পরিস্থিতি যেমনই হোক, ফের সম্পূর্ণ লকডাউনে সায় নেই অর্থমন্ত্রকের
সরকারের এখন একমাত্র লক্ষ্য, অবকাঠামো খাতের জন্য মূলধন ব্যয়ের দিকে নজর দেওয়া যাতে অর্থনীতিতে নতুন চাহিদা ও কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব হতে পারে।
জ্যোতির্ময় রায়: করোনার সংক্রমণে উৎপাদন শিল্পে বিপরীতমুখী প্রভাব পড়েছে। দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) হ্রাস পাওয়ায় এবং খুচরো ব্যবসায় ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার ফলে অর্থমন্ত্রক কোনও পরিস্থিতিতেই নতুন করে সম্পূর্ণ লকডাউনের পক্ষে নয়। অর্থনীতির পুনরুদ্ধার নিয়ে ইতিমধ্যে মন্ত্রকের উর্ধ্বতন কর্তাদের মধ্যে গুরুতর আলোচনা হয়েছে।
সূত্র মতে অর্থমন্ত্রকের ধারনা, বর্তমানে করোনা সংক্রমণের এই তীব্রতা বা দ্বিতীয় ঢেউ খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে না। এবং ধৈর্য সহকারে স্থানীয় পর্যায়ে কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করলেই বর্তমান পরিস্থতি কাটিয়ে ওঠা যাবে। সূত্র আরও জানাচ্ছে, মন্ত্রক ধরে নিচ্ছে যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিক আর্থিক লেনদেন জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকের মতো হবে না। যদিও সরকার যে আর কোনও ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণা করবে না, তা সূত্র জানিয়ে দিয়েছে। সরকারের এখন একমাত্র লক্ষ্য, অবকাঠামো খাতের জন্য মূলধন ব্যয়ের দিকে নজর দেওয়া যাতে অর্থনীতিতে নতুন চাহিদা ও কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব হতে পারে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে শ্রমিকরা গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের মতো শিল্পোন্নত রাজ্যগুলি থেকে পুনরায় নিজ নিজ রাজ্যে ফিরে যাচ্ছে। মহারাষ্ট্রে জনতা কার্ফু ঘোষণার পর কমবেশি লকডাউন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে এবং গুজরাটেও বিধিনিষেধ বাড়ছে। ফলে আগের মতো লকডাউন পরিস্থিতির আশঙ্কায় শ্রমিকরা নিজের রাজ্যে ফিরে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: বঙ্গে শেষ তিন দফার ভোট কি একসঙ্গে? চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাল নির্বাচন কমিশন
সূত্রের খবর, শিল্পাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হলে যদি আরও বেশি সংখ্যক শ্রমিক নিজ রাজ্যে ফিরে যায়, সেক্ষেত্রে গ্রামীণ অর্থনীতির চাহিদা যাতে বজায় থাকে সেই জন্য ঘরে ফিরে আসা শ্রমিকদের জন্য সরকার মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা যোজনা বা মনরেগার অধীনে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ করতে পারে। চলতি অর্থবর্ষে মনরেগার অধীনে ৭৩,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা গত অর্থবর্ষের ১.১১ লক্ষ কোটি টাকার সংশোধিত বরাদ্দের তুলনায় ৩৪.৫২ শতাংশ কম। গত বছর ত্রাণ প্যাকেজের আওতায় মনরেগার জন্য অতিরিক্ত ৪০,০০০ কোটি টাকা ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে মনরেগা অধীনে ৬১,৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ‘আমি মারা যাচ্ছি’, অক্সিজেনের ছেঁড়া নল নিয়ে ঘরে ফোন, এনআরএস-এ তিলে তিলে মৃত্যু বৃদ্ধের
একাধিক গবেষণা সংস্থা এবং রেটিং এজেন্সি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে জিডিপি বৃদ্ধি হ্রাস পাবে বলে প্রত্যাশা করছে। একই সঙ্গে গুগল গতিশীলতার তথ্য অনুসারে, ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষে খুচরো ও বিনোদন ব্যবসা ২৫ শতাংশ কমেছে। রিটেইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, কার্ফু ও বিধিনিষেধের কারণে কেবল এপ্রিল মাসে ব্র্যান্ডেড খুচরো ব্যবসায় ৩৫,০০০ কোটি টাকারও বেশি লোকসানের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেব্রুয়ারি মাসে শিল্প উৎপাদন তিন শতাংশেরও বেশি কমেছে। সিএমআইয়ের মতে, এপ্রিলের বেকারত্বের হার সাত শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এ জাতীয় পরিস্থিতিতে সরকার কোনও ভাবেই সম্পূর্ণ লকডাউন সমর্থন করতে পারে না।
আরও পড়ুন: শীতলকুচি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জের, সায়ন্তন বসুর কাছে জবাব তলব কমিশনের