাঁর রিসার্চের তথ্য। মুম্বই এবং তার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ে কৌতূহল থেকেই দীর্ঘ পড়াশোনার স্মৃতি এক্সক্লুসিভলি শেয়ার করলেন রামগোপাল।

কেমন আছেন?

রিলিজের আগে আগে ঠিক যেমন থাকি আমি, একটু টেনশনে (হাসি)।

“বড় হয়ে নিজের বোধবুদ্ধি তৈরি হওয়ার পর থেকে আমি কখনও ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনি, বড়দের সম্মান করিনি, বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দিইনি অথবা শিক্ষা নিয়েও ভাবিনি। একটিমাত্র জিনিস যেটা উপভোগ করেছি, শ্রদ্ধা করেছি, গুরুত্ব দিয়েছি, ভালবেসেছি এবং বিশ্বাস করেছি, সেটা হল ফিল্ম-মেকিং।” আপনার বই ‘Guns & Thighs – The Story of My Life’ (2016)-এর মুখবন্ধে এই কথাগুলো লিখেছিলেন। ‘ডি-কোম্পানি’র শুটিং কতটা এনজয় করলেন?

অনেকদিন ধরে আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ে চর্চা করছি। পড়াশোনা করছি। আন্ডারওয়ার্ল্ডের চরিত্রগুলো, তাদের কাজকর্ম, তাদের জীবন… অবশেষে সেটা শুট করতে পারলাম। কীভাবে সাধারণ ‘ডি-কোম্পানি’ ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম সিন্ডিকেট তৈরি করে ফেলল, সেই তথ্য… এক্সট্রা অর্ডিনারি মেটিরিয়াল কাজে লাগাতে পেরেছি। এটা হল একটা পার্ট। আর একটা বিষয় বলব, চরিত্রগুলো এত রঙিন, দর্শক দেখলে বুঝতে পারবেন। আমার তো মনে হয়, আমার কেরিয়ারে এই ছবিটা তৈরি করতে যত উত্তেজনা ছিল, তা আর কোনও ছবির ক্ষেত্রেই ছিল না।

আরও পড়ুন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ‘ফিরকি’তে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে: আর্যা

‘ডি-কোম্পানি’কে আপনি ড্রিম প্রজেক্ট কেন বলছেন?

আমি যখন কলেজে পড়তাম, তখন মার্কিন লেখক মারিও পুজ়োর লেখা ক্রাইম নভেল ‘দ্য গডফাদার’ পড়ি। আমার ছবি তৈরির কেরিয়ারে এই উপন্যাসের প্রবল প্রভাব। সেই কলেজ জীবন থেকেই এই উপন্যাসের প্রভাব ছিল আমার মধ্যে। কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে বুঝতে পেরেছি ছবির কাজ শুরু করার পরে। ইনফ্যাক্ট এই উপন্যাসটা পড়েছিলাম বলেই হয়তো ছবি পরিচালনার জগতে এসেছি। এই উপন্যাসে নিউ ইয়র্কের একজন গডফাদারের গল্প রয়েছে। আমার মনে হয়েছে, দাউদ ইব্রাহিম আন্ডারওয়ার্ল্ডের গডফাদার। দাউদ-ই আমার এই ধরনের ছবি তৈরির গডফাদার বলে আমি মনে করি। সে কারণেই এটা আমার ড্রিম প্রজেক্ট।

Ram Gopal Verma

শুটিংয়ের আগে কী ধরনের রিসার্চ করেছিলেন?

রিসার্চ করতে গিয়ে গ্রাউন্ড রিয়ালিটি ঠিক কী, জানার চেষ্টা করেছি। কেন এটা ‘ডি-কোম্পানি’, ঠিক কোন-কোন জায়গা থেকে এটা সাধারণ যে কোনও কোম্পানির মতো করে চালনা করা হত, ৮০-র দশকে যাঁরা গ্যাংয়ে ছিলেন, করিম লালা-সহ আরও অনেকে তাঁদের সাইকোলজি কী ছিল, সে সব বোঝার চেষ্টা করেছি বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে। সে সময় যে সব পুলিশ অফিসাররা বিভিন্ন গ্যাং সামলেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের অভিজ্ঞতা অন্য একটা দিক বুঝতে সাহায্য করেছে। আসলে ‘ডি-কোম্পানি’ ছবিটা শুধুমাত্র দাউদ ইব্রাহিমকে নিয়ে নয়, বহু মানুষ দাউদের ছায়ায় বাঁচত, আবার দাউদের ছায়াতেই মৃত্যু হয়েছিল তাঁদের… এই ছবিতে তাঁদের গল্প বলার চেষ্টা করেছি।

এই ছবিটাকে আপনি মাদার অব অল গ্যাংস্টার ফিল্মস্ বলেছেন। আপনার বই ‘Guns & Thighs – The Story of My Life’ আপনি যাঁদের উৎসর্গ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে আয়ন ব়্যান্ড, ঊর্মিলা মাতন্ডকর, ব্রুস লি, অমিতাভ বচ্চন, পর্ন তারকা টোরি ব্ল্যাকের সঙ্গে কয়েকজন গ্যাংস্টারও রয়েছেন। এই গ্যাংস্টাররা আপনার কাছে এত আকর্ষণীয় কেন? আর গ্যাংস্টারদের নিয়ে কালোত্তীর্ণ এত ছবি তৈরির পরও ‘ডি-কোম্পানি’কে কেন ‘মাদার অব অল গ্যাংস্টার ফিল্মস্’ মনে হচ্ছে?

