প্রশ্নে গোপনীয়তা, অনলাইন মাধ্যমে নিয়মবিধির জাল কেন্দ্রের

আনা হয়েছে ট্রেসেবিলিটি(Traceablity)-র আইন। অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও বিতর্কিত পোস্টের প্রেক্ষিতে ব্যবহারকারীকে চিহ্নিতকরণ করা হবে এই আইনের অধীনে। হোয়াটসঅ্যাপ, সিগন্যালের মতো বিভিন্ন মেসেজিং মাধ্যমে ব্যবহারকারীর তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় "এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন" (End to End Encryption)-র কথা বলা হত, সেই নীতি বজায় থাকবে না।

প্রশ্নে গোপনীয়তা, অনলাইন মাধ্যমে নিয়মবিধির জাল কেন্দ্রের
প্রতীকী চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Feb 25, 2021 | 4:20 PM

নয়া দিল্লি: সোশ্যাল মিডিয়া (Social Media) ও অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম(Digital Platform)-গুলিকে নিয়মবিধিতে বাঁধল কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ (Ravi Shankar Prasad) ডিজিটাল প্রতিষ্ঠান ও ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বিষয়বস্তু সম্পর্কে নয়া নিয়মবিধি জারি করেন। এই আইনে সংবাদ মাধ্যম ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলিকে আচরণবিধি ও ত্রি-স্তরীয় সুরক্ষা ব্যবস্থার অধীনে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।

তথ্য প্রযুক্তি (মধ্যস্থতাকারী ও ডিজিটাল মিডিয়া নৈতিক বিধি) নিয়ম, ২০২১ -অনুযায়ী, এবার থেকে ডিজিটাল সংবাদ প্রতিষ্ঠান, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ও ওটিটি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলি সরকার দ্বারা পরিচালিত হবে। একইসঙ্গে দেশের ঐক্য ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিয়মবিধি অনুসরণ করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির নির্দেশও দিতে পারবে কেন্দ্র।

আজ সাংবাদিক বৈঠকে রবি শঙ্কর প্রসাদ বলেন, “এবার থেকে প্রতিটি সোশ্যাল মিডিয়া জায়েন্টগুলিকে একজন ভারতে বসবাসকারী কমপ্লায়েন্স অফিসার (compliance officer) নিয়োগ করতে হবে। যদি কোনও অবমাননাকর বা বিতর্কিত পোস্ট হয়, তা ডিলিট করে দেওয়ার পর ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, যিনি পোস্টটি করেছেন, তাঁকে পোস্ট ডিলিট করার জন্য জবাবদিহি করতে হবে এবং তাঁদের কথাও শুনতে হবে। এছাড়াও প্রতি ছয় মাস অন্তর একটি রিপোর্ট জমা দিতে হবে।”

আরও পড়ুন: ভিডিয়ো: আচমকাই মাঝ সমুদ্রে ঝাঁপ দিলেন রাহুল গান্ধী!

একইসঙ্গে আনা হয়েছে ট্রেসেবিলিটি(Traceability)-র আইন। অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও বিতর্কিত পোস্টের প্রেক্ষিতে ব্যবহারকারীকে চিহ্নিতকরণ করা হবে এই আইনের অধীনে। ঘোষণার আগে থেকেই এই আইন ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। হোয়াটসঅ্যাপ, সিগন্যালের মতো বিভিন্ন মেসেজিং মাধ্যমে ব্যবহারকারীর তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় “এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন” (End to End Encryption)-র কথা বলা হত, সেই নীতিই ভঙ্গ হবে। এর জবাবে রবি শঙ্কর প্রসাদ বলেন, “কে ঝামেলা শুরু করেছে, সেই বিষয়টি জানা প্রয়োজন। সেই কারণেই এই নিয়ম আনা হয়েছে।”

সম্পূর্ণ বিষয়টির উপর নজরদারি করতে একটি ত্রি-স্তরীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা হবে বলে জানান কেন্দ্রীয় তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী। তিনি জানান, এই কমিটিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, বিদেশমন্ত্রক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, তথ্য প্রযুক্তি, তথ্য সম্প্রচার, নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা থাকবেন। যদি নিয়ম বা আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ আসে, তবে প্রয়োজনে এই কমিটি স্বতঃপ্রণোদিত শুনানির ডাক দিতে পারবে কমিটি। প্রয়োজনে নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের সতর্ক করা, তাঁদের প্রকাশিত তথ্য বা বিষয়বস্তুতে কাট-ছাট করা, ক্ষমা প্রার্থনার দাবি, এমনকি কড়া পদক্ষেপও করতে পারবে। বিতর্কিত বিষয়বস্তুতে নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য কেন্দ্রের তরফে জয়েন্ট সেক্রেটারি বা তার সমকক্ষ কোনও অফিসারকে নিয়োগ করা হবে। তিনিই সম্পূর্ণ বিষয়টি যাচাই করে নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্ত নেবেন।

নেটফ্লিক্স (Netflix), অ্যামাজন প্রাইম ভিডিয়ো (Amazon Prime Video)-র মতো বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের প্রকাশিত কোনও অনুষ্ঠান বা বিষয়বস্তুর বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়লে একটি কমিটির কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হবে। এই কমিটির শীর্ষে থাকবেন সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। বয়স, লিঙ্গ, নগ্নতা ও হিংসার ভিত্তিতে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানেরও বিস্তারিত বিভাজনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

সংবাদ মাধ্যমের ক্ষেত্রে প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (Press Council of India)-র অধীনে সংবাদমাধ্যমের আচরণবিধি সম্পর্কেও জানানো হয়েছে। নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, নতুন ওয়েবসাইটগুলিকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের অধীনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে হবে। যদি কোনও অপরাধমূলক বা বেআইনি তথ্য প্রকাশ করা হয়, তবে আদালত বা কেন্দ্রের নির্দেশিকার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সেই পোস্টটি সরিয়ে ফেলতে হবে। নিয়মভঙ্গের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যমগুলিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রের কমিটির কাছে জবাবদিহি করতে হবে। অভিযোগ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বেআইনি বা অপরাধমূলক পোস্ট ডিলিট করতে হবে সোশ্যাল মাধ্যমগুলিকে। যদি কোনও ব্যবহারকারী অভিযোগ জানায়, তবে ১৫ দিনের মধ্যে তার জবাব দিতে হবে সোশ্যাল মিডিয়াগুলিকে।

আরও পড়ুন: Tamil Nadu Assembly Election 2021: রাজ্যে মোদী, প্রচার ফেলে আসন ভাগাভাগিতেই ব্যস্ত ডিএমকে-কংগ্রেস