“যাঁরা ট্রোল করেন, তাঁরা সিরিয়াল দেখেন না, সিরিয়ালটা সকলের জন্য নয়”
বিশ্বজিৎ শুটিং শেষে ওড়িশা বেড়াতে গিয়েছেন। পল্লবী কলকাতায়। সময় দিচ্ছেন নিজেকে। তারই মধ্যে একসঙ্গে ডাউন মেমরি লেনে হাঁটলেন তাঁরা। ফ্ল্যাশব্যাকে ছুঁয়ে দেখলেন ফেলে আসা হাসি, মজা, অভিমানের টুকরো মুহূর্ত।
পল্লবী শর্মা (Pallavi Sharma) এবং বিশ্বজিৎ ঘোষ (Biswajit Ghosh)। ‘কে আপন কে পর’ ধারাবাহিকের ‘জবা’-‘পরম’ হয়ে চার বছরের কিছু বেশি সময় ধরে টেলিভিশনে দর্শকের মনোরঞ্জন করেছেন। আগামী ২৭ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে এই ধারাবাহিক। বিশ্বজিৎ শুটিং শেষে ওড়িশা বেড়াতে গিয়েছেন। পল্লবী কলকাতায়। সময় দিচ্ছেন নিজেকে। তারই মধ্যে একসঙ্গে ডাউন মেমরি লেনে হাঁটলেন তাঁরা। ফ্ল্যাশব্যাকে ছুঁয়ে দেখলেন ফেলে আসা হাসি, মজা, অভিমানের টুকরো মুহূর্ত।
হঠাৎ করেই কি বন্ধ হয়ে গেল ‘কে আপন কে পর’?
পল্লবী: বন্ধ হওয়ার গুজব এই সাড়ে চার বছরে অনেকবার শুনেছি। কোনও জিনিসই তো সারা জীবন চলতে পারে না। যখন শুরু হয়েছে, শেষও হবে। সেটা জানতাম। তাই মানসিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলাম।
বিশ্বজিৎ: ঠিকই। তবে যখন বন্ধ হয়ে যাবে শুনেছিলাম, উড়িয়ে দিয়েছিলাম। কারণ এমন গুজব অনেক শুনেছি। তবে আমার মনে হয়, এই গল্পটা বাড়তে-বাড়তে এমন জায়গায় চলে গিয়েছিল, আমাদের কারও আর নতুন কিছু দেওয়ার ছিল না।
পল্লবী: লকডাউনের পরও আমাদের সিরিয়াল চলছিল। স্লট পরিবর্তনের পরও টিআরপি দিচ্ছিল। যাই-ই হোক, এতদিন ধরে যে অন্য সব সিরিয়ালের সঙ্গে টক্কর দিতে পেরেছি আমরা, আমি তাতেই খুশি।
বিশ্বজিৎ: আমি বিশ্বাস করি, যতই হাসাহাসি হোক, ট্রোলিং হোক, এতদিন যে চলেছে সেটা দর্শকের ভালবাসা ছাড়া সম্ভব ছিল না। দর্শকের ভালবাসার কারণেই আমরা সারভাইভ করতে পেরেছি।
আরও পড়ুন, অভিষেক বচ্চনের কোন কোন সিক্রেট শেয়ার করল ইনায়ৎ?
দর্শক ভালবেসেছেন, তাহলে ট্রোল করলেন কারা?
বিশ্বজিৎ: এই উত্তরটা আমি দিচ্ছি। যাঁরা ট্রোল করেন, তাঁরা ফেসবুকে ট্রোল করেন। তাঁরা ফেসবুক করেন, সিরিয়াল দেখেন না। আর যাঁরা সিরিয়াল দেখেন, তাঁরা ফেসবুক করেন না। আমি একটা উদাহরণ দিচ্ছি। অনস্ক্রিনে জবা মারা যাওয়ার পর…
পল্লবী: (কথা থামিয়ে দিয়ে) হ্যাঁ, ওটা ভাইরাল হয়েছিল।
বিশ্বজিৎ: ওটাই বলছি। অনস্ক্রিনে জবা মারা যাওয়ার পর এক মা বসে কাঁদছিলেন। মানে ওঁর কাছে জবা মেয়ের মতো ছিল। এবার বাস্তবে ওঁর ছেলের হয়তো এই ইমোশনটা নেই। সে সিরিয়াল দেখে না। ওই সময়টা খেলা দেখতে পারলে তার ভাল লাগবে। সে হয়তো ফেসবুক করে। ফলে এই দু’টো এক করলে চলবে না। সিরিয়ালটা সকলের জন্য নয়।
‘কে আপন কে পর’ বহুবার ট্রোল হয়েছে। নিজেরা যখন কাজ করছিলেন, তখন এসব নিয়ে আলোচনা হত শুটিংয়ে?
