করোনাকালে দুয়ারে ন্যাপকিন না দিলে মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে ভেঙে পড়বে কন্যাশ্রী’র ঋতুচক্র

কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরুস হায়দ্রাবাদের মতো বড় শহরের ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সি ৫ হাজার মহিলার উপর এক সমীক্ষা চালিয়েছিল এভারটিন।

করোনাকালে দুয়ারে ন্যাপকিন না দিলে মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে ভেঙে পড়বে কন্যাশ্রী’র ঋতুচক্র
ছবিটি প্রতীকী
Follow Us:
| Updated on: May 31, 2021 | 9:57 PM

সংস্থার নাম ‘এভারটিন’। সংস্থাটি নারী স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নানা সমীক্ষা চালায়। চলতি বছরে শেষ করেছে তাদের ষষ্ঠ বার্ষিক ‘মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন সার্ভে’ বা ‘ঋতুচক্রে স্বাস্থ্যবিধি নিরীক্ষা’। সেই সমীক্ষায় ধরা পড়েছে ভয়াবহ তথ্য। মূলত লকডাউনে আটক মহিলাদের ঋতুচক্রে কোভিড ১৯-এর প্রভাব জানাই ছিল উক্ত সমীক্ষায় বিষয়বস্তু। সমীক্ষা শেষে দেখা যায়—

– ৪১ শতাংশ মহিলা তাঁদের দু’টি ঋতুচক্রের মধ্যে অস্বাভাবিক রকমের অন্তর দেখতে পেয়েছেন! তবে কি এই বিরাট সংখ্যক মহিলা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন! অদ্ভুতভাবে জানা যায়, এতজনের মেনস্ট্রুয়েশন সাইকল-এ গণ্ডগোল দেখা দিলেও মাত্র ১৩.৭ শতাংশ মহিলাই আক্রান্ত হয়েছিলেন কোভিডে!

– সমগ্র মহিলাদের মধ্যে ৩৪.২ শতাংশ জানাচ্ছেন মেনস্ট্রুয়েশন ফ্লো-এর মাত্রার ক্ষেত্রেও ঘটেছে পরিবর্তন।

– ২০ শতাংশ মহিলা জানিয়েছেন, সমগ্র কোভিড অতিমারি চলাকালীন অন্তত একবারের জন্য হলেও তাঁরা পিরিয়ড মিস করেছেন!

– তীব্র যন্ত্রণাদায়ক ঋতুচক্রে অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ২৯.২ শতাংশ মহিলা!

– মেনস্ট্রুয়েশনের সময় জমাট রক্ত পড়ার কথা জানিয়েছেন ২৮.৮ শতাংশ মহিলা!

-সবচাইতে ভয়াবহ বিষয় হল, ২৬.৬ শতাংশ মহিলার ঋতুচক্রে সমস্যা দেখা দেওয়ার পরেও তাঁরা কাউকে কিছু জানাননি। ৩৫.৪ শতাংশ মহিলা শুধুমাত্র বিষয়টি নিয়ে মা বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা বলেছেন। ব্যস, ওই পর্যন্তই! মাত্র, ৩৮ শতাংশ মহিলা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন।

আরও পড়ুন: লকডাউনে চাকুরিরতা মায়েদের ১৭ % ঘুমচুরি করছে কে? প্রকাশ্যে রিপোর্ট

– এভারটিন জানিয়েছে, ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে মেনস্ট্রুয়েশন হাইজিন নিয়ে সচেতনতা এতটাই কম যে তাঁরা সমস্যার কথা সম্পূর্ণ চেপে যান। সমীক্ষায় ৫৮.১ শতাংশ মহিলা জানিয়েছেন, সারাজীবনে কোনও না কোনও সময় তাঁরা সাদা স্রাবজনিতর সমস্যায় ভুগেছেন। এদের মধ্যে মাত্র ২৫.৫ শতাংশ মহিলা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছিলেন।

– জানলে অবাক হতে হয়, ৩৮.১ শতাংশ মহিলা বলেছেন, প্রথমবার পিরিয়ড শুরু হওয়ার পর তাঁরা জানতেনও না ঠিক কী হচ্ছে তাঁর শরীরে!

