Marital Rape: ‘স্ত্রী-কে যৌনতায় বাধ্য করতেই পারেন স্বামী’, বিচারপতির ‘বৈবাহিক অধিকারের’ ব্যাখ্যা নিয়ে কী বলছেন সমাজকর্মীরা?

Delhi High Court: বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ বলে ঘোষণা করা হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত দিল্লি হাইকোর্ট। বুধবার ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি ভিন্ন মত পোষণ করেছেন।

Marital Rape: 'স্ত্রী-কে যৌনতায় বাধ্য করতেই পারেন স্বামী', বিচারপতির 'বৈবাহিক অধিকারের' ব্যাখ্যা নিয়ে কী বলছেন সমাজকর্মীরা?
বিচারপতি হরি শঙ্কর
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 12, 2022 | 5:31 PM

নয়া দিল্লি : ভারতীয় আইনে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ বলে চিহ্নিত করা হয় না। অথচ দেশের বহু মহিলা বারবার স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। আইন মেনে বিয়ে হওয়ার পরও স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা যায় কি না, সেই নিয়েই মত পার্থক্য রয়েছে অনেক। এমনকি এই বিষয়ে একমত হতে পারলেন না দিল্লি হাইকোর্টের দুই বিচারপতি। বুধবার বৈবাহিক ধর্ষণ সংক্রান্ত একটি মামলায় দুই বিচারপতি দুই ভিন্নমত পোষণ করেছেন। আর সেই শুনানিতে বিচারপতি হরি শঙ্কর যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তাঁর মতে ভারতে বিবাহিত সম্পর্কে যৌনতা স্বাভাবিক। স্বামী তাঁর স্ত্রীকে যৌন সংসর্গে বাধ্য করতেই পারেন বলে উল্লেখ করেছেন বিচারপতি। তাঁর দাবি, সে ক্ষেত্রে কি ধর্ষণ বলা যেতে পারে না।

একনজরে বিচারপতি হরি শঙ্করের পর্যবেক্ষণ:

১. এ ক্ষেত্রে ধর্ষণ শব্দটা সঠিক নয়। আইন অনুসারে বৈবাহিক শারীরিক সম্পর্ককে ‘ধর্ষণ’ বলে উল্লেখ করা যায় না।

২. স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে আসলে বাস্তব পরিস্থিতির বিরোধিতা করা হচ্ছে। বাস্তব হল এটাই যে, স্বামী-স্ত্রী-র সম্পর্ক আর পাঁচটা পুরুষ ও মহিলার সম্পর্কের থেকে আলাদা। স্বামী ও স্ত্রী-র সম্পর্কে যৌনতা কাম্য।

৩. স্বামী ও স্ত্রী একই ঘরের মধ্যে জীবন যাপন করেন। দুজনে মিলে একটা সংসার তৈরি করেন, সেখানে তৈরি হয় বন্ধন। সেই সম্পর্কের অনেকগুলো দিক রয়েছে, যার মধ্যে যৌনতা অন্যতম। দুজনের যৌন সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে তাঁদের বৈবাহিক জীবন।

৪. স্বামী ও স্ত্রী-র মধ্যে যৌন সম্পর্ক পবিত্র। কোনও সুস্থ বিবাহিত সম্পর্কে যৌনতাকে একটা ‘ফিজিক্যাল অ্যাক্ট’ বলে চিহ্নিত করা যায় না। এই সম্পর্ক স্বাভাবিক, আর বিবাহিত সম্পর্কে ‘বেডরুম’ অত্যন্ত পবিত্র।

৫. একজন স্বামী তাঁর স্ত্রী-র কাছ থেকে যৌনতা প্রত্যাশা করেন। দুজনের মধ্যে কেউ যদি তা প্রত্যাখ্য়ান করেন, তাহলে সেই অভিযোগে বিচ্ছেদ চাওয়া যায় না। আর সেই প্রত্যাখ্য়ানও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।

৬. যদি কখনও স্ত্রী না চাইলেও স্বামী তাঁকে যৌনতায় বাধ্য করে, সেই ঘটনাকে অপরিচিত একজন পুরুষের এই ধরনের ব্যবহারের সঙ্গে তুলনা করা অবান্তর। বৈবাহিক সম্পর্কে এই অধিকার স্বাভাবিক। বিচারপতির দাবি, স্বামী যৌনতায় বাধ্য করলে সেটা একজন মহিলার ওপর সেই প্রভাব ফেলে না, যেটা একজন অপরিচিত পুরুষ বাধ্য করলে হয়।

৭. স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় বিয়ের ধারণার পরিপন্থী। ধর্ষণের অভিযোগ উঠলে সেই সম্পর্কের ফলে যদি সন্তানের জন্ম হয়, তাহলে তাকে ধর্ষণের ফল বলে গণ্য করা হবে। সুস্থ সম্পর্ক থেকে জন্ম হওয়া সন্তানের বাবাকে ধর্ষক বলা হবে, কারণ তার মা ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওই কাজ করেছিলেন।

তবে পুরোটাই সুস্থ বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ বলে জানিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ স্বামী ও স্ত্রী আলাদা থাকেন কি না, সে বিষয়ে আদালতকে নজর দিতে হবে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া, ভারতীয় সংবিধানের ১৪, ১৯ ২১ নম্বর ধারার কথা উল্লেখ করে বিচারপতি রাজীব শাকধের বলেছিলেন, জোর করে স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সংসর্গ করলে তা ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিপন্থী। সেই কথায় সহমত পোষণ করেননি বিচারপতি হরি শঙ্কর।

কী বলছেন সমাজকর্মীরা?

অধ্যাপিকা নন্দিনী ভট্টাচার্যও বিচারপতি এই মতকে সমর্থন করেছেন। তাঁর দাবি, বিয়ে অথচ ধর্ষণ! এটা একে অপরের পরিপন্থী। তিনি উল্লেখ করেন, বিয়ের পর শারীরিক সম্পর্ক স্বাভাবিক, এমনকি সেই সম্পর্ক তৈরি হয়েছে কি না, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন পরিবারের সদস্যরা। জোর করা হল কি না, সেই বিষয়টি নিয়ে যে চর্চা চলছে তা অনেকটা শোবার ঘরে সিসিটিভি লাগানোর সামিল বলে মনে করেন তিনি।

তবে সমাজকর্মী শাশ্বতী ঘোষের দাবি, বিয়ের বিষয়টাকে প্রথম থেকেই সন্তান উৎপাদনের মাধ্যম হিসেবে ভাবা নয়। সে ক্ষেত্রে যৌনতাটাও গৌন। তাই এই বিষয়ে আদালত হস্তক্ষেপ করলে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে তাঁর মতে, এবার এই পুরনো ধ্যান ধারনা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। বদলানো উচিত আইন।