পল্লবী: আমরা এগুলো দেখে মজা পাই। মানে ট্রোলিং আমাদের মোটিভেটও করে না। আবার ডিমোটিভেটও করে না।
বিশ্বজিৎ: আমি একটু অন্যভাবে বলছি। এটা আমাদের কাজ। সেটা করতেই হবে। যে যাই-ই বলুক, যত আজগুবি লাগুক, প্রযোজক এবং দর্শক যা চাইবেন, আমাদের সেটা করতে হবে।
আজগুবি লাগে কেন কখনও ভেবেছেন?
বিশ্বজিৎ: বাজেট। আমাদের তো বাজেট থাকে না। বিদেশের দৃশ্য যদি সল্টলেকে শুট করতে হয়, সেটা তো সেরকমই হবে।
যদিও চিত্রনাট্য নিয়ে অভিনেতা-অভিনেত্রীর কিছু বলার থাকে না। তবু যদি কোনও কিছু আউট অফ দ্য কনটেক্সট মনে হয়, বলার স্বাধীনতা ছিল?
পল্লবী: আমি এসব অত গভীরে গিয়ে ভাবি না। শুধু নিজের কাজটা বুঝি। গল্প পরিবর্তন করতে পারিনি ঠিকই। কিন্তু কোনও লাইন, মনে হলে নিজের মতো করে বলার স্বাধীনতা ছিল। কোনও-কোনও জায়গায় শুনেছি, যা লেখা থাকবে সেই সংলাপই বলতে হবে, এমন ব্যাপার রয়েছে। আমাদের সেই স্বাধীনতাটা ছিল। আর একটা ব্যাপার বলব। আমি অন্য কোনও ডিপার্টমেন্টের কাজে ঢুকতে চাইনি। ওঁদের যদি আমি শেখাতে যাই, ওঁরাও আমাকে আগামিকাল শেখাতে আসবেন। তাতে অনেক বেশি দ্বন্দ্ব শুরু হবে।
আরও পড়ুন, বউ বলেছে, এতদিন তো আমি জানতামই, এবার গোটা পৃথিবী জানে ‘মকবুল’ কত অনুগত: সাজি চৌধুরি
বিশ্বজিৎ: আমি আবার বরাবরই খুঁতখুঁতে। ও যেটা বলল, লাইন চেঞ্জ করে বলার স্বাধীনতা ছিল আমাদের। সে জন্যই সাবলীল হয়েছে এতটা। যাঁরা ধারাবাহিকের চিত্রনাট্য লেখেন, তাঁরা সত্যিই ট্যালেন্ডেড।
যেটা বললেন, সেটা বিশ্বাস করেন?
বিশ্বজিৎ: অবশ্যই। যাঁরা কাজ করেন, তাঁরাই বোঝেন। তাই বাইরে থেকে যাঁরা হাসাহাসি করেন, তাঁদের বলব, একবার ধারাবাহিকে কোনও চরিত্রে অভিনয় করলে বুঝতে পারবেন কতটা দক্ষতা থাকলে এই কাজগুলো করা যায়।
দীর্ঘদিন পরে ছুটি। কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন? নতুন কাজ আবার কবে শুরু করবেন?
পল্লবী: আমি এখন নিজেকে সময় দিচ্ছি। জবা চরিত্রটা থেকে বেরনোর জন্য একটা গ্যাপ নিচ্ছি। এই চার বছরে পল্লবী যা-যা করতে পারেনি, এবার সে সব করবে। তারপর আবার কাজ।
বিশ্বজিৎ: সত্যিই পল্লবীর উপর প্রচুর চাপ ছিল। আমি তো সামনে থেকে দেখেছি। ওকে মনে মনে বহুবার প্রণাম করেছি। আর এটা অনেকে স্বীকার করেন না, আমার কিন্তু স্বীকার করতে কোনও অসুবিধে নেই। বাংলা ধারাবাহিক মহিলাকেন্দ্রিক। ফলে ওর চাপ অনেক বেশি ছিল। আমি তো নিজেকে সাপোর্টিং অ্যাক্টর মনে করি।
করোনার আবহে টেলিভিশনে নাকি শিল্পীদের পারিশ্রমিক অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনারা ভুক্তভোগী?
