ওয়ার্ক ফ্রম হোমে বাড়ছে ডায়াবিটিজ আক্রান্তের সংখ্যা
রাতে ভাল ঘুম, সময়ে খাওয়াদাওয়া, চিনি খাওয়া কমিয়ে দেওয়া, দুশ্চিন্তা না করা ও চাপ মুক্ত হয়ে ওয়ার্ক ফ্রম হোমে কাজ করা প্র্যাকটিস করুন এখন থেকে। দেখবেন, কোনও সমস্যাকেই সমস্যা বলে মনে হচ্ছে না।
করোনাকালে অনেকেই অফিসে যাচ্ছেন না। বাড়িটাই হয়ে উঠেছে অফিস। এই পরিস্থিতির নাম ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’। বাড়িতে বসেই এখন মিটিং, প্রেজেন্টেশন, রিসার্চ, পড়াশোনা, সবটাই চলছে। ল্য়াপটপের সামনে মুখ গুঁজে চলছে অফিসের কাজ। দিন থেকে রাত, রাত থেকে দিন। একদিকে যেমন বাড়ির মানুষ আপনাকে কাছে পাচ্ছেন সর্বক্ষণ। বৃদ্ধ বাবা-মায়েরা কিংবা ছোট্ট শিশু আপনাদের চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু অন্য়দিকে ওয়ার্ক ফ্রম হোম সর্বনাশ করছে আপনার স্বাস্থ্যের।
১. ওবিসিটি – বাড়িতে বসে কাজ! সে কী আর সবসময় চেয়ার টেবিলে বসে হয়। খাটে, সোফায়, কাউচে বসেই চলে ‘অফিস-অফিস’ দিনযাপন। বাইরে বেরনোর বালাই নেই। হাঁটা চলা নেই। আর নেই এক্সারসাইজ করার ফুরসত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ওয়ার্ক ফ্রম হোম নাকি ওজন বাড়চ্ছে কর্মীদের। কুড়ে করে দিচ্ছে তাঁদের। ওবিসিটি হওয়ার প্রবণতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে কাজের ফাঁকে হাঁটাহাঁটি করুন, সুযোগ বুঝে এক্সারসাইজ করুন। আর হ্যাঁ, কাজ করতে করতে খাওয়াদাওয়ার দিকেও নজর দিন। অতিরিক্ত পরিমাণে জাঙ্ক খাবার, চকোলেট খাবেন না।
২. স্ট্রেস – করোনাকালে অধিকাংশ অফিস বন্ধ। স্কুল-কলেজ কবে খুলবে, তার কোনও ঠিক নেই। এই সময় স্ট্রেস বা চাপ বাড়ে বেশি। অফিসে থাকলে আপনাকে বাড়ির কাজেও মন দিতে হয় না। কিন্তু বাড়িতে থেকে অফিসের কাজ করলে বাড়ে সমস্যা। এদিকে বাড়ির লোক আশা করে থাকেন, আপনিও তাঁদের সঙ্গে কুটো নেড়ে দুটো করবেন। অন্যদিকে অফিস ভাবতে শুরু করে, বাড়িতেই তো আছেন, আপনাকে যত খুশি কাজ দেওয়া যেতে পারে। কাজ ব্যালেন্স করতে করতে আপনার বাড়ে চাপ। তাই দু’দিক বজায় রেখে চলাই ভাল। বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে বোঝান অফিস আওয়ারে আপনাকে যেন বাড়ির কাজ না করতে বলেন তাঁরা। অফিসে বলুন, ওয়ার্ক ফ্রম হোমে থাকা মানেই ১৪ ঘণ্টা কাজ, তা কিন্তু নয়। বুদ্ধি করে চলুন।
৩. উদ্বেগ – ওয়ার্ক ফ্রম হোমে থাকলে সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকার সময় বেড়ে যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকা মানেই নানা ধরনের খবরে চোখ চলে যাওয়া। অফিসে থাকলে সেটা হয় কম। খবরের অধিকাংশেই থাকে নেতিবাচকতা। খবরগুলি নিয়ে আপনি চিন্তা করতে শুরু করে দেন। কাউকে বলতেও পারেন না মন খুলে, যে কারণে হতাশা গ্রাস করে আপনাকে। এতে আপনার ঘুমের ব্য়াঘাত ঘটতে পারে অনায়াসেই। স্ট্রেস হরমোনের উপরও প্রভাব পড়ে অনেকটাই। তাই কাজ করতে করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় উঁকিঝুঁকি দেওয়া বন্ধ করুন। শিফ্টের সময় অনুযায়ী কাজ করুন। স্মার্ট ওয়ার্কার হন। অযোথা সময় নষ্ট করবেন না। চটপট কাজ শেষ করে পরিবার প্রিয়জনের সঙ্গে কোয়ালিটি সময় কাটান।
৪. ক্লান্তি – ওই যে কথা হল, সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতেই হবে আপনাকে। এটিকে বলে টাইম-ম্যানেজমেন্ট। অফিসের কিউবিক্যালে কাজ করতে বসলে মনযোগ থাকে অনেক বেশি। সেই মনযোগের মাত্রা ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ক্ষেত্রে কমে যায়। তাই বারবার মন অন্যদিকে চলে যায়। কাজের ফাঁকে অনেকে সিনেমা কিংবা ওয়েব সিরিজ দেখতে শুরু করে দেন। বাড়ির মানুষের সঙ্গে গল্প করেন কিংবা ঘুমিয়ে পড়েন। এটা করলে কিন্তু ২৪ ঘণ্টাতেও কাজ শেষ হবে না আপনার। তাতে ক্লান্তি বাড়বে বই কমবে না। প্রয়োজনে দরজা বন্ধ করে কাজ করুন।
৫. ডায়াবিটিজ – অতিরিক্ত চিনি খেলেই ডায়াবিটিজ হয় না। আরও অনেককিছুর কারণেই হতে পারে রক্তে সুগারের পরিমাণ। এটিকে বলা হয় লাইফস্টাইল ডিজিজ। অর্থাৎ, যে রোগ হয় জীবনযাত্রায় গোলমালের কারণে। খাবার, দুশ্চিন্তা, পরিশ্রম, ঘুমের সাইকেল; সবটাই ডায়াবিটিজ হওয়ার অন্যতম কারণ। এসবই বিঘ্নিত হয় ওয়ার্ক ফ্রম হোমের কারণে। ফলে ডায়াবিটিজ হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে। তেমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। রাতে ভাল ঘুম, সময়ে খাওয়াদাওয়া, চিনি খাওয়া কমিয়ে দেওয়া, দুশ্চিন্তা না করা ও চাপ মুক্ত হয়ে কাজ করা প্র্যাকটিস করুন এখন থেকে। দেখবেন, কোনও সমস্যাকেই সমস্যা বলে মনে হচ্ছে না।
মনে রাখবেন, করোনা অতিমারির সময় অনেক মানুষের কাছে কাজ নেই। তাঁরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সেদিক থেকে দেখতে লেগে আপনি ভাগ্যবান। আপনার হাতে কাজ আছে। পরিবারের সঙ্গে থেকে অফিসের কাজ করছেন। প্রতিদিনের যাতায়াতের পয়সাও জমছে আপনার। কেবল নিজের প্রতি একটু যত্নবান হন। দেখবেন, ওয়ার্ক ফ্রমকে আর অসহ্য বলে মনে হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: পরের গ্রাসে মদ ঢালার আগে দু’বার ভাবুন! হুহু করে বাড়ছে ক্যান্সারের সম্ভাবনা