Inflation: মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়ছে আরবিআই, তবে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমবে কি?

Inflation: রেপো রেট বাড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে আরবিআই। তবে এখনই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমা সম্ভব নয়।

Inflation: মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়ছে আরবিআই, তবে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমবে কি?
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 16, 2022 | 8:02 PM

সু ত নু  গু রু

গত এপ্রিল মাসে, ভারতের খুচরো বাজারে মুদ্রাস্ফীতি ৭.৭৯ শতাংশে পৌঁছেছে। গত আট বছরের মধ্যে এত দ্রুত গতিতে মূল্যবৃদ্ধি হতে দেখা যায়নি। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার নির্ধারিত মুদ্রাস্ফীতির সহনশীল উর্ধ্বসীমা ছিল ৬ শতাংশ। এই নিয়ে চতুর্থ মাসে সেই গণ্ডি টপকে গেল মূল্যবৃদ্ধি। এর জন্য দায়ী মূলত জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বৃদ্ধি। এই অবস্থায় মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে, চলতি মাসের শুরুতে আরবিআই আচমকা রেপো রেট ৪০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছে। আগামী জুনে আরবিআই-এর মুদ্রানীতির পরবর্তী বৈঠক। সেখানে, আরও একবার রেপো রেট বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই সকল পদক্ষেপ সত্ত্বেও, এখনই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমা সম্ভব নয়।

মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রেপো রেট বৃদ্ধি অবশ্যই এক শক্তিশালী অস্ত্র। রেপো রেট বাড়লে ঋণ গ্রহণের সুদ বাড়বে। কার্যকরী মূলধন জোগার করতে সমস্যায় পড়বে কর্পোরেট সংস্থাগুলি। যানবাহন, টেকসই পণ্য, বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে উপভোক্তাদের অনেক বেশি ইএমআই দিতে হবে। ফলে, অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত সব মহলে চাহিদা কমানোর বার্তা যায়। আর চাহিদা কমা মানে, মুদ্রাস্ফীতির চাপও কমবে। তবে ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এই যুক্তি খাটছে না। কারণ, ভারতের ক্ষেত্রে উচ্চ চাহিদা সমস্যা নয়।

২০২০ সালের মার্চে ভারতে প্রথম লকডাউন ঘোষণার সময় থেকেই ভারতের সর্বস্তরের নাগরিকদের মধ্যে অর্থনৈতিক সমীক্ষা চালিয়েছিল সি-ভোটার সংস্থা। অধিকাংশ ব্যক্তিই জানিয়েছেন, এই সময়কালে তাদের খরচ অনেক বেড়েছে। কিন্তু, বেতন হয় একই থেকে গিয়েছে, অথবা কমে গিয়েছে। অনেকেই জানিয়েছেন, বড় মাপের খরচ করার বিষয়ে এখনও তারা ভীত। কারণ, কর্মক্ষেত্রে রয়েছে তীব্র অনিশ্চয়তা। ফলে যানবাহন হোক কি ভোগ্য পণ্য কি রিয়েল এস্টেট – সব ক্ষেত্রেই বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। আরবিআই-এর পক্ষ থেকে করা দ্বিমাসিক সমীক্ষাতেও এই বিষয়টি ধরা পড়েছে। অর্থাৎ, ইতিমধ্যেই ভারতে চাহিদা দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এই অবস্থায় রেপো রেট বাড়িয়ে কী লাভ হবে, এই প্রশ্ন উঠেই যাচ্ছে। রেপো রেট বাড়লে মুদ্রাস্ফীতি তো কমবেই না, বরং ইএমআই বাড়া মানে, নিম্ন এবং মধ্যবিত্তদের ঘাড়ে মূল্যবৃদ্ধির চাপ আরও বৃদ্ধি পাওয়া।

নজর দেওয়া যাক, কনসিউমার প্রাইস ইনডেক্স বা উপভোক্তা মূল্য সূচকের দিকে। এই সূচকের ৪৬ শতাংশ নির্ভরশীল খাদ্য ও পানীয়ের উপর। এরপর রয়েছে আবাসন ক্ষেত্র, নির্ভরশীল ১০ শতাংশ। জ্বালানী এবং আলোর উপর নির্ভরশীল ৬.৮৪ শতাংশ এবং পরিবহন ও যোগাযোগের উপর নির্ভর করে ৮.৫৯ শতাংশ। একত্রে, এই ক্ষেত্রগুলির উপর, উপভোক্তা মূল্য সূচকের প্রায় ৭২ শতাংশ নির্ভর করে। বর্তমান বৈশ্বিক এবং দেশীয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এই ক্ষেত্রগুলির কোনোটিরই মূল্যবৃদ্ধি থামার কোনও সম্ভাবনা নেই। দাম কমার তো প্রশ্নই উঠছে না।

দূর্গাপুজোর সময়ে খুচরো বাজারে খরিফ শস্য না ওঠা পর্যন্ত খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সস্তির নেই। বস্তুত ভারতের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হতেই পারত। তবে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকেই, প্রায় ৮০ কোটি ভারতবাসীর দরজায় দরজায় বিনামূল্যে ৫ কেজি করে খাদ্যশস্য ও ডাল পৌঁছে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারগুলি। এই প্রকল্প কার্যকর না হলে, খাদ্যের দাবিতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু হওয়ার বড় সম্ভাবনা ছিল।

যুদ্ধের আবহে বর্তমানে বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম অত্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে, জ্বালানি, আলো, পরিবহণ ক্ষেত্রে খরচ বাড়বেই, কমার কোনও অবকশ নেই। টেলিকম সংস্থাগুলিও ইতিমধ্যেই মোবাইল ডেটার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে এক দেড় বছরের ওয়ার্ক ফ্রম হোম পর্ব কাটিয়ে বহু মানুষ আবার ফিরেছেন অফিসে। ফলে বাড়ি বাড়াও তাল মিলিয়ে বাড়ছে।

উপভোক্তা মূল্য সূচকের বাকি ২৮ শতাংশের মধ্যে ১৫ শতাংশ নির্ভর করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং গৃহ পরিষেবার উপর। রেপো রেট ১০ শতাংশ বাড়ালেও এই ক্ষেত্রগুলিতে দাম কমার কোনও জায়গা নেই। কাজেই আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে যতই যুদ্ধ করুন না কেন, অদূর ভবিষ্যতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কোনও সম্ভাবনা নেই।