পল্লবী: বাজেটের এফেক্ট আমাদের উপর খুব একটা পড়েনি। আমাদের হাউজে পারিশ্রমিক কমানো হয়নি। তবে করোনা এখন অনেক বেশি ব্যবসা হয়ে গিয়েছে।
বিশ্বজিৎ: একদম ঠিক। করোনা নিয়ে সকলে বিজনেস করছে। প্রযোজক বলছে, স্যানিটাইজারের খরচ বেড়েছে। আরে, সে তো আমাদের বাড়িতেও আগে স্যানিটাইজার লাগত না…।
পল্লবী: করোনাকে নিয়েই নর্ম্য়াল লাইফে ফিরতে হবে। কারণ করোনার কোনও এক্সপায়ারি ডেট নেই। সবটাই যখন নর্ম্য়াল হচ্ছে, পারিশ্রমিকও নর্ম্য়াল হোক।
আরও পড়ুন, বাংলা ছবির প্রচারের ধারা বদলকে কীভাবে দেখেন নেপথ্যের কারিগররা?
‘কে আপন কে পর’ এমন কী দিল, যেটা সারা জীবন সঙ্গে থাকবে?
বিশ্বজিৎ: এমন সব প্রশ্ন করছেন, পুরো ফ্ল্যাশব্যাকে চলে যাচ্ছি। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব ভাবছি (হাসি)।
পল্লবী: আমার তো মনে হয়, পরিবার। কথাটা ক্লিশে মনে হলেও এই পরিবার আমাকে এত ভাল স্মৃতি দিয়েছে, সেটা সারা জীবন থেকে যাবে। কলটাইম, মেকআপ রুম, লাইট… কত কিছু নিয়ে কত ঝগড়া হয়েছে। কিন্তু যত শেষের দিন এগিয়ে এসেছে, তত যেন সম্পর্কের রসায়নগুলো পাল্টে গিয়েছে।
বিশ্বজিৎ: সত্যিই। আমি পল্লবীর মতো সহকর্মী পেয়েছি। সিমরনের মতো বাচ্চা মেয়ে পেয়েছি। আমাদের চিল্লার পার্টি.., কত শো করেছি একসঙ্গে। সেখানে কত মানুষ আমাদের প্রণাম করেছেন। কেন করেছেন জানি না। আর পল্লবীকে দেখেছি, অসম্ভব পরিশ্রম করতে পারে। রাত তিনটের সময়ও জেগে আছে। শট দিচ্ছে।
পল্লবী: আর ওর দুপুরে খাওয়ার পর ভাতঘুম চাই। রাত দশটার পর ঘুম পেয়ে যাবে (হাসি)।
বিশ্বজিৎ: এই শুরু হল (হাসি)…
পল্লবী: ও খুব প্যাম্পার্ড বয়। ওকে দেখে মায়া লাগত আমার। রাত দেড়টার সময় যখন বলছে, ‘দাদা শট দেবে চল’। ও তো বুঝতেই পারছে না কোথায় আছে। আর আমাকে আপনি রোবট বলতে পারেন। এটা আমার জন্মগত।
চার বছরে নিজেদের নিয়ে প্রচুর গসিপ শুনেছেন নিশ্চয়ই। কোনটা শুনে নিজেরা হেসেছিলেন?
পল্লবী: এটা আমি আগে বলব। আমি শুনেছিলাম আমার অনস্ক্রিন ছেলে মানে ইন্দ্রজিতের সঙ্গে নাকি আমি প্রেম করছি। সেটা ইউটিউবেও ছিল (হাসি)…
বিশ্বজিৎ: আর ওটা বল, মিঠুনদার ছোট ছেলের সঙ্গে ওর বিয়ে (হাসি)…।
আরও পড়ুন, নেপথ্যের কারিগররা কি আড়ালেই থাকবেন? হেয়ার স্টাইলিস্টের মৃত্যুতে ফের উঠল প্রশ্ন
মিঠুন চক্রবর্তী?
বিশ্বজিৎ: হ্যাঁ (হা হা হা)…
পল্লবী: এটা তো এমন ছড়িয়েছিল, ইন্ডাস্ট্রির লোকেরাও আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল। এমনকি মিঠুনদাও জিজ্ঞেস করেছিল।
বিশ্বজিৎ: (হা হা হা) মিঠুনদা একটা অনুষ্ঠানে ডেকে বলেছিল, ওই তো ওই মেয়েটা না? যার সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে হওয়ার কথা? মিঠুনদার স্ত্রী নাকি ইউটিউবে মিঠুনদাকে দেখিয়েছিলেন। তবে আমি আবারও বলছি, আমি অত জনপ্রিয় নই। পল্লবীর পারফরম্যান্সের জন্যই সিরিয়ালটা চলেছে। ও ছিল বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।