Assam citizenship: নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ হয়ে আত্মঘাতী হয়েছিল ছেলে, ১০ বছর পর ‘ভারতীয়’ হলেন অশীতিপর মা

Assam citizenship: বুধবার অসমের কাছাড় জেলার এক অশীতিপর মহিলা ভারতের নাগরিকত্ব পেলেন। ১০ বছর আগে নাগরিকত্ব প্রমাণ না করতে পেরে আত্মঘাতী হয়েছিলেন পুত্র।

Assam citizenship: নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ হয়ে আত্মঘাতী হয়েছিল ছেলে, ১০ বছর পর 'ভারতীয়' হলেন অশীতিপর মা
ছেলের মৃত্যুর ১০ বছর পর তাঁকেও ফের দিতে হল নাগরিকত্বের প্রমাণ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 12, 2022 | 1:50 PM

শিলচর: বয়স তাঁর এখন ৮৩। ১০ বছর আগে নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় আত্মহত্যা করেছিলেন তাঁর পুত্র অর্জুন নমশূদ্র। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচার পর্বে খোদ নরেন্দ্র মোদীর মুখে উঠে এসেছিল সেই মৃত্যুর কথা। তবে তারপরও অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি অসমের কাছাড় জেলার বাসিন্দা আকোল রানী নমশূদ্রের। প্রশ্ন ছিল তাঁর এবং তাঁর মেয়ের নাগরিকত্ব নিয়েও। মেয়েকে ভারতীয় বলে মেনে নিলেও, আকোল রানিকে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছিল। এমনকী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য সরকারি নোটিশও পাঠানো হয়। অথচ, ১৯৬৫ সাল থেকেই তাঁর নাম রয়েছে অসমের ভোটার তালিকায়। অবশেষে, বুধবার (১১ মে) বৈধ নথিপত্র জমা দেওয়ার পর এক ফরেন ট্রাইবুনাল তাঁকে ভারতীয় নাগরিক হিসাবে ঘোষণা করল। শেষ হল, ৮৩ বছরের বৃদ্ধার ২২ বছরের লড়াই।

কাছাড়ের কাঠিগোরা থানার হরিতিকোর গ্রামের বাসিন্দা আকোল রানী নমশূদ্র। ফরেন ট্রাইবুনালের রেকর্ড বলছে, ২০০০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি আকোল রানী নমশূদ্রের বিরুদ্ধে ১৯৮৩ সালের অবৈধ অভিবাসী নির্ধারণ আইনের অধীনে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সেই শুরু হয়েছিল তাঁর নাহরিকত্ব প্রমাণের সংগ্রাম। ২০০৫ সালে আইনটিই বাতিল হয়ে গেলেও, আকোল রানী নমশূদ্র অভিযোগ মুক্ত হননি। পুলিশি যাচাইকরণের সময় তিনি উপযুক্ত নথি দেখাতে পারেননি, এই অভিযোগ করে চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।

১৯৮৫ সালের অসম অ্যাকর্ড অনুযায়ী, অসমের সকল নাগরিককেই ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হয়। কোনও ব্যক্তি তাঁর পূর্বপুরুষরা ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের আগে থেকে রাজ্যের বাসিন্দা – এই সংক্রান্ত কোনও নথি থাকলে তবেই তাদের ভারতীয় নাগরিক হিসাবে মেনে নেওয়া হয়। ২০১৯ সালের অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি-তেও নাগরিকত্বের এই মানদণ্ড রাখা হয়েছিল। ১৯৬৫ সালে প্রথমবার অসমের ভোটার তালিকায় নাম উঠেছিল আকোল রানীর। তারপর থেকে অসমে যতগুলি নির্বাচন হয়েছে, প্রত্যেক ভোটার তালিকাটিতেই নাম ছিল তাঁর। তাই, নোটিশ পাওয়ার মাত্র তিনমাসের মধ্যে সহজেই নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করলেন তিনি। ২০১৩ সালে তাঁর কন্যা অঞ্জলি রায়-ও নিজেকে ভারতীয় প্রমাণে সফল হয়েছিলেন।

তবে, তাঁদের মতো ভাগ্যবান ছিলেন না অর্জুন নমশূদ্র। ২০১২ সালে তাঁকে বিদেশি বলে রায় দিয়েছিল ফরেন ট্রাইবুনাল। অথচ, তিনি যাবতীয় বৈধ নথি জমা দিয়েছিলেন। এরপরই হতাশায় আত্মঘাতী হয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুর এক বছর পর, একই ফরেন ট্রাইবুনাল তাঁকে ভারতীয় বলে ঘোষণা করেছিল। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাছাড় জেলায় এক নির্বাচনী জনসভা করতে এসে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এনআরসি-র প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে অর্জুনের ঘটনাই তুলে ধরেছিলেন। নির্বাচনী ভাষণে বলেছিলেন, ‘বন্দি শিবিরে আটক থাকা লক্ষ লক্ষ মানুষের অধিকারের জন্যই আত্মত্যাগ করেছিলেন অর্জুন’।

তারপর, কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছেন মোদী। অসমে পরপর দুইবারের জন্য ক্ষমতা পেয়েছে বিজেপি। রাজ্যে এনআরসি-ও হয়েছে। মোদীর ভাষণের পর বিজেপি-সহ বহু রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরাই আলোক রানী নমশূদ্রের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছিল। তবে, তারপরও অবস্থা বদলায়নি তাঁর। আলোক রানী নমশূদ্রের ঘটনায় নতুন করে প্রশ্নের মুখে ফরেন ট্রাইবুনালের কর্মপদ্ধতি। কাছাড় জেলার কাঠিগোরা এলাকায় ১৯৫৬ সালে বাংলাদেশ (তখন পূর্ব পাকিস্তান) থেকে ১৭৩টি উদ্বাস্তু পরিবারকে জমি দিয়েছিল সরকার। তাদের উত্তরসূরিদের অনেককেই ডি-ভোটার বা সন্দেহজনক ভোটারের নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ।