Waste Management: ভারতের কঠিন বর্জ্যের ৩২ শতাংশই বেআইনিভাবে পোড়ানো হয় অথবা নালায় গিয়ে জমে

Waste Management: বিশ্ব পরিবেশ দিবসের ঠিক আগেই, 'দ্য স্টেট অব ইন্ডিয়াস এনভায়রনমেন্ট ২০২৩: ইন ফিগারস' নামে ভারতের দূষণ ও বর্জ্য পদার্থ পরিচালনার বিষয়ে এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে অলাভজনক সংস্থা 'সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট' বা 'সিএসই' (CSE)।

Waste Management: ভারতের কঠিন বর্জ্যের ৩২ শতাংশই বেআইনিভাবে পোড়ানো হয় অথবা নালায় গিয়ে জমে
প্লাস্টিক দূষণের বিপদ বাড়ছে ভারতে
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 05, 2023 | 8:34 PM

নিবেদিতা খন্দকার

নয়া দিল্লি: ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। চলতি বছরে এই প্রচারের থিম, ‘বিট প্লাস্টিক পলিউশন’ অর্থাৎ, প্লাস্টিক দূষণের হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান। বিশ্ব পরিবেশ দিবসের ঠিক আগেই, ‘দ্য স্টেট অব ইন্ডিয়াস এনভায়রনমেন্ট ২০২৩: ইন ফিগারস’ নামে ভারতের দূষণ ও বর্জ্য পদার্থ পরিচালনার বিষয়ে এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে অলাভজনক সংস্থা ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ বা ‘সিএসই’ (CSE)। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের সকল পৌরসভার কঠিন বর্জ্যের প্রায় ৩২ শতাংশেরই কোনও হিসাব নেই। এই হিসাববিহীন বর্জ্য রয়ে গিয়েছে দেশের ১০টি রাজ্যে। এর মধ্যে ৬টিই পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে। শুধু তাই নয়, ‘লেগাসি ওয়েস্ট’ অর্থাৎ, ধাপার মাঠের মতো জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে যে সব বর্জ্য পদার্থ জমে থাকে, তা ২০২৪ সালের মধ্যেই সম্পূর্ণরূপে সাফাইয়ের লক্ষ্য নিয়েছে ভারত। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত সেই ‘লেগাসি ওয়েস্টে’র ৭১ শতাংশ রয়ে গিয়েছে। উত্তর-পূর্বের ছয়টি রাজ্য-সহ দেশের মোট ১১টি রাজ্য এই লেগাসি ওয়েস্ট সাফাইয়ের কাজ শুরু পর্যন্ত করেনি।

সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড বা সিপিসিবি (CPCB)-র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ৩৫টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে প্লাস্টিক বর্জ্য ছিল প্রায় ৩৪.৬৯ লক্ষ টন। গত পাঁচ বছরে মাথাপিছু প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। তথ্য় অনুযায়ী, সর্বাধিক পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয় মহারাষ্ট্রে (১৩%), এরপর রয়েছে তামিলনাড়ু এবং পঞ্জাব। দুই রাজ্যেই প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ দেশের মোট প্লাস্টিক বর্জ্যের ১২ শতাংশ। ওই বছর, দেশের মোট কঠিন বর্জ্যের মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ ছিল ৬.৩০ শতাংশ। এই পরিমাণটা খাতায় কলমে অত্যন্ত কম মনে হলেও, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন ১ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্যও পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকারক। কারণ, এটি হাজার হাজার বছর ধরে অবিকৃত থেকে যায় এবং জলে মিশে গিয়ে ব্যাপক পরিমাণ সামুদ্রিক দূষণ ঘটায় এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে।

