Abhishek Chatterjee demise: তখনকার দিনে শিখিয়েছিলেন জিম করা কাকে বলে, লোহা তোলা কাকে বলে: শেষ শুটিংয়ের সঙ্গী ভরত কল
Bharat Kaul on Abhishek Chattopadhyay Death: ভরত কল বলেছেন, "সেটে অসুস্থ হয়েও মিঠুদা বলেছিল, আমি হাসপাতালে যাব না..."
ভরত কল
গতকাল রাতে আমি ও মিঠুদা (টলিউড ইন্ডাস্ট্রির এটাই আদরের ডাকনাম অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের) ‘স্মার্ট জোরি’র সেটে ছিলাম। জিৎ যেটার সঞ্চালক। সেখানে ওঁ-ও প্রতিযোগী, আমিও প্রতিযোগী। গতকাল মিঠুদার শরীরটা খারাপ ছিল। আমিই পাঁজাকোলা করে গাড়িতে তুলে দিয়েছিলাম মিঠুদাকে। বলেছিলাম, “তুমি বাড়ি গিয়ে রেস্ট নাও।” যেটাই খাচ্ছিল, বমি করে দিচ্ছিল। প্রেশার একেবারে ফল করে গিয়েছিল। ৮০-তে নেমে গিয়েছিল। সেটেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আগেরদিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘খড়কুটো’ সিরিয়ালের কাজ করেছিলেন। সেখানেই হয়তো কিছু খেয়ে ফুড পয়জ়নিং হয়ে গিয়েছিল।
আপনারা যাঁরা মিঠুদাকে স্ক্রিনে দেখেছেন, তাঁদের কাছে শকিং খবর। আর আমাদের কথা ভাবুন তো! আমরা তো ওঁকে নিয়ে কাজ করেছি দীর্ঘদিন। অনেক কথাই মনে আসছে। এমন একজন মানুষ ছিলেন, যিনি তখনকার দিনে শিখিয়েছিলেন জিম করা কাকে বলে। লোহা তোলা কাকে বলে। ট্রেনিং কাকে বলে। তখনকারদিনে প্রথম তারকা মিঠুদা, যিনি জিমে বিশ্বাসী ছিলেন। এরকম একজন মানুষের চলে যাওয়া আমাদের কাছে শকিং। তাপসদার চলে যাওয়াতেও ঠিক এভাবেই শকড হয়েছিলাম। মিঠুদা তো আরও কম বয়সে চলে গেলেন।
বহু তারকাই এভাবে এত কম বয়সে চলে যান। মাত্র ৫৭ বছরে মিঠুদার চলে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না। এটা তো কোনও বয়সই নয় বলুন। মাঝে শরীরের দিকে খেয়াল দিতেন না সেভাবে। কিন্তু গতবছর থেকে আবার সচেতন হয়েছিলেন মানুষটা। এই নিয়ে কিন্তু আমার মিঠুদার সঙ্গে নিয়মিত কথাও হত।
কিন্তু সেই স্বাস্থ্য সচেতন মিঠুদাও পাল্টেছিলেন। এটা হয় জানেন তো। একজন অভিনেতার জীবন খুবই কঠিন। যে মানুষ প্রায় ২৫০ ছবির হিরো… তাঁকে তারপর আর…। যাই হোক… অভিনেতারা জানতে পারেন না কোনও মোড়ে কী দাঁড়িয়ে আছে!
অনেক কাজ করতে চাইতেন মিঠুদা। এত ছবিতে অভিনয় করার পরও বড় পর্দা থেকে সরে আসতে হয়েছিল। কিন্তু এটা ভেবে ভাল লাগে, যে শেষদিকে লীনা গঙ্গোপাধ্যায়রা কিংবা বলব ম্যাজিক মোমেন্টস, ‘ইচ্ছেনদী’ থেকে মিঠুদাকে টানা কাজ দিয়েছিলেন। টেলিভিশনের পর্দায় চুটিয়ে কাজ করেছিলেন মানুষটা। আমি সকলকেই বলি, কাজ করাটা খুব জরুরি। বড় পর্দা, ছোট পর্দা একটা মাইন্ড গেম। আমিও প্রায় ১৩০-১৪০টি ছবিতে কাজ করেছি। তার মানে এটা নয় আমাকে এখনও বড় পর্দাতেই কাজ করতে হবে। আমার মনে হয় ছবি করা টাইম ওয়েস্ট। মনে হয় তার চেয়ে ভাল দুটো টেলিভিশন সিরিয়ালে অভিনয় করা।
টেলিভিশনে দারুণ-দারুণ কাজ করেছেন মিঠুদা। সাম্প্রতিক কালে ‘মোহর’, ‘খড়কুটো’ সবেতেই তিনি ছিলেন। চরিত্রগুলোতে ভীষণ জীবন্ত করেও তুলেছিলেন। লীনাদি কিন্তু ওঁকে নিয়েই চরিত্রগুলো তৈরি করেছিলেন।
এই মুহূর্তে বার বার গতকাল রাতের কথা মনে হচ্ছে। রাত ২.৩০টের সময় প্রায় চ্যাংদোলা করে গাড়িতে তুলেছিলাম মিঠুদাকে। শুটিং করতে পারছিলেন না। সোফাতেই শুয়েছিলেন গোটা দিন। পেটে কোনও খাবারই রাখতে পারছিলেন না। সব বমি করে দিচ্ছিলেন। হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু মিঠুদা কিছুতেই রাজি হলেন না। বললেন, “আমি হাসপাতালে যাব না”।
আরও পড়ুন: Abhishek Chatterjee Demise: ‘হয়তো ওঁর মনের মধ্যে অনেক ক্ষোভ ছিল,’ কাঁদতে-কাঁদতে কেন বললেন ঋতুপর্ণা?