কার মস্তিষ্কপ্রসূত ‘INDIA’-র নাম? মমতারই বা কতখানি ভূমিকা? হঠাৎ কেন ‘বেলাইন’ ইয়েচুরি-নীতীশ?

INDIA alliance: সদ্য সমাপ্ত পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর, বাংলার কংগ্রেস নেতারা, বাম দলগুলি, এমনকি, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেও যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সমালোচনা করেছেন, সেই প্রেক্ষিতে কং-তৃণমূলের এই যুগলবন্দি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়েছে। বিশেষ করে, জোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেভাবে গুরুত্ব দিয়েছে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব, তা বামদল এবং বাংলার কংগ্রেস নেতাদের পক্ষে যথেষ্টই অস্বস্তির বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

কার মস্তিষ্কপ্রসূত 'INDIA'-র নাম? মমতারই বা কতখানি ভূমিকা? হঠাৎ কেন 'বেলাইন' ইয়েচুরি-নীতীশ?
বেঙ্গালুরুতে বিরোধীদের জোটের মঞ্চে কংগ্রেস-মমতা যুগলবন্দিImage Credit source: PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 19, 2023 | 6:09 PM

নয়া দিল্লি: মঙ্গলবার (১৮ জুলাই), বেঙ্গালুরুতে বিজেপি বিরোধী দলগুলির জোটের নামকরণ করা হয়েছে – ‘ইন্ডিয়া’,অর্থাৎ, ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’। তবে, এই নামকরণ নিয়েও বিরোধী জোটে ফাটল রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, বামদলগুলি-সহ, জোটের অধিকাংশ দলকে অন্ধকারে রেখেই জোটের নাম স্থির করেছে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস। সদ্য সমাপ্ত পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর, বাংলার কংগ্রেস নেতারা, বাম দলগুলি, এমনকি, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেও যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সমালোচনা করেছেন, সেই প্রেক্ষিতে কং-তৃণমূলের এই যুগলবন্দি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়েছে। বিশেষ করে, জোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেভাবে গুরুত্ব দিয়েছে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব, তা বামদল এবং বাংলার কংগ্রেস নেতাদের পক্ষে যথেষ্টই অস্বস্তির বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পোর্টালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ দেওয়ার পরিকল্পনাটি রাহুল গান্ধীর মস্তিষ্কপ্রসূত। তবে, তিনি নিজে নামটি প্রস্তাব করেননি। বরং, নাম প্রস্তাবের আগে, এই বিষয়ে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদন চেয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কেসি বেনুগোপালকে। মমতা সহজেই এই নামে সম্মতি জানিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। শুধু রাহুল গান্ধী ‘এন’ অক্ষরের অর্থ করেছিলেন ‘নিউ’, মমতা পরামর্শ দেন সেটি ন্যাশনাল করার। আলোচনা হয় ‘ডি’ অক্ষরটি নিয়েও। সেটির অর্থ ‘ডেমোক্রেটিক’ করা হবে না ডেভেলপমেন্ট করা হবে, তাই নিয়ে আলোচনা হয়। সূত্রের খবর, সোমবার রাতে নৈশভোজের পরই এই বিষয়ে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়। মধ্যরাত পেরিয়ে সেই আলোচনা চলেছিল। সেখানেই ঠিক হয়, মঙ্গলবার বৈঠকে মমতাই নামটি প্রস্তাব করবেন।

একেবারে সেই চিত্রনাট্য মেনেই, মঙ্গলবার কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের উদ্বোধনী ভাষণের পরই, তৃণমূল সুপ্রিমো ইন্ডিয়া নামটি প্রস্তাব করেন। সূত্রের খবর, আচমকা জোটের নাম প্রস্তাব করায় বাকি সব দলের নেতা-নেত্রীরাই কিছুটা হলেও চমকে গিয়েছিলেন। কোনও রাজনৈতিক জোটের নাম কী করে ইন্ডিয়া হতে পারে, এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডি(ইউ) প্রধান নীতীশ কুমার। বৈঠকের মাঝেই নিজেদের মধ্যে পৃথক আলোচনা শুরু করেন তিন বাম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা এবং জি দেবরাজন। এরপর ইয়েচুরি বলেন, জোটের নাম হতে পারে ভি অর্থাৎ, ‘ভিকট্রি ফর ইন্ডিয়া’ অথবা ‘উই ফর ইন্ডিয়া’। অনেক নেতাই বলেন, এগুলি নামের বদলে স্লোগান বলে মনে হচ্ছে।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরীবাল বলেন, জোটের নাম দেওয়ার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আসন ভাগাভাগির নিয়ে আলোচনা। তাঁকে সমর্থন করেন ইয়েচুরি। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক জানান, আসন ভাগাভাগিই প্রধান ইস্যু। কেরল এবং পশ্চিমবঙ্গের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন এই দুই রাজ্যে কংগ্রেস এবং বামেরা দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী। এই ধরনের রাজ্যগুলিতে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যার হতে পারে। ইয়েচুরি প্রশ্ন তোলেন, কংগ্রেস কতটা নমনীয় হবে? বামেদের প্রস্তাবিত নামের পাশাপাশি বিরোধীদের দ্বিতীয় বৈঠকে জোটের আরও কিছু নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে, পিপলস অ্যালায়েন্স ফর ইন্ডিয়া বা প্রোগ্রেসিভ পিপলস অ্যালায়েন্সের মতো নামগুলি বিশেষ গুরুত্ব পায়নি। পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি প্রস্তাব দিয়েছিলেন ‘ভারত জোড়ো জোট’ নাম রাখার। উদ্ধব ঠাকরে প্রস্তাব দেন জোটের ইংরাজি নাম হলে, তর সঙ্গে একটি হিন্দি ট্যাগলাইন জুড়ে দেওয়ার।

মুখে হাসি, কিন্তু…

তবে, আসন ভাগাভাগির সমাধান সূত্র বের করার থেকেও, জোটের নাম দিতেই বেশি আগ্রহী ছিল তৃণমূল এবং কংগ্রেস। শুধু তাই নয়, ইন্ডিয়া নামটিই কেন উপযুক্ত, তা ব্যাখ্যাও করেন রাহুল গান্ধী। যুক্তি দেন, এর ফলে বিরোধীরা সহজেই ইন্ডিয়া বনাম এনডিএ রাজনৈতিক আখ্যান তৈরি করতে পারবে। জনগণকে বোঝাতে পারবে যে নরেন্দ্র মোদী ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে। অবিজেপিরা সকলেই ইন্ডিয়া। খাড়্গে এবং রাহুল গান্ধী আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর পদের আকাঙ্ক্ষা নেই কংগ্রেসের। অন্যান্য দলগুলিকে যতটা বেশি সম্ভব জায়গা ছাড়তে প্রস্তুত কংগ্রেস। সনিয়া গান্ধী অবশ্য কিছু বলেননি। তিনি জানিয়ে দেন, সভায় তাঁর ভূমিকা শুধুই শ্রোতার। তিনি এসেছেন সকলকে সমর্থন করতে। বেঙ্গালুরুতে মমতা-কংগ্রেসের যে মাখামাখি দেখা গিয়েছে, তাতে বামেরা এবং কংগ্রেসের বঙ্গ নেতৃত্ব যে মোটেই সন্তুষ্ট হবে না,তা বলাই বাহুল্য।

বস্তুত, শুধু রাহুল গান্ধী একা নন, বিরোধীদের দ্বিতীয় বৈঠকে লালু প্রসাদ যাদবও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন প্রকাশ করেছেন। এর আগে সীতারম ইয়েচুরি মন্তব্য করেছিলেন, বাম-কংগ্রেস-সহ সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ দল বিজেপির পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও লড়াই করবে। সূত্রের খবর, এই ধরনের মন্তব্য করার জন্য ইয়েচুরির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন লালু প্রসাদ। ইয়েচুরিকে এই ধরনের মন্তব্য না করার পরামর্শ দিয়েছেন আরজেডি প্রধান। বঙ্গ কংগ্রেসের নেতারাও যাতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য না করেন, কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বকে তাদের লাগাম টেনে ধরতে বলেছেন। তা নিশ্চিত করতে বলেছেন লালু। জনসভা থেকে কংগ্রেসকে আক্রমণ করার জন্য, আপ নেতা তথা পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মানকেও তিরস্কার করেছেন লালু। জোটে মমতাকে এই গুরুত্ব প্রদানের পর, বাম দল এবং বঙ্গ কংগ্রেসের নেতারা কী পদক্ষেপ করেন, এখন সেটাই দেখার।