Moon Mission: সোনা-রুপো তো ছাড়, চাঁদে রয়েছে আরও মূল্যবান খনিজ! লাগতে পারে মহাজাগতিক যুদ্ধও

Minerals in Moon: চাঁদে রয়েছে স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়াম ও ল্যান্থানাইডের মতো বিরল ধাতু। স্মার্টফোন, কম্পিউটার বা বিভিন্ন ধরনের উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এই ধাতুগুলির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

Moon Mission: সোনা-রুপো তো ছাড়, চাঁদে রয়েছে আরও মূল্যবান খনিজ! লাগতে পারে মহাজাগতিক যুদ্ধও
চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি।Image Credit source: PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 07, 2023 | 8:00 AM

নয়া দিল্লি: ২০১৯ সালে তীরে এসে তরী ডুবেছিল। চাঁদের বুকে সফট ল্যান্ডিং করতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিল চন্দ্রযান-২। তবে এই ব্যর্থতায় থেমে থাকেনি ইসরো। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিল। চার বছরের অক্লান্ত এই পরিশ্রমের ফলও মিলেছে। সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করেছে চন্দ্রযান-৩। আপাতত কাজও শেষ চন্দ্রযান-৩-এর। ল্য়ান্ডার বিক্রম ও রোভার প্রজ্ঞান চাঁদের বুকে ঘুরে বেড়িয়ে বিভিন্ন খনিজ সংগ্রহ করেছে। রয়েছে সালফার, অ্যালুমিনিয়াম, ক্যালসিয়ামের মতো নানা খনিজ। সোনা-রুপো বা হিরের মতো বহুমূল্য খনিজ না থাকলেও, যা রয়েছে তা আরও দামি! বিজ্ঞানীদের দাবি, চাঁদের বুকে এমন সম্পদ রয়েছে, যা সংগ্রহ পারলে পৃথিবীর কয়েক যুগের জ্বালানির চাহিদা মিটে যাবে। অর্থাৎ চাঁদে যে দখল করতে পারবে, সেই মালামাল হয়ে যাবে।

গুপ্তধনের সন্ধানে অভিযান-

আমেরিকার নাসা, রাশিয়ার রসকসমস, জাপানের জাক্সা বা ভারতের ইসরো- সবাই ছিপ ফেলেছে চাঁদে। সকলেই পৌঁছতে চাইছেন চাঁদে। কিন্তু কেন? শুধুই কি অজানাকে আবিষ্কারের নেশায় হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে? উত্তর হল, না। শুধু বিজ্ঞান নয়, বাণিজ্যিক স্বার্থও লুকিয়ে রয়েছে চন্দ্রাভিযানের পিছনে। চাঁদে রয়েছে একাধিক দামি খনিজ, যা হাতে পেলে যেকোনও দেশের অর্থনীতির হাল ফিরতে পারে।

কী গুপ্তধন রয়েছে চাঁদে?

জীবাশ্ম জ্বালানিই বর্তমানে পৃথিবীর চলনশক্তি। কিন্তু ব্যাপক হারে জীবাশ্ম জ্বালানি খরচ হওয়ায়, খনিজের ভাণ্ডার শেষ হতে  চলেছে। খরচের পরিমাণ এতটাই যে, পৃথিবীতে আগামী ৫০ বছরের মধ্য়ে খনিজ শেষ হয়ে যেতো পারে। মাত্র ৫০ বছরের মতো খনিজ তেল, ৫৩ বছরের মতো প্রাকৃতিক গ্যাস এবং ১১০ বছরের মতো কয়লা মজুত আছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববাসীর পরিত্রাতা হয়ে উঠতে পারে চাঁদে থাকা বিপুল পরিমাণ হিলিয়াম থ্রি।

নাসার অনুমান, চাঁদে ১১ লক্ষ মেট্রিক টন হিলিয়াম-৩ মিলতে পারে। অর্থাত্‍ ১১০ কোটি কিলোগ্রাম পরিমাণের হিলিয়াম রয়েছে। হাইড্রোজেনের পরেই হিলিয়াম বিশ্বের সবচেয়ে সহজলভ্য মৌল। কিন্তু আমাদের পৃথিবীতে তার পরিমাণ বেশ কম। এই বিশাল পরিমাণ হিলিয়াম-৩কে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর জ্বালানির চাহিদা অনেকাংশেই পূরণ করা সম্ভব। তখন আর কয়লার প্রয়োজন পড়বে না। লাগবে না প্রাকৃতিক গ্যাসও।

হিসাব বলছে, ৫ হাজার কিলোগ্রাম কয়লা পোড়ালে যতটা শক্তি উৎপাদন হয়, ৪০ গ্রাম হিলিয়াম-৩ মৌল থেকে তৈরি হয় ততটাই শক্তি। শুধু তাই নয়, এই হিলিয়াম-৩ মৌলটি দিয়েই অপ্রচলিত উপায়ে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে তেজস্ক্রিয়তার বিপদও এড়ানো যাবে পুরোপুরি।

কী কী কাজে লাগে এই মৌল?

  • অদাহ্য ও হালকা হওয়ায় আবহাওয়ার উপরে নজরদারির জন্য যে বেলুন আকাশে ওড়ানো হয়, তার ভেতর হিলিয়াম ব্যবহার করা হয়।
  • এ ছাড়াও ওষুধ, বৈজ্ঞানিক গবেষণা,
  • বিমানের জন্য গ্যাস,
  • পারমাণবিক চুল্লির জন্য কুল্যান্ট এবং
  • গ্যাস লিক শনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত হয় হিলিয়াম।

এছাড়াও চাঁদে রয়েছে স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়াম ও ল্যান্থানাইডের মতো বিরল ধাতু। স্মার্টফোন, কম্পিউটার বা বিভিন্ন ধরনের উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এই ধাতুগুলির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

তবে চাঁদ থেকে খনিজ পদার্থ সংগ্রহ করা মোটেই সহজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন হবে উন্নতি প্রযুক্তির রোবট। তাছাড়া খনিজ পদার্থগুলিকে পৃথিবীতে নিয়ে আসাও বেশ খরচসাপেক্ষ। তবু এই ধাতুগুলির একচ্ছত্র অধিকার পেতে কোমর বেঁধেছে বিশ্বের ছোট-বড় সমস্ত দেশ। কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে চন্দ্রাভিযানে। অবতরণের পর ইসরোর পাঠানো বিক্রম, প্রজ্ঞানের অন্যতম প্রধান কাজই ছিল খনিজ খুঁজে বের করা।

চাঁদে কারোর অধিকার থাকতে পারে? 

১৯৬৬ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের স্পেস ট্রিটিতে বলা হয়, চাঁদ বা অন্য কোনও মহাজাগতিক বস্তুর ওপর কোনও দেশই নিজেদের অধিকার দাবি করতে পারে না। তবে এই চুক্তিতে বেসরকারি সংস্থার কথা বলা ছিল না। এরপর ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্যোগেই আরও একটি ‘মুন এগ্রিমেন্ট’ হয়। সেখানে বলা হয়, কোনও বেসরকারি সংস্থাও চাঁদের জমির ওপর দাবি জানাতে পারবে না। কিন্তু মহাকাশযাত্রায় এগিয়ে থাকা কোনও দেশই এই চুক্তিতে সই করেনি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তলে তলে সব দেশই শুরু করে দিয়েছে চাঁদে খনন করার প্রস্তুতি। পরিস্থিতি যুদ্ধের দিকেও গড়াতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।