আমার দাদুর এক মন্দির আছে, সেখানে সব জাতের মানুষ ভজন গাইতেন: রঘুবীর যাদব

একটা কথা বলি, যাঁরা কম বাজেটের ছবি করতেন, যাদের পুঁজি কম, যাঁরা আসলে কাজ করতে চায়, তাঁদের রাস্তা খুলে গেল। এটা আমার নিজের চোখে দেখেছি, থিয়েটারের ভাল-ভাল ছেলেপুলে ফিল্মে চান্স পেত না।

আমার দাদুর এক মন্দির আছে, সেখানে সব জাতের মানুষ ভজন গাইতেন: রঘুবীর যাদব
রঘুবীর যাদব।
Follow Us:
| Updated on: Jan 30, 2021 | 8:46 PM

শুরুটা থিয়েটার হলেও, ছোট পর্দা, বড় পর্দা কিংবা ওয়েব সিরিজে তাঁর অভিনয়ের অবাধ বিচরণ। সহজ, সরল এবং মাটি আঁকড়ে বেঁচে থাকা এক অভিনেতার নাম রঘুবীর যাদব। বারবার বললেন, “শিখতে চাই”, সে বাংলা ভাষা হোক বা অভিনয়। জীবনে অনেক কিছু করা নাকি এখনও বাকি। এখন তিনি কলকাতায় কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের  ‘মনোহর পাণ্ডে’র শুটিংয়ে।  ফোনের এপারে Tv9 বাংলা আর ওপারে ‘চাচা চৌধুরি’।

আপনি তো বাংলা বেশ ভাল জানেন, বোঝেন। প্রশ্নগুলো তাহলে… না, না, (থামিয়ে দিয়ে) আমি বুঝতে পারি। কিন্তু বলতে একদম পারি না। আসলে কখনও ভোজপুরি, কখনও হিন্দিতে সিনেমা করি। তা-ই একদম মনে রাখতে পারি না। এক-দু’মাস কলকাতায় থেকে যাই, তারপর বাংলা বলাটা শিখে ফেলব।(হাসি)

Gfx

‘দামু’র পর বোধহয় ‘রাস্তা’ ছবি করবার ২০০৩ সালে শেষ কলকাতায় এসেছিলেন। মাঝে আর আসা হয়েছিল? ‘দামু’ করেছিলাম ১৯৯৬-এ। প্রায় ২৫ বছর। তারপর ‘রাস্তা’ করেছিলাম। তারপর কলকাতায়… দাঁড়ান, মনে করি। হ্যাঁ, দু’-তিন বছর আগে এসেছিলাম। আমি একটা নাটক করেছিলাম। ‘পিয়ানো’। কলকাতায় পারফর্ম করেছিলাম।

কিছু বদল দেখলেন? করোনার পর তো সবকিছুই বদলে গিয়েছে। নাহ, তবে আজ হাওড়া স্টেশনে শুটিং করলাম। এখানকার মানুষ অনেক বোঝদার হয়ে গিয়েছে। শুটিংয়ের সময় বিরক্ত করেনি কেউ। কোনও রকম সমস্যায় পড়তে হয়নি। এখানকার দর্শকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, ‘পিয়ানো’ করার সময় দর্শকের অজস্র ভালবাসা পেয়েছি।

আর আপনার গ্রাম ‘পঞ্চায়েত’-এর সমস্যাগুলো মিটেছে? হা হা হা। প্রথম সিজনের সমস্যা তো মিটেছে। এখন পরেরগুলো তৈরি হচ্ছে। ওরা (প্রযোজনা সংস্থা) বোধহয় দু’টো সিজন একসঙ্গে করতে চলেছে।

অভিনয় করছেন প্রায় ৩৫ বছর… পিছনে ফিরে তাকালে কী মনে হয়? আমি যখন সামনের দিকে তাকাই, সবকিছু খালি-খালি লাগে। আর পিছনে তাকালে মনে হয় এখনও কিছুই করিনি। এখনও তো শিখেই চলেছি, সন্তুষ্টি মেলেনি। (হাসি)

আচ্ছা এখন আর গান করেন না? ভাইয়া, আমি থিয়েটারের লোক, যা গেয়েছি, তা লোকসঙ্গীত। আসলে এখন যে ধরণের গান হয়, তার সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারি না। সে কারণেই হয়তো সবার জন্য গাই না। নিজের জন্য গাই। করোনার সময়ে বাড়িতে আমার পুরনো গানগুলো শুনেছি, গেয়েছি। কলকাতা থেকে বাঁশি কিনেছিলাম, সেটা বাজিয়েছি। এখনও পুরনো দিনের গান শুনি। এখন সব সিন্থেটিক হয়ে গিয়েছে। আগেকার গানে কথা ছিল, কবিতা ছিল, আত্মা ছিল। এখন আজ যা শুনছি, কাল ভুলে যাচ্ছি।

আপনার অভিনয় নিয়ে কথা হয়, প্রশংসা হয়, চর্চা হয়। কিন্তু এখনও জাতীয় পুরস্কারের সম্মান আপনি পাননি। আক্ষেপ হয়? না, না ভাইয়া আমার কোনও আক্ষেপ হয় না। লোকে দেখুক আমার কাজ, তাহলেই হবে। জাতীয় পুরস্কারের জন্য যদি কাজ করি, তার মানে আমার উদ্দেশ্যটাই ভাল নয়। আমি বেইমান হয়ে যাব। আমি পুরস্কারের জন্য সেই বেইমানি করতে পারব না। কেউ কিছু দেওয়ার হলে দেবে, না দেওয়ার হলে, দেবে না। দর্শকের স্বীকৃতিই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পুরস্কার।

এই যে এত ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আসছে… এত সিরিজ হচ্ছে। এটাকে কীভাবে দেখছেন? এখনও অবধি তো ঠিকই আছে। লোকজন পরিশ্রম করছে। এত দিন ধরে যে ১০০০-২০০০ পর্বের সিরিয়াল চলছিল, সেগুলো ব্যবসা করছিল আর আমাদের সংস্কৃতি নষ্ট করছিল। এখন মানুষ বুঝতে পারছে। এই দেখুন না মানুষ কিন্তু ‘পঞ্চায়েত’ দেখল, মাটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক গল্প মানুষ তারিয়ে-তারিয়ে উপভোগ করল। গালাগাল নেই। ড্রামাবাজি নেই। আমাদের দেশের সহজ গল্প ছিল। আপনি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে জোর করে গল্পে যা হোক কিছু দেখাতে থাকেন, মানুষ বিশ্বাস করবে? আসলে যারা এইগুলো লেখে, তারা জীবনটাকে ভালভাবে দেখেনি।

আপনার কথা মতো ভবিষ্যতে ওটিটির চাহিদা বাড়বে… তাহলে কি বড় পর্দায় সিনেমা দেখার লোক কমবে? একটা কথা বলি, যাঁরা কম বাজেটের ছবি করতেন, যাদের পুঁজি কম, যাঁরা আসলে কাজ করতে চায়, তাঁদের রাস্তা খুলে গেল। এটা আমার নিজের চোখে দেখেছি, থিয়েটারের ভাল-ভাল ছেলেপুলে ফিল্মে চান্স পেত না। একটা ফিল্ম মাফিয়া চলছিল। ছোট সিনেমা রিলিজের খবর পেয়ে বড় বাজেটের ফিল্ম একই দিনে রিলিজ করত। কম বাজেটের ফিল্মের শো দেওয়া হত ভোরে এবং রাত ১২টায়। আর অন্য় সব শো (বড় ব্যানারের ফিল্ম) চলে যেত তাদের হাতে। ভাল-ভাল ছবি চলেনি। আমি তো বলব যা হয়েছে, দারুণ হয়েছে।

থিয়েটার, সিনেমা না ওয়েব সিরিজ? যদি একটাকে বাছতে হয় অভিনয়ের কোন মাধ্যমকে বাছবেন? থিয়েটার। থিয়েটারে সন্তুষ্টি আছে। রোজ শিখতে পারি। ফিল্মে এটা হয় না। ওখানে সব কিছু তাড়াতাড়ি হয়, তাই শেখার অবকাশ থাকে না। আমি গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে নৌটঙ্কি-পার্সি থিয়েটার-যাত্রা করেছি। এখন তো ওসব…

কলকাতায় কিন্তু যাত্রা উৎসব চলছে…

তাই নাকি? জানতাম না তো।

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় একজন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক—এটা ছাড়া ওঁর বিষয়ে কিছু জানতেন? না, শুনেছিলাম শুধু। তারপর স্ক্রিপ্ট পড়লাম। নেটে সার্চ করলাম। তারপর জানলাম ওঁর ব্যাপারে। জানলাম পরিচালক নন, ও দারুণ অভিনেতাও।

 

কৌশিকের ছবি দেখেছেন? একটা ছিল না, ‘নগরকীর্তন’। ওটা দেখেছি। ওঁর আরও অনেক ছবি দেখার ইচ্ছে আছে।

আপনার নাম ‘রঘুবীর’। রামের আরেক নাম ‘রঘুবীর’। এই ‘রাম’ নাম নিয়ে সারা দেশে যা চলছে, তা দেখেশুনে কী মনে হয়? আমার বাবা রামায়ণ পড়ে আমার নাম রেখেছিলেন। ভারত তো রামের দেশ। তাঁর ত্যাগের কথা মানুষ জানে। দেশবাসীর জন্য ওঁর বলিদানের কথা মানুষ মনে রেখেছেন। তাই এ দেশে রাম রাজত্ব নিয়ে তো কোনও অসুবিধে নেই। আমার দাদুর এক মন্দির আছে। সেখানে সব জাতের মানুষ এসে ভজন গাইতেন। ছোঁয়াছুঁয়ির কোনও ব্য়াপারই ছিল না। না ছিল উঁচু-নিচুর ভেদ। কিন্তু এখন যা হচ্ছে তা দেখে কষ্ট পাই।

আমি পাঁচজনের নাম বলব। শুনে আপনার প্রথম প্রতিক্রিয়া জানাবেন। আচ্ছা।

পঙ্কজ ত্রিপাঠি পরিশ্রমী অভিনেতা।

 

জিতেন্দ্র কুমার ও একটু ছোট। সবে শুরু করেছে কাজ। একেবারে কাজের মধ্যে ডুবে যায়।

রাজকুমার রাও ভাল, কিন্তু ও একটু ভেসে যাচ্ছে। ওকে একটু সামলাতে হবে।

ভিকি কৌশল ভিকি ওর অভিনীত চরিত্রে আলাদা কিছু করার চেষ্টায় থাকে। ওর মধ্যে বিচারবুদ্ধি রয়েছে।

নওয়াজ ভাল অভিনেতা। কিন্তু ও একই রকম অভিনয় করছে। আরও যত্নশীলভাবে নিজেকে আরও আবিষ্কার করা উচিত।