সিরাম ইন্সটিটিউটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত ৫, পরিবারপিছু ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে সংস্থা

সংস্থার যে অংশে আগুন লেগেছে, তার থেকে মিনিট কয়েকের দূরত্বেই কোভিশিল্ড উৎপাদনের কাজ চলছে। তবে এই অগ্নিকাণ্ডের জেরে উৎপাদনে প্রভাব পড়বে না বলেই জানানো হয়েছে।

সিরাম ইন্সটিটিউটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত ৫, পরিবারপিছু ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে সংস্থা
কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে আকাশ। ছবি:ANI
Follow Us:
| Updated on: Jan 21, 2021 | 8:32 PM

পুনে: ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার হল দেশের বৃহত্তম ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা সিরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া। পুনেতে সংস্থার একটি নির্মীয়মান বিল্ডিংয়ে আচমকাই আগুন লেগে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দমকলের ১০টি ইঞ্জিন। তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। জানা গিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে মোট পাঁচজন কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে, উদ্ধার করা হয়েছে ছয়জনকে। আরও কেউ আটকে পড়েছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তবে সন্ধে সাতটা নাগাদ ফের আগুন লাগে নির্মীয়মান বিল্ডিংয়ের একটি অংশে। দমকল কর্মীরা সেই আগুন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সকালে তিনঘণ্টার চেষ্টায় দমকলকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে ভাবলেও সন্ধে নাগাদ ফের আগুনের হলকা বের হতে দেখা যায় বিল্ডিংয়ের একাংশ থেকে।

আজ দুপুর তিনটে নাগাদ পুনের সিরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়ার টার্মিনাল-১-র গেটের কাছে নির্মীয়মান একটি অংশে আচমকাই আগুন লেগে যায়। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় আশেপাশের অঞ্চল। সঙ্গে সঙ্গে দমকলে খবর দেওয়া হয়। প্রথমে চারটি ও পরে ১০টি দমকল আগুন নিয়ন্ত্রণে হাজির হয়। বিল্ডিংয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম তল থেকে আগুনের লেলিহান শিখা বেরোতে দেখা যায়। পরে দমকল ও এনডিআরএফ কর্মীদের যৌথ প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।

মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসতেই শোক প্রকাশ করেন সংস্থার প্রধান আদার পুনাওয়ালা। তিনি টুইট করে লেখেন, “এইমাত্র বেদনাদায়ক একটি সংবাদ পেলাম। তদন্তে জানা গিয়েছে দুর্ঘটনায় কয়েকজনের প্রাণহানি হয়েছে। এই ঘটনায় আমরা অত্যন্ত শোকাহত এবং প্রয়াতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।” পরে বিকেলে আরেকটি টুইট করে তিনি জানান, সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী কর্মচারীদের পরিবারের হাতে নায্য পাওনার পাশাপাশি ২৫ লক্ষ টাকা করেও দেওয়া হবে।

মাঞ্জারি নামক ওই অঞ্চল থেকে কয়েক মিনিট দূরত্বেই উৎপাদন করা হচ্ছে করোনা ভ্যাকসিন ‘কোভিশিল্ড’। কীভাবে নির্মীয়মান ওই বিল্ডিংয়ে আগুন লাগল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী রাজেশ তোপে জানান, ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলাকালীনই সকালে এই আগুন লেগেছিল। তবে এই অগ্নিকাণ্ডের জেরে ভ্যাকসিন প্রস্তুতি বা বন্টনে কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই জানানো হয়েছে সংস্থার তরফে।

আরও পড়ুন: ‘তেজস্বী যাদব বলছি’, এক ধমকেই সুর নরম জেলাশাসকের

সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, মাঞ্জারি কমপ্লেক্সে প্রায় ৮-৯টি নতুন বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে। সেখানেরই একটি বিল্ডিংয়ে আজ আগুন লাগে। উদ্ধারকাজ চলাকালীন এক দমকল আধিকারিক বলেছিলেন, “নির্মীয়মান বাড়িটির ভিতরে চারজন ছিল বলে জানা গিয়েছে, এদেরমধ্যে তিনজনকে উদ্ধার করা গিয়েছে। আগুনের শিখা ও ধোঁয়ার কারণে উদ্ধারকার্যে সমস্যা হচ্ছে।”

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সামনে আসার পরই সংস্থার প্রধান আদার পুনাওয়ালা বলেছিলেন, “যে দু-তিনজন আটকে পড়েছেন, আপাতত তাঁদের উদ্ধার করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। পরে কীভাবে আগুন লাগল সে বিষয়ে খতিয়ে দেখা যাবে।” মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের অফিসের তরফেও টুইট করে জানানো হয়, পুনের মিউনিসিপ্যাল কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে এবং তিনি প্রতি মুহূর্তের আপডেট দিচ্ছেন। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তরফেও একটি দল পাঠানো হয়েছে উদ্ধারকার্যে সাহায্যের জন্য।

মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরেও জানান, আপাতত ছয়জনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। প্রাথমিক তদন্তে শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছ্ বলে মনে হচ্ছে। সিরাম কর্তা আদার পুনাওয়ালার সঙ্গে এখনও কথা হয়নি।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রমন্ত্রী রামনাথ কোবিন্দ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সিরাম ইন্সটিটিউটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অত্যন্ত শোকাহত। প্রয়াতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।”

অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতিও শোক জ্ঞাপন করে লেখেন, “সিরাম ইন্সটিটিউটে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনা বেদনাদায়ক। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।”

আরও পড়ুন: প্রজাতন্ত্র দিবসে ট্রাক্টর র‌্যালির ভাগ্য নির্ধারণে কৃষকদের সঙ্গে ফের বৈঠকে দিল্লি পুলিস