জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে মৃতদেহ, ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী সংঘর্ষে মৃত ২২ জওয়ান

আজকের তল্লাশি অভিযানে দেখা যায় জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিড়িয়ে পড়ে রয়েছে সংঘর্ষের চিহ্ন। গাছের নিচে সেনা জওয়ানদের দেহ থেকে শুরু করে গুলি, মর্টার পড়ে থাকতে দেখা যায়। গতকালের হামলায় প্রায় দুই ডজনেরও বেশি অস্ত্র লুট করেছে মাওবাদী(Maoist)-রা।

জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে মৃতদেহ, ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী সংঘর্ষে মৃত ২২ জওয়ান
এখনও চলছে তল্লাশি অভিযান। ছবি:ANI
Follow Us:
| Updated on: Apr 04, 2021 | 2:21 PM

বিজাপুর: ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় যৌথ বাহিনীর এনকাউন্টারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ২২। রবিবার সকালে জঙ্গলের ভিতর থেকে ১৭ জন জওয়ানের দেহ উদ্ধার হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। বিজাপুরের পুলিশ সুপার জানান, শনিবার দুপুরে তারেম অঞ্চলের জঙ্গলে মাওবাদীদের খোঁজে যৌথ বাহিনী যে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল, তাতে শহিদ জওয়ানের সংখ্যা বেড়ে ২২-এ পৌঁছেছে। এখনও নিখোঁজ এক জওয়ান।

শনিবার মাওবাদী উপস্থিতির খবর পেয়েই ছত্তীসগঢ়ের সুকমা ও বিজাপুরের পাঁচটি ক্যাম্প থেকে প্রায় দুই হাজার জওয়ান তল্লাশি অভিযান শুরু করে। এদের মধ্যে সিআরপিএফ, কোবরা বাহিনী, ডিআরজি ও স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বিজাপুরের তারেম, উসুর ও পামেদ এবং সুকমার মিনপা ও নরসাপুরমে তল্লাশি অভিযান শুরু করে।

সিআরপিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, “মোস্ট ওয়ান্টেড” মাওবাদী নেতা হিদমা ওই জঙ্গলেই উপস্থিত ছিল। তাঁকে ধরার জন্যই এই অভিযান চালানো হয়েছিল, তবে অতর্কিতেই যৌথ বাহিনীর উপর হামলা করে মাওবাদীরা। প্রাথমিক তল্লাশিতে মাওবাদীদের খোঁজ না মেলায় ক্যাম্পে ফিরে আসছিলেন যৌথ বাহিনীর জওয়ানরা। সেই সময়ই চারদিক থেকে হামলা চালায় জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা মাওবাদীরা।

আচমকা হামলায় কিছুটা দিশেহারা হয়ে পড়ে বাহিনীর সদস্যরা। গতকাল ৫ জন জওয়ানের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। সেই সময় নিখোঁজ ছিলেন ২০ জনেরও বেশি জওয়ান। আজ সকালে জানা সুকমার জঙ্গল থেকে ১৪টি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সময় বাড়তেই জানা যায়, আরও তিনটি দেহ, অর্থাৎ এ দিন মোট ১৭টি দেহ উদ্ধার হয়। গতকালের সংখ্যা মিলিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২২-এ।

গতকাল জওয়ানদের খোঁজ না মিললেও, এ দিনের তল্লাশি অভিযানে দেখা যায় জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিড়িয়ে পড়ে রয়েছে সংঘর্ষের চিহ্ন। গাছের নিচে সেনা জওয়ানদের দেহ থেকে শুরু করে গুলি, মর্টার পড়ে থাকতে দেখা যায়। সিআরপিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকালের হামলায় প্রায় দুই ডজনেরও বেশি অস্ত্র লুট করেছে মাওবাদীরা।

এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল। মুখ্যমন্ত্রী জানান, গতকাল মাওবাদী ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যে দীর্ঘ চার ঘণ্টা ধরে গুলির লড়াই চলে। সাতজন আহত জওয়ানকে রায়পুরে চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরিত করা হয়েছে। শহিদ হয়েছেন ২২ জওয়ান। খতম করা হয়েছে অনেক মাওবাদীকেও। তিনি বলেন, “এনকাউন্টার নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও আমায় ফোন করেছেন। তিনি সিআরপিএফ-র ডিজিকে ছত্তীসগঢ়ে পাঠিয়েছেন। আমিও আজ বিকেলেই রাজ্যে পৌঁছবো। আমাদের জওয়ানদের আত্মত্যাগ বিফলে যাবে না।”

অমিত শাহ টুইট করে লেখেন, “ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আমাদের যে বীর জওয়ানরা শহিদ হয়েছেন, তাঁদের আত্মত্যাগ বিফলে যাবে না। শহিদদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। শান্তি ও উন্নয়নের শত্রুদের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।”

রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও টুইট করে বলেন, “ছত্তীসগঢ়ের মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় এনকাউন্টারে যে জওয়ানরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। সমস্ত দেশবাসী এই ঘটনায় ব্যথিত এবং জওয়ানদের আত্মত্যাগের কথা কখনও ভুলবে না।” প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও শহিদ জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে বলেন, “ওনারা অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে লড়াই করেছেন। তাঁদের এই আত্মত্যাগ কোনও দিনও ভোলা হবে না। শহিদদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা রইল।”

আরও পড়ুন: ৯৩ হাজারি কামড় করোনার, উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে মোদী, কোন পথে এগোবে দেশ?