দেখুন, দাউদ ইব্রাহিম যদি ফাদার অব গ্যাংস্টারস্ হয়, তাহলে বাই ডিফল্ট ‘ডি কোম্পানি’ মাদার অব গ্যাংস্টারস হবে (হাসি)। আর ডার্ক বিষয়টা আমার সব সময়ই ভাল লাগে। আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন, আমার ছবিতে কখনও এদের সাদা-কালো বা ভাল-মন্দ হিসেবে দেখাতে চাইনি। আমি দেখিয়েছি, কত সহজে কত কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে মানুষগুলো। চরিত্রের অন্ধকার দিক থাকলেও তারাও তো মানুষ। দিনের শেষে সেই মানুষটা কী ভাবে, এগুলো আমাকে ভাবায়, ফ্যাসিনেট করে।

আরও পড়ুন, পুলিশের চরিত্রের কস্টিউম করা চ্যালেঞ্জিং, ‘দিল্লি ক্রাইম’-এর কস্টিউম ডিজাইনার স্মৃতি চৌহান

আপনার ছবিতে বেশিরভাগ সময় গ্যাংস্টারদের মহিমান্বিত করেছেন, কখনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অথবা অন্য যে কোনও ক্ষেত্রের পরিচিত ব্যক্তিত্বদের নিয়ে ছবি করার কথা মনে হয়নি?

পরিচালক হিসেবে পর্দায় ড্রামা, অর্থাৎ নাটক তৈরি করতে ভাল লাগে আমার। এই ধরনের ছবিতে তার সুযোগ পাই আমি। আর অন্য ধরনের ছবি যেমন, সরকার (২০০৫) যেটা অমিতাভ বচ্চনকে নিয়ে তৈরি করেছিলাম। ওটা কি বাল সাহেব ঠাকরের উপর তৈরি করতে পেরেছিলাম? আমার তো মনে হয় পারিনি। ওটা পলিটিক্যাল ছবি হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতি বিষয়টা আমি বুঝি না। আমার কোনও ধারণা নেই। সে কারণেই ওই ধরনের ছবি তৈরি করতে চাই না।

আপনার পছন্দের তিনটে গ্যাংস্টার ছবি বেছে নেওয়ার অপশন থাকলে কোন তিনটে বেছে নেবেন?

‘গডফাদার’। ‘নারকোস’, এটা নেটফ্লিক্সের সিরিজ। আর (একটু ভেবে) আমার মনে হয় ‘আমেরিকান গ্যাংস্টার’।

বলিউড অথবা বলিউডের বাইরে আপনার পছন্দের অভিনেত্রী কারা?

(হাসি) আমি একজনের কথাই বলব। আমার পছন্দের অভিনেতা। অমিতাভ বচ্চন, আমার দেখা একমাত্র স্টার। যিনি চরিত্র হয়ে উঠতে পারেন।

আরও পড়ুন, বউ বলেছে, এতদিন তো আমি জানতামই, এবার গোটা পৃথিবী জানে ‘মকবুল’ কত অনুগত: সাজি চৌধুরি

বহু নতুন মুখ বলিউড ইন্ডাস্ট্রিকে উপহার দিয়েছেন আপনি। ‘ডি-কোম্পানি’তে আপনার কালো ঘোড়া কে?

আমার ধারণা, প্রোটাগনিস্ট এবং অ্যান্টাগনিস্ট, অশয়াত কান্থ এবং অভিলাষ চৌধুরি দু’জনেই। মেথড অ্যাক্টিং করেছে দু’জনেই। ভাল কাজ করেছে।

Ram Gopal Verma

আপনার কি মনে হয় ওটিটি-ই ভবিষ্যৎ? সিনেমা হল ক্রমশ অবলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে?

ধীরে-ধীরে হয়তো সেটাই হবে। সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখাটা স্পেশ্যাল হয়ে যাবে। যেমন একটা ভাল বা দামি রেস্তোরাঁয় আমরা অনেকদিন পর পর যাই, কোনও বিশেষ অনুষ্ঠানে যাই, সিনেমা হলে যাওয়াটাও তেমনই স্পেশ্যাল হয়ে যাবে। আর কনটেন্টের কথা যদি বলেন, ওটিটি দর্শকের মন জিতে নেবে।

আপনার এই সাক্ষাৎকার বাংলায় লিখব। কলকাতা থেকে আপনার সঙ্গে কথা বলছি। কখনও বাংলা ছবি তৈরি করার কথা ভেবেছেন?

না, কখনও প্ল্যান করিনি। আসলে ভাষাটা জানি না। ভাষা না জানলে কাজ করতে পারব না।

আরও পড়ুন, অভিষেক বচ্চনের কোন কোন সিক্রেট শেয়ার করল ইনায়ৎ?

কলকাতা শহর সম্পর্কে কিছু বলবেন, যা আপনার ভাল লাগে?

সত্যি কথা বলতে কলকাতা দেখিনি আমি। যে কয়েকবার গিয়েছে, প্রোমোশনের কাজে গিয়েছি। আলাদা করে শহর দেখা হয়নি। কিন্তু যেটুকু ছবিতে দেখেছি, শহরের স্ট্রাকচার ভাল লেগেছে, এটুকু বলতে পারি।

অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস