ক্ষতস্থান খোলা, নাকে নল, টাকা দিতে না পেরে হাসপাতালের বাইরেই মৃত্যু ৩ বছরের শিশুর

উত্তর প্রদেশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিল ওই শিশুটি। চিকিৎসার টাকা মেটাতে না পারায় অস্ত্রোপচারের পর ক্ষতস্থানে সেলাইও করা হয়নি বলে অভিযোগ মৃত শিশুটির পরিবারের। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ (Hospital Authority)।

ক্ষতস্থান খোলা, নাকে নল, টাকা দিতে না পেরে হাসপাতালের বাইরেই মৃত্যু ৩ বছরের শিশুর
ছবি: সংগৃহীত।
Follow Us:
| Updated on: Mar 06, 2021 | 5:17 PM

লখনউ: হাসপাতালের সামনেই শুয়ে কাতরাচ্ছে তিন বছরের ছোট্ট শিশু, নাক থেকে তখনও ঝুলছে নল, অস্ত্রোপচারের পর করা হয়নি সেলাইও। তবে হেলদোল নেই চিকিৎসকদের। কারণ শিশুটির দিনদরিদ্র মা-বাবার ক্ষমতা নেই বিলের টাকা মেটানোর। বিগত কয়েকদিন ধরেই উত্তর প্রদেশে(Uttar Pradesh)-র এই নির্মম দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে রয়েছে গোটা দেশ। শুক্রবার বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারায় শিশুটি, এরপরই ঘটনার তদন্তে নামল জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন (National Commission for Protection of Child Rights)। একইসঙ্গে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে উত্তর প্রদেশ সরকারও।

সম্প্রতি, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। ভিডিয়োয় দেখা যায়, হাসপাতালের সামনে কোলে শিশুটিকে নিয়ে বসে রয়েছেন তাঁর মা-বাবা। শিশুটির নাক থেকে ঝুলছে একটি নল। আরেকটি ভিডিয়োয় দেখা যায়, শিশুটির ক্ষতস্থান জুড়ে বসে রয়েছে মাছি। শিশুটির বাবা কাতর আবেদন করে বলছেন, “হাসপাতালের তরফে টাকা নেওয়ার পর চিকিৎসকরা হাত তুলে নিয়েছেন। তাঁরা বলছেন আর কিছু করা সম্ভব নয়। ওনারা পাঁচ লাখ টাকা চেয়েছিলেন, তাই-ই দেওয়া হয়েছে। তিনবার রক্তও চেয়েছিলেন, তাও জোগাড় করেছি আমরা। কিন্তু এখন ওনারা চিকিৎসা করতে অস্বীকার করছেন।”

মৃত শিশুটির পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালের তরফে বারবার টাকার দাবি করা হয়। সেই টাকা মেটাতে না পেরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা করতে অস্বীকার করে। এমনকি অস্ত্রোপচারের পর ক্ষতস্থানে সেলাইও করা হয়নি। যদিও ইউনাইনেড মেডিসিটি হাসপাতালের তরফে সেই অভিযোগ অস্বীকার করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, প্রথমে ওই শিশুটি ১৫দিন ভর্তি ছিল, একথা সত্যি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাঁকে অন্য একটি সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ১.২ লাখ টাকা বিল হলেও ওই দম্পতিকে কেবল ৬০০০ টাকা দিতে বলা হয়েছিল। মৃত্যুর তিনদিন আগেও শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়নি। ফলে এই ঘটনায় হাসপাতালের তরফে কোনও গাফিলতি নেই।

আরও পড়ুন:করোনা টিকা নেওয়ার পর কি মদ্যপান বন্ধ রাখতে হবে? উত্তর দিল স্বাস্থ্যমন্ত্রক

এদিকে, পুলিশের অতিরিক্ত সুপারিন্টেন্ডেন্ট সমর বাহাদুর জানান, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ওই শিশুটিকে একটি প্রাথমিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তাঁর পেটে অস্ত্রোপচার হয়। পরবর্তী সময়ে তাঁকে এসআরএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু তাঁর পরিবার তাঁকে শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পর ফের এই বেসরকারি হাসপাতালেই তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে।

হাসপাতালের বাইরে বসে থাকলেও কেন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি বা চিকিৎসা করা হয়নি, সেই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের তরফে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আলাদাভাবে তদন্ত শুরু করেছে উত্তর প্রদেশ প্রশাসনও।

আরও পড়ুন: Assam Assembly Election 2021: আসনরফায় অসন্তুষ্ট সুস্মিতা দেব, রহস্য পদত্যাগ ঘিরে