Deltacron: জিনের গঠন ডেল্টার মতই, ‘ডেল্টাক্রন’ কি সত্যিই নতুন কোনও প্রজাতি নাকি ল্যাবের ভুল?
বাড়ছে কোভিড। তার মধ্যেই নতুন করে আতঙ্ক ধরাচ্ছিল এই ডেল্টাক্রন। কিন্তু সাইপ্রাসের এই নয়া সংক্রমণের সঙ্গে একমত নন বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা
সাইপ্রাসে করোনার নতুন প্রজাতি নিয়ে কয়েকদিন ধরেই হইচই পড়ে গিয়েছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, করোনার ডেল্টা আর ওমিক্রন এই দুই ভ্যারিয়েন্টের মিলমিশে নতুন এক প্রজাতি তৈরি হয়েছে। যার নামকরণ তাঁরা করেছেন ‘ডেল্টাক্রন’। সার্স-কভ-২ ( SARS-CoV-2)-এর মতো সংক্রামক ভাইরাস ঘন ঘন মিউটেশনের মধ্যে দিয়ে তার রূপ বদলাতে পারে। নতুন করে জিনের বিন্যাসও করতে পারে। কিন্তু ‘ডেল্টাক্রন’ আদৌ তৈরি হয়েছে কিনা এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত করে কোনও তথ্য হাতে আসেনি। গবেষক-চিকিৎসকদের দাবি সাইপ্রাসে এখনও পর্যন্ত ২৫ জনের শরীরে এই ‘ডেল্টাক্রনে’র হদিশ মিলেছে। তবে যাঁরা কোভিড আক্রান্ত হয়ে হাসপরাতালে ভর্তি একমাত্র তাদের মধ্যেই দেখা দিয়েছে এই সংক্রমণ। কিন্তু ‘ডেল্টাক্রন’ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও তথ্য দেয়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( WHO)। এমনকী এটি যে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট সে বিষয়েও কিন্তু তাঁরা কোনও কথা বলেননি।
ভাইরোলজিস্ট টম পিকক যেমন বলেছেন, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের জিনের গঠন বিন্যাস যেমন ছিল তেমনই এই ‘ডেল্টাক্রনে’র মধ্যেও দেখা গিয়েছে P681R ও 1452R-এই দুই রকম মিউটেশন। এই দুই মিউটেশন ডেল্টার মধ্যেওল দেখা গিয়েছিল। যেখান থেকে সাইপ্রাসের বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই দুই ভ্যারিয়েন্ট মিলে তৈরি করেছে নতুন প্রজাতি। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়েই সবচেয়ে বেশি চিন্তিত চিকিৎসকরা। কারণ এই ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবেই দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রচুর মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ভেঙে পড়েছিল স্বাস্থ্যব্যবস্থা। হাসপাতালে হাহাকার, নেই অক্সিজেন, নেই বেড। তাই ব্রিটেন স্ট্রেন, দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন প্রজাতি, ব্রাজিলের প্রজাতি এবং ভারতের ডবল ভ্যারিয়েন্টই এখন ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদের।
ওমিক্রন যে রীতিমতো সংক্রামক সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ডেল্টা দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভীষণ রকম সক্রিয় ছিল। আর তাই আলফায় যাঁরা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁদের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ। ডেল্টায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। যাঁরা ডেল্টাক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে তাঁদের জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষায় কিন্তু ওমিক্রনের মত জিনের গঠন পাওয়া গিয়েছে। তবে এই ডেল্টাক্রন ভবিষ্যতে আরও কতটা সংক্রামক হয়ে উঠবে সে বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারছেন না চিকিৎসকেরা।
তবে ভাইরোলজিস্ট টম পিককের সঙ্গে একমত নন অনেকেই। কোস্ট্রিকিস যেমন বলেন, ওমিক্রনের জিন মিউটেশন করে চলেছে। ফলে ডেল্টার কিছু গুণ চাপা পড়ে গিয়েছে। কোনও ভাবেই এটি ডেল্টা আর ওমিক্রনের মিশ্রণ নয়। পরীক্ষাগারে নমুনার ভুল বলেই উল্লেখ করেছেন বারবার। কোস্ট্রিকিস আরও বলেন, তিনি বিভিন্ন দেশে একাধিক ওমিক্রন আক্রান্তের জিনোম পরীক্ষার রিপোর্ট দেখেছেন। কিন্তু কোথাও এই ডেল্টাক্রনের উল্লেখ নেই।
বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করার সময় কিছু ভুল হয়েছে। যেখান থেকেই জিনের এমন বিন্যাস। ডেল্টাক্রন বলে আসলে কিছুই নেই। এখনও পর্যন্ত এরকম কোনও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফেও কিছু বলা হয়নি। যতদিন না এই বিষয়ে বিশদে কোনও তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত আশঙ্কার কিছুই নেই।
আরও পড়ুন: Covid-19 Omicron: ওমিক্রন মোকাবিলায় বুস্টার ডোজই ভরসা, দাবি নয়া সমীক্ষার