– ৬৭.৭ শতাংশ মহিলা এখনও মনে করেন, ঋতুচক্রের সময় মেয়েদের কোনওরকম স্পোর্টস-এ অংশ নেওয়া উচিত নয়।

– ৪৩.৮ শতাংশ মহিলা এখনও ওষুধের দোকান থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে লজ্জা পান!

সমাধানের পথ কোথায়?

মানসিক স্বাস্থ্য

এবারটিনকে ৬৪.৫ শতাংশ মহিলা জানিয়েছেন এক অদ্ভুত তথ্য। পিরিয়ডস-এর নানা সমস্যায় তাঁরা প্রত্যেকেই জর্জরিত ছিলেন। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক কোভিড পরিস্থিতি তাঁদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। প্রতিটি সেকেন্ড তাঁদের কাটাতে হচ্ছে অপরিসীম দুশ্চিন্তা, উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু কেন এই উদ্বেগ?

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন বহু মহিলাকেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় জর্জরিত থাকতে হয়। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা গার্হস্থ্য হিংসা, চাকরি থেকে ছাঁটাই হওয়া, স্বামীর মাতাল, বেকার হওয়া, লকডাউনের কারণে বাইরে বেরিয়ে রোজগার করার উপায় না থাকা, নিজের খাদ্যের অভাব এবং নিজের সন্তানকে অভুক্ত থাকতে দেখার কথা বলছেন! তাঁরা বলছেন, উপরিউক্ত সমস্যাগুলি’র মধ্যে কিছু কিছু আগেও ছিল। কোভিড অতিমারি আসার পর মরার উপর পড়েছে খাঁড়ার ঘা। এই বিপুল পরিমাণ মানসিক চাপে মহিলাদরে শরীরের হর্মোনের ভারসাম্যে ঘটছে বিপুল পরিবর্তন। তারই প্রভাব পড়ছে ঋতুচক্রে। তাঁরা সতর্ক করছেন, দীর্ঘদিন ধরে এভাবে ঋতুচক্রের পরিবর্তন ডেকে আনতে পারে অন্যান্য অসুখ! তাই সময়ে কাউন্সেলিং ও ওষুধ সেবন জরুরি।

আরও পড়ুন: এই ৭টি খাবার খেলে বন্ধ্যাত্বের সমস্যার ঝুঁকি রয়েছে পুরুষদেরও ! সতর্কবার্তা গবেষকদের

স্বাস্থ্যবিধি

এভারটিন-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতীয় প্রত্যেক মহিলাকে আধুনিক ঋতুচক্রের স্বাস্থ্যবিধির পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো দরকার। এই প্রক্রিয়ায় বর্তমানে পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। ভারতের কিছু কিছু মহিলা মেনস্ট্রুয়াল কাপ সম্পর্কে অবগত থাকলেও সিংহভাগ মহিলা বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না।

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ঋতুচক্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে এখনও সেভাবে সচতেনতা গড়ে ওঠেনি দেশের বহু জায়গায়। এমনকী বড় বড় শহরেও মহিলাদের মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। অভাব রয়েছে পুষ্টিকর প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যগ্রহণ নিয়ে। গত কয়েকবছরে যেটুকু সচেতনতা গড়ে উঠেছিল, লকডাউনের সময়ে তাও উবে যেতে বসেছে। কারণ পরিবহণ স্তব্ধ। ফলে স্যানিটারি ন্যাপকিনও কিনে আনতে পারছেন না অনেক মহিলা। তাছাড়া রয়েছে স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার জন্য অর্থের অভাব! এমতাবস্থায় বাড়ি বাড়ি স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সরকারের পক্ষ থেকে।