সিপিসিবি তথ্য অনুসারে, ২০২০-২১ সালে ভারতে মোট কঠিন বর্জ্যের পরিমাণ ছিল দিন প্রতি ১.৬ লক্ষ টন। এর মধ্যে ১.৫২ লক্ষ টন বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৫০% বর্জ্য শোধন করা হয়েছে এবং ১৮.৪% দিয়ে জমি ভরাট করা হয়েছিল। অদ্ভুত বিষয় হল, অবশিষ্ট অর্থাৎ, ৩২% কঠিন বর্জ্যের কোনও হিসাব নেই। ২০১৯-২০ বছরে হিসাববিহীন বর্জ্যের পরিমাণ ছিল, মোট কঠিন বর্জ্যের ২৫.৮%। সিএসই-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, “এই তথ্য থেকে পরিষ্কার যে, এই ৩২% বর্জ্য কোথায় যায়, তা সরকার জানে না। স্পষ্টতই এই কঠিন বর্জ্য আমাদের শহরের নালাগুলিকে আটকে দেয় অথবা সেগুলি অবৈধভাবে পোড়ানো হয়।”

২০২২ সালের জুলাইয়ে ভারত সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করেছিল। সেই সময় সিপিসিবি-র পক্ষ থেকে এসইউপি-সিপিসিবি নামে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন চালু করেছিল। এই অ্য়াপের মাধ্যমে নাগরিকরা অবৈধ প্লাস্টিক বিক্রি এবং ব্যবহার সম্পর্কে অভিযোগ করতে পারেন। সিএসই-র তথ্য অনুযায়ী, ১৩৮টি শহর থেকে অভিযোগ এই অ্যাপে অভিযোগ জানানো হয়েছে। এর মধ্যে ৮১টি শহর একটিও অভিযোগের প্রতিকার করতে পারেনি। সিএসই রিপোর্টের প্রধান বিশ্লেষক রজিত সেনগুপ্ত বলেছেন, “একমাত্র ইতিবাচক দিক হল, ২০১৫-১৬ সালে কঠিন বর্জ্যের মাত্র ১৯ শতাংশ ট্রিটমেন্ট করা হত। আজ, কঠিন বর্জ্যের ৫০ শতাংশ ট্রিটমেন্ট করা হচ্ছে।” অন্যদিকে, সিএসই-র ডিরেক্টর জেনারেল সুনীতা নারাইন বলেছেন, “ভারতের পরিবেশের কী অবস্থা, সেই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে আমাদের প্রয়াস হল এই ‘দ্য স্টেট অব ইন্ডিয়াস এনভায়রনমেন্ট ২০২৩: ইন ফিগারস’। কোথায় ভারতের পারফরম্যান্স কম হয়েছে, কোথায় এগোতে পেরেছে এবং যদি কোনও ফাঁক থাকে, তা কোথায় আছে – এই বিষয়গুলি এই রিপোর্টে ধরা পড়েছে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, এই প্রতিবেদনে প্রথমবার পরিবেশ রক্ষায় ভারতের সমস্ত রাজ্যগুলির কার্যক্ষমতা বিশ্লেষণ করেছে সিএসই। এই সব ক্ষেত্রে চারটি মূল বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে – সামগ্রিক পরিবেশগত কর্মক্ষমতা, কৃষি, জনস্বাস্থ্য এবং পরিকাঠামো ও মানব উন্নয়ন।

৩ জুনই শেষ হয়েছে সামুদ্রিক পরিবেশ সহ প্লাস্টিক দূষণ রোধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আন্তঃসরকারি আলোচনা কমিটির দ্বিতীয় অধিবেশন। এরপর রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিবেশ কর্মসূচির কার্যনির্বাহী পরিচালক ইনগার অ্যান্ডারসেন বলেছেন, “ডিজাইনের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই একমাত্র বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। সময় এসেছে পণ্যগুলির নতুন করে নকশা করার। যাতে, বিশেষ করে অপ্রয়োজনীয় এবং সমস্যাযুক্ত প্লাস্টিক কম ব্যবহার করা হয়। পণ্য প্যাকেজিং এবং শিপিংকে কম প্লাস্টিক ব্যবহারের জন্য নতুন করে নকশা করতে হবে।”