জম্মু-কাশ্মীরে নিয়োগ হবে বাকি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের আধিকারিকরাও, লোকসভায় পাশ কেন্দ্রের নয়া বিল

আজ লোকসভায় বিলটি পেশ করে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, "সরকার জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ অবলুপ্ত করার পর প্রায় ১৭০টিরও বেশি কেন্দ্রীয় আইন জম্মু-কাশ্মীরে লাগু করা হয়েছে। উপত্যকাবাসীর উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের কাজও করছেন।"

জম্মু-কাশ্মীরে নিয়োগ হবে বাকি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের আধিকারিকরাও, লোকসভায় পাশ কেন্দ্রের নয়া বিল
জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে নয়া বিল কেন্দ্রের।
Follow Us:
| Updated on: Feb 13, 2021 | 7:07 PM

নয়া দিল্লি: সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ অবলুপ্তির পর জম্মু-কাশ্মীরকে দেশের অংশ বানাতে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল সরকার। অরুণাচল প্রদেশ, গোয়া ও মিজোরামের মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সিভিল সার্ভিস আধিকারিকদের সঙ্গেই জম্মু-কাশ্মীরের সিভিল সার্ভিস আধিকারিকদের একত্রিত করার জন্য শনিবার লোকসভায় জম্মু-কাশ্মীর পুর্নগঠন সংশোধনী বিল ২০২১ পেশ করলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি (G Kishan reddy)।

জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন (২০১৯):

কাশ্মীর কার, তা নিয়ে দেশভাগের পর থেকেই টানাপোড়েন প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে। বিশেষ মর্যাদার কারণে দেশের বাকি রাজ্যগুলির তুলনা কিছুটা আলাদা চোখেই দেখা হত জম্মু-কাশ্মীরকে। তবে ২০১৯ সালে সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ করাতেই “বিশেষ মর্যাদা” হারায় উপত্যকা। সেই সময়ই কেন্দ্রের তরফে আনা হয়েছিল জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন (২০১৯)।  পূর্ববর্তী আইনের ৮৮ ধারায় বলা হয়েছিল জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে যেসকল আইএএস, আইপিএস ও আইএফএস অফিসার নিয়োগ করা হয়েছিল, তাঁরা নতুনভাবে গঠিত জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেও নির্দিষ্ট পদেই বহাল থাকবেন। নতুন বিলে সেই আইনের সংশোধনই করা হয়েছে।

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সুবিধার জন্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সঙ্গেই জম্মু-কাশ্মীরের সিভিল সার্ভিস অফিসারদের নিয়োগ করার কথা বলা হয় এই অধ্যাদেশে। গতমাসেই রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ জানিয়েছিলেন যে অধ্যাদেশের পরিবর্তে নতুন বিল পেশ করা হবে। আজ সেই অধ্যাদেশেই পরিবর্তন এনে নতুন বিলটি পেশ করা হয়, যা লোকসভায় ধ্বনি ভোটে পাশও হয়ে যায়।

আরও পডুন: ঘন কুয়াশায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ২০ ফুট গভীর খাদে পড়ল বাস, আহত কমপক্ষে ২৫

ধ্বনিভোটে বিল পাশ:

আজ লোকসভায় বিলটি পেশ করে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সরকার জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ অবলুপ্ত করার পর প্রায় ১৭০টিরও বেশি কেন্দ্রীয় আইন জম্মু-কাশ্মীরে লাগু করা হয়েছে। উপত্যকাবাসীর উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের কাজও করছেন।” একইসঙ্গে তিনি লোকসভার সদস্যদের বিলটি পাশ করার জন্যও অনুরোধ জানান। নয়া বিলের সপক্ষে তিনি বলেন, “জম্মু-কাশ্মীরে সিভিল সার্ভিস পাশ করা অফিসারদের অভাব প্রচুর। অফিসারদের অভাবেই বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পও আটকে ছিল। সেই অভাব পূরণেই অরুণাচল প্রদেশ, গোয়া ও মিজোরামের মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ক্যাডারদেরওও যাতে জম্মু-কাশ্মীরে নিয়োগ করা যেতে পারে, সেই উদ্দেশেই এই নতুন বিল পেশ করা হল।”

তবে এই বিলের বিরোধিতা করে কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী প্রশ্ন করেন, “নতুন করে বিল পেশ করার প্রয়োজন কী? যদি সিভিল সার্ভিস আধিকারিকদের অভাব থাকে, তবে স্থানীয় বাসিন্দা, যারা সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসেছেন, তাঁদেরই নিয়োগ করা উচিত। এতে জম্মু-কাশ্মীর অন্য রাজ্যের উপর নির্ভর না করে আত্মনির্ভর হয়ে উঠবে।” তিনি আরও জানান, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বারবার বিল বা অধ্যাদেশে পরিবর্তন করা উচিত নয়। কেবলমাত্র জরুরি কোনও পরিস্থিতিতেই নতুন কোনও অধ্যাদেশ আনা উচিত। তিনি কেন্দ্রের কাছে অনুরোধ জানান, জম্মু-কাশ্মীরকে যেন একটি রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয় এবং সেখানে অফিসার নিয়োগের জন্য আলাদাভাবে একটি ক্যাডার তৈরি করা উচিত।

এর জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একদমই স্পষ্ট। সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ অবলুপ্ত করে জম্মু-কাশ্মীরবাসীদের কর্মসংস্থান ও নতুন ভূস্বর্গ দেওয়ার যে শপথ নেওয়া হয়েছিল, তা পূরণ করার চেষ্টাই চালাচ্ছে সরকার।”

তবে কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী এই বিষয়ে বলেন, “জম্মু-কাশ্মীর অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি রাজ্য এবং সেখানের ক্যাডাররাও স্থানীয় হওয়াই উচিত, যারা সেই অঞ্চল সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে অবগত।” তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু-কাশ্মীরকে একটি বড়সড় কারাগারে পরিণত করেছে। টেলিকমিউনিকেশন পরিষেবা বন্ধ করে পরিস্থিতি কিছুতেই স্বাভাবিক হতে দিচ্ছে না সরকার। সেখানের বাসিন্দারা এখনও ভয়েই দিন কাটাচ্ছেন।

কাশ্মীরী পণ্ডিতদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সরকার উপত্যকায় কাশ্মীরী পণ্ডিতদের ফিরিয়ে আনার কথা বললেও সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি। দয়া করে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে নতুন কিছু ভাবুন এবং হঠকারি কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না।”

আরও পডুন: প্রজাতন্ত্র দিবসের ঘটনার পুনর্নির্মানে লালকেল্লায় নিয়ে যাওয়া হল দীপ সিধুকে