সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ রুখতে আদর্শ ‘মুম্বই মডেল’, কীভাবে বাণিজ্যনগরীতে বাগ মানল করোনা?

গতবছরই করোনা মোকাবিলায় স্থানীয় 'ওয়ার রুমে'-র উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি ওয়ার্ডে বাসিন্দাদের করোনা পরীক্ষা থেকে শুরু করে হাসপাতালে ভর্তি, সবই পরিচালিত হয়েছে এই ওয়ার রুমের মাধ্যমেই।

সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ রুখতে আদর্শ 'মুম্বই মডেল', কীভাবে বাণিজ্যনগরীতে বাগ মানল করোনা?
করোনা রোগীর সঙ্গে কথা বলছেন চিকিৎসক। ছবি:PTI
Follow Us:
| Updated on: May 19, 2021 | 1:24 PM

মুম্বই: করোনা সংক্রমণে প্রথমবারের মতোই দ্বিতীয়বারও রেহাই পায়নি মহারাষ্ট্র। রাজ্যের রাজধানী তথা বাণিজ্য নগরী মুম্বইও রেহাই পায়নি সংক্রমণের হাত থেকে। কিন্তু সংক্রমণ শীর্ষে ওঠার একমাসের মধ্যেই কীভাবে টেনে নামানো হল সেই গ্রাফ? এর কৃতিত্ব কেবলই কি লকডাউন বা কার্ফুর? গত ২৪ ঘণ্টায় মুম্বইয়ে আক্রান্তের সংখ্যা হাজারও পার করেনি। এর পিছনে অবশ্যই কৃতিত্ব রয়েছে মুম্বইয়ের পুরসভার কমিশনার ইকবাল সিং চহাল(Iqbal Singh Chahal)-র।

গত ১৭ এপ্রিল, সংক্রমণের ঢেউ ইতিমধ্যেই আছড়ে পড়েছে দেশে। রাতের অন্ধকারে সকলেই যখন উদ্বেগ নিয়ে ঘুমোতে যাচ্ছে, সেই সময় মুম্বইয়ের পুরসভার কমিশনার জানতে পারেন, ছয়টি হাসপাতালে অক্সিজেন প্রায় শেষের মুখে, কয়েক ঘণ্টাতেই তা শেষ হয়ে যাবে। ১৬৮ টি প্রাণকে অক্সিজেনের অভাবে হারিয়ে যেতে দেননি তিনি। তড়িঘড়ি সকলকে স্থানান্তরিত করা হয় গতবছরে সংক্রমণের সময় তৈরি করা অস্থায়ী হাসপাতালে। সংক্রমণের পারদ নামতেই যেখানে অস্থায়ী হাসপাতালগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, সেখানেই পুরসভার কমিশনার অধিকাংশ অস্থায়ী হাসপাতালই খোলা রেখেছিলেন ভবিষ্যতে বিপদের আশঙ্কা করে। যেখানে বাকি হাসপাতালগুলি অক্সিজেন সিলিন্ডারের উপর ভরসা করে ছিল, সেখানেই পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতিটি রোগীর বেডে অক্সিজেন পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি।

বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল শহর মুম্বইয়ের মৃত্যুহারও তুলনামূলকভাবে কম। ১ মার্চ, সংক্রমণের শুরু থেকে মুম্বইয়ে এখনও অবধি প্রায় তিন হাজারের কাছাকাছি করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে, সেই তুলনায় দিল্লিতে একই সময়কালে সাড়ে ১০ হাজারেরও বেশি মৃত্যু হয়েছে। মুম্বইয়ের এই করোনা মোকাবিলার প্রশংসা করে সুপ্রিম কোর্টও দিল্লির মতো বাকি শহরগুলিকে “মুম্বই মডেল” অনুসরণ করার উপদেশ দেয়।

কোন পথে সফল মুম্বই মডেল?

মুম্বইয়ে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাফল্যের জন্য প্রথম ঢেউয়ের সময়ই যে ব্যবস্থাপনাগুলি অনুসরণ করা হয়েছিল, তাকেই কৃতিত্ব দিয়েছেন পুরসভার কমিশনার চহাল। একইসঙ্গে অক্সিজেনের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন, এমার্জেন্সি স্টক তৈরি করে রাখা ও অক্সিজেন ট্যাঙ্কারের ট্রাকিং সিস্টেমও সাহায্য করেছে বলে জানান তিনি।

“ভাইরাসকে অনুসরণ”, এই পন্থা অনুসরণ করেই চহালের পুরসভা দলের সদস্যরা ধারাভি বস্তির প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে বাসিন্দাদের উপসর্গ পরীক্ষা, পরবর্তী ধাপে করোনা পরীক্ষা ও প্রায় দেড় লাখ মানুষকে বস্তি থেকে সরিয়ে আইসোলেশনে রেখে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করা হয়েছিল বাকি বাসিন্দাদের। গত বছরই ২৪টি ডিভশনে প্রতিটি ওয়ার্ডে করোনা মোকাবিলায় স্থানীয় ‘ওয়ার রুমে’-র উপর জোর দিয়েছিলেন তিনি। এরফলে কারোর সংক্রমণ ধরা পড়লে বা উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসার খোঁজে শহরজুড়ে ছোটাছুটি নয়, বরং হাতের সামনেই সমস্ত সুযোগ পাওয়া গিয়েছে।

mumbai graph

অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস

সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়েও সেই স্থানীয় ওয়ার রুমেই জোর দেওয়া হয়েছে। করোনা পরীক্ষা থেকে শুরু করে রিপোর্ট এনে দেওয়া, আশেপাশের কোন হাসপাতালে বেড ফাঁকা রয়েছে, তা জানানো ও ভর্তির ব্যবস্থাতেই স্থানীয়দের মধ্যে প্রশাসনের উপর ভরসা তৈরি করে। অক্সিজেনের সঙ্কট মেটাতে আশেপাশের রাজ্য থেকে একদিকে যেমন অক্সিজেন আমদানি করা হয়, তেমনই হাসপাতালগুলিকে অক্সিজেনের পরিমাণের তুলনায় অধিক সংখ্যক বেড রাখার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

অ্যাম্বুলেন্সের ঘাটতি মেটাতে শহরে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয় ৮০০ গাড়িতে চালক ও প্যাসেঞ্জার সিটের মাঝে পার্টিশন দিয়ে অস্থায়ী অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তরিত করার। সেভাবেই দ্রুত ঘাটতি মিটিয়ে রোগীদের নির্দিষ্ট চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছে দেয় পুরসভার কর্মীরা।

টিকাকরণ:

তবে টিকাকরণের জন্য সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ বিগত দুই সপ্তাহ ধরেই টিকাকরণ কেন্দ্রগুলিতে উপচে পড়া ভিড়। সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে না চলায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে যেকোনও সময়ে। তবে এক্ষেত্রেও টিকাকরণকেই বেশি গুরুত্ব দিতে চান মুম্বই পুরসভার কমিশনার। তিনি জানান, যত বেশি সংখ্যক টিকাকরণ হবে, ততই আগামী ঢেউয়ের সম্ভাবনা কমবে।

তৃতীয় ঢেউয়ের প্রস্তুতি:

তবে তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিতে নারাজ ইকবাল সিং চহাল। তাই তিনি ইতিমধ্যেই ৬৫০০ শয্যার জাম্বো হাসপাতাল, বিদেশ থেকে সরাসরি ভ্যাকসিনের আমদানির উপর জোর দিচ্ছেন। তৃতীয় ঢেউয়ে যেহেতু শিশুদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তাই জাম্বো পেডিয়াট্রিক হাসপাতালও তৈরি করছেন তিনি।